রোববারের আলাপন-শীতকালীন অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন কাও থিং ইউয়ের গল্প
2022-04-03 06:36:36


আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আপনাদের বন্ধু এনাম ও আকাশ। 


গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের ৫০০ মিটার স্পিড স্ক্যাটিং ফাইনালে চীনের খেলোয়াড় কাও থিং ইউ শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের রেকর্ড ভেঙ্গে স্বর্ণপদক অর্জন করেছেন। আমরা আজ আপনাদের তার গল্প শোনাবো, কেমন?


১৯৯৭ সালে কাও থিং ইউ একটি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছয় বছর বয়স থেকে তিনি রোলার-স্ক্যাটিং খেলতে পছন্দ করছেন। এরপর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি নিজ সিদ্ধান্তে স্কুলের স্ক্যাটিং কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। একদিন, তার মা-বাবা জানতে পারেন, তিনি স্কুল শেষে বাসায় যাননি। ফলে বাবা-মা স্কুলে যান তাকে খুঁজার জন্য। তারা স্কুলে গিয়ে দেখেন তিনি সেখানে স্কেটিং করছেন। বাসায় ফিরে যাওয়ার পর বাবামা তাঁকে শাসন করেন। তারা তাকে স্ক্যাটিং শিখার অনুমতি দেননি। 


এর জবাবে কাও থিং ইউ বলেন, “আমি স্ক্যাটিং পছন্দ করি। আহত হওয়া নিয়ে আমার ভয় নিই। যদি আপনারা স্ক্যাটিং শিখতে না দেন, তাহলে আমি স্কুলে আর যাব না”। তাঁর বয়স তখন মাত্র আট বছর, তবে তাঁর এমন দৃঢ় মনোভাব দেখে, বাবা-মা তাঁকে স্ক্যাটিং শিখার অনুমতি দেন। 

তখন থেকে কাও থিং ইউ স্ক্যাটিং শিখা অব্যাহত রাখেন। প্রতিদিন বিকাল ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত তিনি তিন ঘন্টারও বেশি প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। এভাবে তিনি একটানা চার বছর স্ক্যাটিং শিখতে থাকেন। 


২০০৮ সালে ১১ বছর বয়সী কাও থিং ইউর স্ক্যাটিংয়ে অনেক ভাল করেন। এজন্য একজন কোচ তাকে বাছাই করেন। তিনি হেই লং চিয়াং প্রদেশের মু তান চিয়াং শহরের শীতকালীন খেলাধুলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ পেয়ে যান। 


তখন থেকে তিনি আরো কঠোরভাবে প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। তিনি বলেন, “তখন প্রতিদিনই আমি ব্যাথা ও খিটখিটে বোধ করতাম। আমি পা উঠাতে পারতাম না। এমনকি, কোন কোন দিন সন্ধ্যায় আমি ভালভাবে ঘুমাতেও পারতাম না।”

তিনি মাঝে মাঝে আহত হতেন। তাঁর মা বলেন, “কোচ বলেছেন, ছেলেটি অনেক কষ্ট করে প্রশিক্ষণে মনযোগী থাকে। তবে সে টেলিফোনে কখনো আমার কাছে অভিযোগ করেনি।”


প্রচেষ্টা তাকে অনেক সফলতা এনে দিয়েছে। তেরো বছর বয়সে তথা ২০১১ সালে তিনি হেই লং চিয়াং প্রদেশের স্পিড স্ক্যাটিং টিমে স্থান লাভ করেন। 


এরপর পাঁচ বছর কঠোর প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি জাতীয় দলে প্রবেশ করেন। ঊনিশ বছর বয়সে তিনি জাতীয় শীতকালীন গেমসের স্পিড স্ক্যাটিং যুবকদের ৫০০ মিটার ফাইনালে স্বর্ণপদক লাভ করেন।  


এবারের বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসে তিনি চীনের ক্রীড়া প্রতিনিধি দলের পদকবাহকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি স্পিড স্ক্যাটিং পুরুষদের ৫০০ মিটার প্রতিযোগিতায় নতুন অলিম্পিক রেকর্ড সৃষ্টি করেন এবং চীনের হয়ে এ প্রতিযোগিতায় প্রথম শীতকালীন অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণপদক ছিনিয়ে আনেন। 


আকাশ: এনাম ভাই, তাঁর এই গল্প আপনার কেমন লেগেছে? 


এনাম:...


বন্ধুরা, অনুষ্ঠান শেষে, আমি আপনাদের একটি গান উপহার দিতে চাই। যারা অধ্যবসায় করছেন, নিজেকে জয় করার চেষ্টা করছেন এবং কখনোই হাল ছাড়েন নি, এ গান তাদের জন্য। গানটির নাম হচ্ছে: ‘জাম্প’ 


হাতে ভর করে উল্টো হয়ে বিশ্বকে দেখি, যাতে চোখের পানি না ঝরে

পৃথিবী আকাশ হয়ে যায়,

পৃথিবী উল্টো হয়ে যায়,

কিন্তু আসলে বিশ্ব পরিবর্তন হয়নি।

আমি আমার স্বপ্নের পিছনে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি

দিগন্ত বরাবর

সব প্রচেষ্টায় সামনে এগিয়ে যাও

এই পৃথিবীতে কোন জিনিস থাকতে পারে?

প্রচেষ্টার ঘামের পানি এবং পরিশ্রম 

এখন কি এটার কোনো পরিবর্তন আছে?

আমি আমার স্বপ্নের পিছনে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি,

দিগন্ত বরাবর

সব প্রচেষ্টায় অব্যাহতভাবে সামনে এগিয়ে যাও 

জাম্প

সুন্দর ঘূর্ণায়মান বিশ্ব

জোর দিয়ে জাম্প

যাই ঘটুক না কেন

জাম্প

উষ্ণ রক্ত ব্যবহার করে নীল আকাশে উড়তে

জাম্প

তারপর আমরা পৃথিবীকে আকাশে পরিবর্তন করতে পারবো।