গত বৃহস্পতিবার চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সভাপতিত্বে চীনের আনহুই প্রদেশের থুনসি শহরে তৃতীয় আফগান প্রতিবেশী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে ওয়াং ই সব পক্ষকে আত্মনির্ভরশীল, সমৃদ্ধ, অগ্রগতিমূলক ও শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথের অগ্রযাত্রায় আফগানিস্তানকে সহায়তা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
সম্মেলনে ‘তৃতীয় আফগান প্রতিবেশী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের যৌথ বিবৃতি’ এবং ‘আফগান অর্থনীতির পুনর্গঠন ও বাস্তব সহযোগিতাকে আফগান প্রতিবেশী দেশগুলোর সমর্থনে থুনসি প্রস্তাব’ প্রকাশিত হয়েছে। সম্মেলনে আফগান-বিষয়ক বিশেষ দূতের নিয়মিত বৈঠকের ব্যবস্থা চালু করা এবং রাজনীতি ও কূটনীতি, অর্থনীতি ও মানবিক এবং নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা-সংক্রান্ত তিনটি কর্মগ্রুপ গঠনের কথা ঘোষণা করা হয়।
ভাষণে ওয়াং ই বলেন, বিভিন্ন পক্ষের অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটির চেতনা লালন করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সমন্বয় ও সহযোগিতা ব্যবস্থার বিশেষ ভূমিকা পালন করা, আফগানিস্তানে দ্রুত স্থিতিশীল ও উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়া এবং এই অঞ্চলের স্থায়ী নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি বাস্তবায়ন করা উচিত্। নিজ উদ্যোগে দেশের ভাগ্য নির্ধারণে আফগান জনগণকে সমর্থন করা উচিত্। বর্তমানে আফগানিস্তানকে মানবিক সাহায্য দেওয়া হলো সবচেয়ে জরুরি কাজ। আফগানিস্তানের স্বতন্ত্র উন্নয়নের দক্ষতা বাড়ানো এবং মূল থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা উচিত্ বলে ওয়াং ই উল্লেখ করেন।
সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরালো করে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বাস্তবায়ন করা এবং অর্থনীতি পুনর্গঠনে সেদেশকে সমর্থন করার বিষয়ে একমত হয়েছে বিভিন্ন পক্ষ।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন পক্ষ পশ্চিমা জগতের প্রতি আফগানিস্তান পুনর্গঠনে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আফগান জনগণের সম্পদ ফেরত দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে। আফগানিস্তানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী সব ষড়যন্ত্রের বিরোধিতা করেছে তারা।
আসলে আফগানিস্তানের বিষয়ে চীন বরাবরই একই মনোভব পোষণ করে। আর তা হলো আগানদের শাসনে আফগানিস্তান এবং আফগানদের অধিকারে আফগানিস্তান নীতি মেনে চলা। তবে পশ্চিমা দেশগুলো চীনের মনোভাব ও তত্পরতাকে উপেক্ষা করে এবং আফগানিস্তান নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে। এবিসি নিউজ গত বুধবার জানায়, তালিবান শাসনাধীন আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন এবং নিজের অবস্থান উন্নত করার আশা করে চীন। চীনের এ উচ্চাকাঙ্ক্ষা বুধবার বহুপক্ষীয় এক সম্মেলনে প্রতিফলিত হয়েছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর থেকে চীন সেদেশে শক্তির শূন্যতা পূরণ এবং নিজের অবস্থান মজবুত করতে চায় বলে অনুমান করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে শাংহাই আন্তর্জাতিক গবেষণালয়ের গবেষক লিউ চোং ই বলেন, পশ্চিমা গণমাধ্যম ভৌগোলিক রাজনীতির চেতনা থেকে এমন মন্তব্য করেছে। চীনা প্রবাদ মতে, এটি দুর্বৃত্ত ব্যক্তির মন থেকে ভদ্রলোকের তত্পরতা পর্যালোচনা করা হয়েছে। তারা বোঝে না যে, বড় দেশ হিসেবে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় চীনের দায়িত্বশীল মনোভাব রয়েছে।
হংকংয়ের নান হুয়া চাও পাও পত্রিকা জানায়, আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে আফগানিস্তান বিষয়ে চীনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ওপর দৃষ্টি রাখে সারা বিশ্ব। চীন আফগানিস্তানের শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে। চীন ও আফগানিস্তানের মধ্যে রয়েছে ৭৬ কিলোমিটার পর্বতসীমারেখা। আফগানিস্তানের সন্ত্রাসী ও মাদক সমস্যা চীনের পশ্চিমাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়ান ওয়েন পিং সম্প্রতি বলেন, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের আয়োজনের মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবেশীদেশগুলোর মতৈক্য জোরদার করতে চায় বেইজিং। যাতে আন্তর্জাতিক সমাজে আফগানিস্তান বিষয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রস্তাব ও প্রচেষ্টা দেখানো যায়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে আফগানিস্তানের পুনর্বাসনে প্রধান দায়িত্ব পালন করার তাগিদ জানিয়েছেন।