দেহঘড়ি পর্ব-৬৩
2022-04-01 19:39:08

 

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে স্বাস্থ্যখাতের একটি প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য বুলেটিন, সাক্ষাৎকার-ভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচলিত ভুল ধারণা নিয়ে আলোচনা ‘ভুলের ভুবনে বাস’।

#প্রতিবেদন

বাংলাদেশে প্রতি ৫ জনে ১ জন ভুগছেন উচ্চ রক্তচাপে

বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি পাঁচ জনের একজন ভুগছেন উচ্চ রক্তচাপে। এ রোগে আক্রান্ত অর্ধেক নারী এবং দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষ জানেনই না যে, তাদের এ রোগ রয়েছে। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা সচেতনতা ও চিকিৎসাসেবা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

সম্প্রতি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত ‘হাইপারটেনশন অ্যান্ড হার্ট হেলথ’ শীর্ষক কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়।

কর্মশালায় আলোচকরা বলেন, উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগ ও হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। এটা প্রতিরোধে তৈরি করতে হবে গণসচেতনতা; সহজলভ্য করতে হবে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা।

রক্তচাপ যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেড়ে যায় তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলে। অর্থাৎ রক্তচাপের মাত্রা দুটি ভিন্ন দিনে ১৪০/৯০ মি.মি. পারদচাপ বা তার বেশি হলে বুঝতে হবে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। তবে বয়সভেদে রক্তচাপ কম বা বেশি হতে পারে।

অধিকাংশ সময় উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ ও উপসর্গ থাকে না। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সকালের দিকে মাথাব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, হৃৎপিণ্ডের অনিয়মিত ছন্দ এবং দৃষ্টিতে পরিবর্তন সংক্রান্ত উপসর্গ দেখা দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করা না হলে বুকে ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেল ও হার্ট বিট অনিয়মিত হওয়ার পাশাপাশি স্ট্রোক হতে পারে। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপের কারণে বড় ক্ষতি হতে পারে কিডনির।

রোগটি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যবিদরা। তারা বলছেন, সব হাসপাতাল এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা এবং ওষুধ প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মত জীবন-যাপন যেমন: অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করা, ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা, তামাক ও মদ্যপান পরিহার করা, অতিরিক্ত ওজন কমানো এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। - অভি/রহমান

 

#বুলেটিন

রমজানেও চলবে টিকাদান কার্যক্রম

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চলমান টিকাদান কর্মসূচি রমজান মাসেও চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী জানান, টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার বিশেষ ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে ২৮ মার্চ, যা ৩১ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এটি আরও তিন দিন বাড়ানো হয়েছে।

বিএসএমএমইউ গবেষণা ফান্ড ২০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হবে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ফান্ড ২০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। সম্প্রতি এক সেমিনারে এ কথা জানান তিনি।

শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন গবেষণাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের রোগের উন্নত চিকিৎসাসেবা এবং রোগ নির্ণয়ে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিশ্চিত করা হবে।

ডায়রিয়া প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ

ডায়রিয়ার থেকে রক্ষা পেতে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম সম্প্রতি এক ব্রিফিংয়ে বলেন, প্রতিদিনকার কাজকর্মে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করলে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এবং সবসময় সুপেয় পানি পান করলে ডায়রিয়া রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণের সরবরাহ রয়েছে। অল্প ডায়রিয়া থাকতেই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি। - অভি/রহমান

 

## আপনার ডাক্তার

এ পর্বে আজ আমরা আলোচনা করেছি নিউমোনিয়া নিয়ে। বাংলাদেশে নিউমোনিয়া শিশুমৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ। পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে যারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়, তাদের ১৩ শতাংশই মৃত্যবরণ করে এ রোগের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির এক বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দশকজুড়ে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১ লাখের বেশি শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। গবেষকরা বলছেন, নিউমোনিয়া প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সেবা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় জোরদার করার মাধ্যমে বছরে আনুমানিক ৪৮ হাজার শিশুর মৃত্যু এড়ানো যেতে পারে। তাদের মতে, নিউমোনিয়া মোকাবিলায় প্রচেষ্টা জোরদার করা হলে তা এর বাইরে একটি ‘রিপল ইফেক্ট’ তৈরি করতে পারে, যা একই সঙ্গে অন্যান্য বড় ধরনের শৈশবকালীন রোগে আরও ৯২ হাজার শিশুর মৃত্যু ঠেকাতে পারে।

ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের কারণে নিউমোনিয়া হয় এবং এই রোগে আক্রান্ত হলে শিশুদের ফুসফুস পুঁজ ও তরলের ভরে যায়, যার কারণে তাদের নিঃশ্বাস নিতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টিকার মাধ্যমে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ এবং স্বল্প-মূল্যের অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে সহজেই চিকিৎসা করা যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে এক বছরের কম বয়সী অনেক শিশুকে টিকা দেওয়া হয়নি এবং এই রোগের লক্ষণে ভোগা সত্ত্বেও অর্ধেকের বেশি সংখ্যক শিশু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পায় না। নিউমোনিয়ায় নানা দিক নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ডাক্তার নাজমুস সাকিব। তিনি কর্মরত চীনের বেইজিংয়ে অবস্থিত পিকিং ইউনিভার্সিটি ফার্স্ট হসপিটালে, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুর রহমান অভি।

 

#ভুলের_ভুবনে_বাস

এইচআইভি মানেই আর মৃত্যু পরোয়ানা নয়

এইডস একটি ঘাতকব্যাধি। এইচআইভি ভাইরাস থেকে এ রোগ হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব বলছে, আশির দশকে এইডস মহামারীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৭ কোটি ৯৩ লাখ মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং ৩ কোটি ৬৩ লাখ মানুষ এতে মারা গেছে। ২০২০ সালের শেষ দিকে গোটা বিশ্বে ৩ কোটি ৭৭ লাখ মানুষ এইচআইভি নিয়ে বসবাস করছিল। পনের থেকে ৪৯ বছর বয়সী মানুষেদের মধ্যে আনুমানিক  শূন্য দশমিক ৭ এইচআইভি নিয়ে বসবাস করছে। বিগত কয়েক দশকে এইচআইভি ও এইডস সম্পর্কে কতগুলো ভুল ধারণা কখনও কখনও এমন আচরণ করতে মানুষেকে প্রভাবিত করেছে যার কারণেও অনেক মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। আজ আমরা আলোচনা করবো এম কতগুলো ভুল ধারণা সম্পর্ক। এ প্রতিবেদনের জন্য তথ্য নেওয়া হয়েছে ওয়েবএমডি ডটকমের (www.webmd.com) একটি রিপোর্ট থেকে, যেটি পর্যালোচনা করেছেন হেলথ অ্যান্ড লাইফস্টাইল মেডিসিনের চিফ ফিজিশিয়ান এডিটর চিকিৎসক নেহা পাঠক।

আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে এইচআইভি ছড়ায়?

স্পর্শ, চোখের জল, ঘাম, লালা বা প্রস্রাবের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়ায় না। সেকারণে একই বাতাসে শ্বাস নেওয়া, একই টয়লেট সিট বা দরজার হাতল স্পর্শ করা, একই পানির ফোয়ারা থেকে পান করা, আলিঙ্গন করা, চুম্বন বা করমর্দন করা, একই পাত্রে খাওয়া কিংবা একই জিম ব্যবহার করার মাধ্যমে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। কেবলমাত্র সংক্রামিত ব্যক্তির রক্ত, বীর্য, ভ্যাজাইনাল ফ্লুইড বা বুকের দুধ থেকে এটা ছড়াতে পারে।

মশার মাধ্যমে কি ছড়ায় এইচআইভি?

যেহেতু ভাইরাসটি রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়, অনেকে মনে করেন মশা বা অন্য রক্তচোষা পোকামাকড়ের মাধ্যমে তারা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে বেশ কিছু গবেষণা দেখা গেছে, প্রচুর মশা ও এইচআইভি রোগী আছে এমন জায়গায়ও মশার মাধ্যমে এইচআইভি ছড়ায় না। রক্তচোষা পোকামাকড় যখন কাউকে কামড় দেয়, তখন তারা আগে কামড় দেওয়া ব্যক্তি বা প্রাণীর রক্ত দ্বিতীয় ব্যক্তির রক্তে ঢুকিয়ে দেয় না। তাছাড়াও, এইচআইভি ভাইরাস এসব পোকামাকড়ের ভিতরে খুব অল্প সময় বেঁচে থাকে।

ওষুধ খেলে কি আর ভয়ের কারণ নেই?

অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ড্রাগ বা এআরটি অনেক এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের জীবনকে দীর্ঘায়িত হতে সাহায্য করে। তবে এর মধ্যে অনেক ওষুধই ব্যয়বহুল এবং অনেকগুলোর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এইচআইভি সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না। এছাড়া এইচআইভির ড্রাগ-প্রতিরোধী ধরনগুলো চিকিৎসাকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। একটি আজীবনের রোগ এবং তা থেকে সৃষ্ট সমস্যাগুলো নিয়ে বাঁচার চেয়ে প্রতিরোধ সহজ ও কম ব্যয়সাপেক্ষ৷

এইচআইভি পজিটিভ মানেই কি জীবন শেষ?

প্রারম্ভিক বছরগুলোতে, যখন এই রোগটি মহামারী আকার ধারণ করেছিল, তখন এইডসে মৃত্যুর হার ছিল অনেক বেশি। কিন্তু এখনকার ওষুধগুলো এইচআইভি বা এমনকি এইডস আছে এমন লোকেদের স্বাভাবিক ও উৎপাদনশীল জীবনযাপন দীর্ঘায়িত হতে সাহায্য করে। একজন এইচআইভিতে সংক্রমিত ব্যক্তি যদি দেরি না করে চিকিৎসা শুরু করেন এবং সঠিকভাবে ওষুধ গ্রহণ করেন, তবে এটি সম্ভব যে তার শরীরে এই ভাইরাস কখনই এইডসে বিকশিত হবে না। এবং ভাইরাসে আক্রান্ত না হলে ওই ব্যক্তি যতদিন বেঁচে থাকতেন, ততদিনই বেঁচে থাকতে পারবেন। এইচআইভি ক্যান্সার, হৃদরোগ ও কিডনি রোগের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই সুস্থ জীবনযাপনের মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।

এইচআইভিতে আক্রান্ত হলে কি ডজন ডজন বড়ি খেতে হয়?

কয়েক বছর আগেও এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেক বড়ি খাওয়ার প্রয়োজন হতো। এখন এইচআইভির চিকিৎসা নেওয়া বেশিরভাগ মানুষের দিনে এক থেকে চারটি বড়ি খেতে হয়। কারণ এখন এমন ট্যাবলেট পাওয়া যায়, যেগুলো আসলে কয়েক ধরনের ওষুধের সংমিশ্রণ।

ওরাল সেক্স কি খুব ঝুঁকিপূর্ণ?

এইচআইভি সংক্রমণের ক্ষেত্রে অন্যান্য ধরনের শারীরিক সম্পর্কের তুলনায় ওরাল সেক্সের ঝুঁকি খুব নগণ্য। সঙ্গীর এইচআইভি থাকলে এ ধরনের যৌনক্রিয়ার মাধ্যমে এইচআইভি ছড়ানো তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না।- রহমান

 

 ‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।