২০১৭ সালের পয়লা এপ্রিল সিং আন এলাকা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গেল পাঁচ বছরে এই ‘ভবিষ্যত নগরে’ কী কী পরিবর্তন হয়েছে? চলুন, তা খতিয়ে দেখা যাক।
সহস্রাব্দ পরিকল্পনা মাথায় রেখে পরিবহন ব্যবস্থা প্রথমে নির্মিত হয়। গত পাঁচ বছরের নির্মাণের পর সিং আন এলাকার পরিবহন সব দিকে প্রসারিত হচ্ছে। আন্তঃযোগাযোগ সড়ক নেটওয়ার্ক এ এলাকার বড় আকারের নির্মাণ এবং বেইজিং-থিয়ান চিন-হ্য পেই পরিবহন নেটওয়ার্ককে শক্তিশালি করছে।
হাই ইউয়ু রাস্তা পূর্ব থেকে পশ্চিমে সিংআন এলাকা অতিক্রম করেছে। তার দৈর্ঘ ১৪.৭ কিলোমিটারম আর দ্বিমুখী ছয় লেনের এ রাস্তা পারাপারের গতি ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার। এ রাস্তা বেইজিং-সিং আন সড়ক পথের সঙ্গে যুক্ত এবং সড়ক পথে এ রাস্তা দিয়ে সিং আন এলাকায় প্রবেশ করা যায়।
হাই ইউয়ু রাস্তার প্রধান প্রকৌশলী মা সিয়াও ইয়াং বলেন, মার্চ মাসের শেষ দিকে এ রাস্তার নির্মাণ কাজ শেষ দিকে প্রবেশ করে। আর কর্মীরা এখন শেষের কাজ করতে ব্যস্ত রয়েছে। তিনি বলেন, এখন মোটর-চালিত লেন, অ-মোটর-চালিত লেন, ফুটপাথসহ ৯০ শতাংশের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্প সম্পন্ন হলে বেইজিং-সিং আন সড়ক পথ ও সিং আন এলাকা একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।
চীনা সিং আন গ্রুপের অবকাঠামো নির্মাণ কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক চাং ইয়াও তুং বলেন, সিং আন এলাকার বাইরে আমরা ৯০ কিলোমিটার রোড নির্মাণ করেছি, আর সিং আন এলাকার ভেতর লুপ রোড ৫০ কিলোমিটার। বাইরে ও ভেতরের লুপ রোড যুক্ত হলে সিং আন এলাকায় দ্রুত, সুবিধাজনক, কার্যকর ও নিরাপদ একটি পরিবহন নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠবে।
২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর সিং আন আন্তঃনগর রেলওয়ে চালু হয়েছে। বেইজিং পশ্চিম রেল স্টেশন থেকে ৫০ মিনিটের মধ্যে সিং আন এলাকায় পৌঁছা যায়। ২০২১ সালের মে মাসে, ধারাবাহিক রাস্তা চালু হয় বলে সিং আন এলাকায় চারটি খাড়া এবং তিনটি প্রশস্ত রাস্তার পরিবহন নেটওয়ার্ক সম্পন্ন হয়। সিং আন এলাকা ও বেইজিং, থিয়ান চিন শহর এবং পাশের অন্য শহর, বেইজিং তাসিং আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে গড়ে তুলেছে। যারা বেইজিং থেকে সিং আন এলাকায় গিয়ে নির্মাণ কাজ করেন তারাও মনে করেন, বেইজিং ও সিং আনের মধ্যে যাতায়াত আরো সুবিধাজনক হয়েছে।
চায়না কনস্ট্রাকশন অষ্টম ব্যুরোর ইয়াং পো বলেন, “সিং আন এখন যেন বেইজিংয়ের কাছে রয়েছে। আমি বুলেট ট্রেন দিয়ে বেইজিং থেকে সিং আন গিয়েছি মাত্র ৫৭ মিনিটে। গাড়ি চালিয়ে মাত্র দেড় ঘন্টার মতো লাগে।
সিং আন রেল স্টেশনের উপপ্রধান লিউ তুং মেই বলেন, সিং আন রেল স্টেশন চালু হবার পর যাত্রীদের অধিকাংশ হলেন নির্মাণ কর্মী, ব্যবসায়ী আর বেইজিং তাসিং বিমান বন্দরে যাওয়া যাত্রী। তিনি বলেন, এখন প্রতিদিন ১৩ বার ট্রেন বেইজিং-সিংআনের মধ্যে আসা যাওয়া করে। ৫০ মিনিটে বেইজিং পশ্চিম রেল স্টেশন, ১৯ মিনিটে তাসিং বিমান বন্দরে পৌঁছাতে পারে। এ পর্যন্ত ৮.৪ লাখ যাত্রী সিংআন স্টেশন ব্যবহার করেছে।
সিংআন এলাকার প্রথম সিটি কমপ্লেক্স –সিং আন বাণিজ্যিক সেবা কেন্দ্র--চালু হয়েছে। একে অফিস ও অ্যাপার্টমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিন হাজার মানুষের সংকুলান হয় এখানে। এখন এটি সিং আন এলাকার ‘বসার ঘর’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। চীনা সিং আন গ্রুপের বাণিজ্যিক সেবা কেন্দ্রের উপ-মহাব্যবস্থাপক ফু সিং বলেন,
আগে সিং আন এলাকায় ছিল না বড় মাপের সম্মেলন এবং প্রদর্শনীর কাঠামো ব্যবস্থা। এ কেন্দ্রের নির্মাণ সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছে। মার্চ মাসের শেষদিকে এ কেন্দ্রে আরো ২ লাখ ২০ হাজার বর্গমিটারের চারটি ভবন চালু হবে। এ চারটি ভবন অফিস আর সার্ভিসিং অ্যাপার্টমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
তা ছাড়া, বাণিজ্যিক কেন্দ্রের কাঠামোতে ফাইভ স্টার হোটেল, বিশেষজ্ঞদের অ্যাপার্টমেন্ট, কিন্ডারগার্টেনের ভিতরের সজ্জা কাজ চলছে। চলতি বছরের জুন মাসে তা শেষ হবে। তখন মোট ২০ হাজার মানুষ এ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে কাজ ও বাস করতে পারবেন। (শিশির/এনাম/রুবি)