আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৬৭
2022-03-31 18:36:10

আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৬৭

কী থাকছে এবারের পর্বে  

১. সাক্ষাৎকার আঙ্গুর নাহার মন্টি

২. সহিংসতার শিকার কন্যাশিশু: প্রতিবেদন

৩. মরুভূমিকে সবুজ করে তুলছেন  গ্রামীণ নারীরা।

৪. গান : শিল্পী: লিন ফাং

৫ ঐতিহ্যকে বহন করছেন নারী নকশাশিল্পী

 

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা?

বাংলাদেশের গণমাধ্যমে দীর্ঘ পঞ্চাশ দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন নারী সাংবাদিকরা।  নারী সাংবাদিকদের রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা। গণমাধ্যমে তাদের পেশাগত সম্ভাবনাও রয়েছে। গণমাধ্যমে কর্মরত নারীসোংবাদিকদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং সমস্যা সমাধানের পথ নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করবো সাংবাদিক ও সংগঠক আঙ্গুর নাহার মন্টির সঙ্গে। তিনি কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিকাবের সাবেক সভাপতি ও উইমেন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের সমন্বয়কারী। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।

                                             

আঙ্গুর নাহার মন্টি প্রথমেই মিডিয়ায় কর্মরত নারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। এখানে রয়েছে বেতন বৈষম্য, চাকরির অনিশ্চয়তা, নেতৃত্বের সংকট ইত্যাদি। এসব সমস্যা সমাধানে তিনি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। উইমেন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তিনি নারী সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আজকাল অনেক তরুণী চটজলদি তারকা খ্যাতি পাওয়ার আকর্ষণে আসে এমন অভিযোগকে তিনি খণ্ডন করেন। মন্টি মনে করেন সাংবাদিকতাকে ভালোবেসেই নতুন প্রজন্মের নারীরা মিডিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। তারা বেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্যও পেয়েছে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করছে।

সাংবাদিক হিসেবে চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন আঙ্গুর নাহার মন্টি।

 

সাক্ষাৎকার

সহিংসতার শিকার কন্যাশিশু

গত এক বছরে বাংলাদেশে সহস্রাধিক কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং হত্যা করা হয়েছে ২৭২ জনকে। এমন তথ্য উঠে এসেছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যান থেকে।  গত ২৭ মার্চ এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সংগঠনটি।  এ ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশে গত এক বছরে এক হাজার ১১৭ কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে ২৭২ শিশুকে, ৫২ জন কন্যাশিশু পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে। শুধু তাই নয়, ১৯৭ জন মেয়ে শিশুকে অপহরণ ও নয় শিশুকে পাচার করা হয়েছে ৷ এছাড়া নির্যাতন, নিপীড়ন, সম্পর্কের টানাপোড়েনসহ বিভিন্ন কারণে ২০২১ সালে ২৪২ শিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের ২০২১ সালের কন্যাশিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সবচেয়ে ভয়াহ চিত্রটি পাওয়া যায় ধর্ষণের পরিসংখ্যানে৷

বাংলাদেশে মেয়ে শিশুদের উপর প্রতিনিয়ত যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার খবর গণমাধ্যমগুলোতে একের পর এক প্রকাশিত হয়ে আসছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সব তথ্য নিয়েই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম৷

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ২ হাজার ৮৬৮ জন কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। গত বছর ২৪২ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে। ১১৬ জন কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ১০৪ জন। আর ধর্ষণের শিকার হওয়া শিশুদের মধ্যে ১৫৫ জনই দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৫ জন কন্যাশিশুকে।

সুপ্রিয় শ্রোতা আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই।

একদল গ্রামীণ নারীর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সবুজ হয়ে উঠছে বিরান এলাকা। বিস্তারিত প্রতিবেদনে।

মরুভূমিকে সবুজ করে তুলছেন  গ্রামীণ নারীরা

দক্ষিণ চীনের দ্বীপপ্রদেশ হাইনান। হাইনানের ছাংচিয়াং লি স্বায়ত্বশাসিত কাউন্টির ছিজি উপসাগর এলাকা। একসময় এখানকার তীরভূমিতে কোন গাছ পালা ছিল না। ধুধু বালির কারণে সামুদ্রিক ঝড় থেকে নিকটবর্তী জনবসতিকে বাঁচানোর মতো কোন প্রতিরক্ষা ছিল না। ১৯৯২ সালে একটি প্রকল্প নেওয়া হয় যাতে বিরান ভূমিতে গাছ লাগানোর জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠিকে অনুপ্রাণিত করা হয়।

এই এলাকার একজন গ্রামীণ নারী থাও ফাংচিয়াও। থাও এবং তার বোনেরা গ্রামীণ নারীদের একটি দলের সঙ্গে এখানে গাছ লাগানোর কাজ শুরু করেন। প্রায় তিন দশক পর এখানে এখন সবুজ গাছের বন গড়ে উঠেছে। এই বনটিকে বলা হয় নারীদের সৃষ্টি। কারণ এই এলাকার পুরুষরা বেশিরভাগই মাছ ধরার কাজে নিযুক্ত। মূলত নারীদের শ্রমেই গড়ে উঠেছে এই সবুজ বেষ্ঠনী।

থা ফাংচিয়াও প্রথম থেকেই এই বন গড়ে তোলায় অক্লান্ত ভূমিকা রেখেছেন। একবার কাজের সময় তার মাথায় বজ্রপাতও হয়েছিল। তবে গুরুতর আহত হননি তিনি।

থাও বলেন,  ‘শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য আমরা গাছ লাগাইনি বরং স্থানীয় মানুষদের জীবনে সুরক্ষা আনার জন্য করেছি।

মরুভূমিতে গাছ লাগানোর জন্য উত্তপ্ত বালির উপর দিয়ে হাঁটতে হতো। অনেকে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কাজটি ছেড়ে দেন। কিন্তু থাও কাজ ছাড়েননি।

থাও বলেন,  ‘আমি যখন অতীতের কঠিন দিনগুলোর কথা ভাবি তখন চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। এই গাছগুলোকে আমি নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসি।

কয়েক দশকের পরিশ্রমের সুফল ফলেছে। ২২৫৩ হেক্টর জায়গায় ৫.৮৮ মিলিয়ন গাছ লাগিয়েছে এই নারীদল।

গান

সুপ্রিয় শ্রোতা চীনের একজন বিখ্যাত তারকা লিন ফাং। তিনি অভিনয় শিল্পী হিসেবেই বেশি প্রতিষ্ঠিত। তবে সংগীতশিল্পী হিসেবেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। ১৯৮৬ সালে লিয়াওনিং প্রদেশের তালিয়ানে তার জন্ম। এখন শুনবো লিন ফাংয়ের কণ্ঠে একটি গান। গানটির শিরোনাম ফিরে আসা অশ্রু।

ঐতিহ্যকে বহন করছেন নারী নকশাশিল্পী

 

চীনের একটি বিশেষ কারুশিল্প  হলো চিং এমব্রয়ডারি। পাঁচ প্রজন্ম ধরে এই নকশা শিল্পের চর্চা ধরে রেখে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন থিয়ান লি নামে এক নারী  শিল্পী। বিস্তারিত প্রতিবেদনে

থিয়ান লি। তিনি বেইজিংয়ের একজন নকশা শিল্পী। চীনের একটি বিশেষ এমব্রয়ডারি শিল্প হলো চিং এমব্রয়ডারি। তিনি এই শিল্পের একজন উত্তরাধিকারী। তিনি একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন।

থাং রাজবংশের সময় থেকে ছিং রাজবংশের সময় পর্যন্ত এই নকশাকে বলা হতো ‘রাজকীয়’ বা ইম্পেরিয়াল এমব্রয়ডারি। শুধুমাত্র সম্রাটের পরিবার এবং অভিজাত বংশীয়রা চিং নকশা করা কাপড় পরতে পারতেন। এরমধ্যেও ড্রাগনের নকশা তোলা পোশাক শুধুমাত্র সম্রাট পরতেন। অন্য কেউ ড্রাগন এমব্রয়ডারি করা পোশাক পরলে ষড়যন্ত্র এবং রাজদ্রোহিতার অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো।

পাঁচ প্রজন্ম ধরে চিং এমব্রয়ডারি শিল্পের ধারা ধরে রেখেছেন থিয়ান লির পরিবার।৩১ বছর বয়সী থিয়ান লি কাজ করছেন দশ বছর ধরে। তার ভাইও এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। থিয়ান লি বলেন

‘আমি বিশ্বাস করি যেখানেই নকশা রয়েছে সেটা যত ছোটই হোক সেটার মধ্যে একটা বিশেষত্ব আছে। মানুষ সেটা শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে আত্মীয় বন্ধুদের উপহার দিতে চায়। তাই ভবিষ্যতে আমি বিভিন্ন ছোটছোট আকর্ষণীয় সামগ্রীতে চিং এমব্রয়ডারি যুক্ত করবো। মানুষ যেন চিং এমব্রয়ডারির অন্তর্নিহিত আনন্দটা অনুভব করতে পারে এবং এই এমব্রয়ডারিকে তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে তোলে।

থিয়ান লি এই নকশা তোলা শিখেছেন তার মায়ের কাছ থেকে। মায়ের কাছে তিনি এখনও শিক্ষার্থী। মূলত মায়ের শিক্ষাকে ধরে রাখার জন্যই তিনি এই পেশা বেছে নিয়েছেন। মা এই নিয়ে কাজ করছেন ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে। থিয়ান লি মনে করেন এই এমব্রয়ডারি পুরোপুরি নারীর কোমল বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে। তাই নারীদের হাতে এটি আরও সুন্দর হয়ে ওঠে।

 এমব্রয়ডারি করা কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী মার্কেটিং করেন তার ভাই থিয়ান ফাং। তারা তাদের প্রতিষ্ঠান গড়েছেন বেইজিংয়ের কাছে  হ্যপেই প্রদেশের পাওতিং শহরে। থিয়ান লির মায়ের নাম লিয়াং শুফিং। তিনি বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে এই এমব্রয়ডারির কাজ করছি। আমি শিখেছিলাম বাবার কাছ থেকে। একশ বছর ধরে পরিবারে এই শিল্প রয়েছে। আমি এখন খুশি যে আমার দুই সন্তানই এর সঙ্গে যুক্ত। মেয়ে এমব্রয়ডারি করে। ছেলে পণ্যগুলো মার্কেটিংয়ের দায়িত্বে আছে। আমার কঠোর পরিশ্রমের সুফল পাচ্ছি।’

এই পরিবারের কারখানায় এখন ৯শ’র বেশি নকশাশিল্পী কাজ করছেন। এই কারখানায় বছরে তিন হাজারের বেশি পণ্য তৈরি হয়। একজন নকশাশিল্পীর একটি পোশাক তৈরিতে ৬ মাসের মতো সময় লাগে।

থিয়ান লি তার মায়ের উত্তরাধিকার বয়ে নিয়ে চলেছেন নতুন প্রজন্মের কাছে।

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা।

আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ ৯ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলার ওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা, উপস্থাপনা : শান্তা মারিয়া

সহিংসতার শিকার কন্যাশিশু: প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

মরুভূমিকে সবুজ করে তুলছেন  গ্রামীণ নারীরা এবং ঐতিহ্যকে বহন করছেন নারী নকশাশিল্পী প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী