স্থানীয় সময় গত ২৯ মার্চ, রাশিয়া-ইউক্রেন পঞ্চম দফা আলোচনা তুরস্কে শেষ হয়েছে। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু জানিয়েছেন, এবারের আলোচনায় এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। রুশ প্রতিনিধি দলের প্রধান ভ্লাদিমির মেদিনস্কি বলেন, দুপক্ষ চুক্তি স্বাক্ষরের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাবে এবং আপস করে শান্তিকে বেগবান করবে। ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের সদস্য বলেছেন, দুই প্রেসিডেন্টের বৈঠকের সব মৌলিক দলিল প্রস্তুত রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট খবর অনুযায়ী, এবারের আলোচনায় বেশ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। যেমন: ইউক্রেন স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষ থাকবে, কোন সামরিক জোটে যোগদান করবে না। ইইউতে ইউক্রেনের যোগদানের বিরোধিতা করবে না রাশিয়া। ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘাত প্রশমিত করার পদক্ষেপ নেবে রাশিয়া। পাশাপাশি, দুদেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পাঁচ দফা আলোচনার পর দুপক্ষের ইতিবাচক মতৈক্যে পৌঁছানো সহজ ব্যাপার নয়। এতে প্রতিফলিত হয়েছে, ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধ শেষ করতে চায় এবং আন্তর্জাতিক সমাজের মধ্যস্থতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এক মাসের সংঘর্ষের পর ইউক্রেন ও রাশিয়া অনেক মূল্য দিয়েছে। আর এখন তাদেরকে রাজনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের পথে ফিরে আসতে হয়েছে।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার আলোচনায় অগ্রগতির খবরের প্রভাবে ইউরোপ ও আমেরিকার শেয়ার বাজারের সূচক বিপুল মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মানে, আন্তর্জাতিক সমাজও পরিস্থিতির উন্নতি দেখতে চায়, তবে ইউক্রেন সংকটের সূচনাকারী যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু উদাসীন, এমনকি এখনো উস্কানি দিয়েই যাচ্ছে। তাতে বুঝা যায়, তারা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় না।
এএফপির খবর অনুযায়ী, গত ২৯ মার্চ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিনকেন আলোচনায় রাশিয়ার আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তার বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, আর তা হলো আলোচনা নিয়ে হতাশা ছড়ানো। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তির সম্ভাবনা দেখে যুক্তরাষ্ট্র আরো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার আলোচনার একই দিন, মার্কিন উপ-অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ক্রেমলিনের যুদ্ধ মেশিন চালানোর ক্ষমতা হ্রাস করতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের ওপর নতুন অবরোধ ব্যবস্থ আরোপ করবে। তা দেশটির সাবেক সহকারী অর্থমন্ত্রীর কথা নিশ্চিত করে যে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি চুক্তি হলেও রাশিয়ার জন্য ঝামেলা তৈরি করবে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র একদিকে রাশিয়ার উপর অবরোধ আরোপ করছে, অন্যদিকে ইউক্রেনের হাতে ছুরি তুলে দিচ্ছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া আলোচনার একই দিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডনের উদ্যোগে বৃটেন, জার্মানি ও ফ্রান্সের নেতাদের মধ্যে একটি ফোনালাপ হয়। তারা ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তা ছাড়া, সিএনএন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনৈক কর্মকর্তার বরাতে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র বিমান ও কামান বিধ্বংসী মিসাইলের উত্পাদন বৃদ্ধি করে ইউক্রেনকে সরবরাহ করবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনায় অগ্রগতি অর্জনের মুহুর্তে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করছে এবং রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরোপ করছে- তা স্পষ্টই আগুনে জ্বালানি যোগ করার শামিল। এ সংঘর্ষের বৃহত্তম সুবিধাভোগী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি বাস্তবায়ন দেখতে চায় না। যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে রাশিয়াকে দমন করতে এবং ইউরোপের ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। আর কে না জানে, যুদ্ধ ইঞ্জিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য করা সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি। তারা আধিপত্য অর্জনে ইউরোপের মিত্রসহ যে কোনো দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে পারে।
ভবিষ্যতে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও ভূখণ্ডের ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করবে ইউক্রেন ও রাশিয়া। এমন সময়ে কোন দায়িত্বশীল দেশের উচিত নয় আলোচনায় বাধা দেয়া, বরং সহায়তা করা জরুরি। ইউক্রেন ও রাশিয়ার শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের নাশকতা এবং বাধা প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার বৃহত্তম হুমকি। ভুল পক্ষে দাড়াঁলে ইতিহাস তাকে শাস্তি দেবে। তবে যে কোনো মূল্যে আমেরিকার যুদ্ধ ইঞ্জিন বন্ধ করতে হবে। (শিশির/এনাম/রুবি)