দুর্বার বেগে এগিয়ে চলছে সবুজ চীন গঠন
2022-03-30 13:07:26

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও দেশের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, পরিবেশ হল জীবিকা। সবুজ  পাহাড় ও নীল আকাশ হল সৌন্দর্য ও সুখ। সিপিসির অষ্টাদ অধিবেশনের পর থেকে সি চিন পিং-কে কেন্দ্র করে পরিচালিত সিপিসির নেতৃত্বে প্রকৃতি ও মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিতকরণে অভূতপূর্ব প্রচেষ্টা চালায় চীন। ফলে দেশের বায়ুর মানের উন্নয়নে ঐতিহাসিক সফলতা অর্জিত হয়।

 

চলতি বছরের বেইজিং শীত্কালীন অলিম্পিক গেমসের সময় নীল আকাশে ক্রীড়াবিদরা বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের ফলাফল প্রত্যক্ষ করেন। গত বছর ২৮৮ দিন বেইজিং শহরের বায়ুর মান ভাল ছিল, তা ২০১৩ সালের তুলনায় ১১২ দিন বেশি।

 

বেইজিংয়ের নাগরিক লি হ্য ইয়াং বলেন, আগে যখন নীল আকাশ দেখতাম, তখন ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করতাম। আর এখন ভাল আবহাওয়া স্বাভাবিক অবস্থায় পরিণত হয়েছে, তাই এখন আর কোনো ছবি পোস্ট করি না। কারণ ব্যাপারটি এখন আমার গা সওয়া হয়ে গেছে।

 

অন্য একজন নাগরিক চেন চাও চাও বলেন, প্রেসিডেন্ট সি বলেছেন, নীল আকাশ হল সুখ। আমরা প্রতিদিন বাইরে হাঁটি এবং ব্যায়াম করি। আর বিশুদ্ধ বাতাস ও নীল আকাশ উপভোগ করি।

তবে ১০ বছর আগেও বেইজিং-সহ চীনের উত্তরাঞ্চলে শরত্ ও শীত্কালে ধুয়াশা দেখা যেতো। ২০১৩ সালেও চীনের চার ভাগের এক ভাগ এলাকায় ধুয়াশা ও দূষণ ছিল। তখনো বায়ু দূষণে ভোগতো চীনা মানুষ।

 

সিপিসির অষ্টাদশ অধিবেশনের পর থেকে সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে বেশ গুরুত্বারোপ করেন। বেইজিংয়ে তিনি বলেছেন, বায়ু দূষণ হল বেইজিংয়ের উন্নয়নের পথে বড় সমস্যা। বায়ু দূষণ ও ধুয়াশা মোকাবিলা জোরদার করতে হবে। হ্য পেই প্রদেশে তিনি বলেন, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিক বাতাসের জন্য অপেক্ষায় থাকলে চলবে না। মৌলিকভাবে জ্বালানি ও শিল্পের কাঠামোকে পরিবর্তন করতে হবে। জাতীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সভায় সি চিন পিং বলেছেন,  গুরুতর দূষণ নির্মূল করে মানুষকে নীল আকাশ , সাদা মেঘ ও তারকাময় আকাশ ফিরিয়ে দিতে হবে।

 

২০১৩ সালে চীনে চালু হয় পাঁচশালা বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। ২০১৮ সালে পিএম ২.৫-এর বিরুদ্ধে তিন বছরের একটি কার্যক্রম শুরু হয়। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে স্থানীয় সরকার পর্যন্ত  সবাই কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। বিপুল সংখ্যক উচ্চ-দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রত্যাহার করে নিয়েছে এবং ইস্পাত শিল্পের জন্য অতি নিম্ন নির্গমনে ভালো ফলাফল অর্জিত হয়েছে। ২০১৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকার মোট ৬, ০০০ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করে বেইজিং-থিয়ান চিন-হ্যপেইসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কয়লার বদলে

 গ্যাস, এবং কয়লার বদলে বিদ্যুতের পরিষ্কার হিটিং পরিকল্পনা চালু করে।

 

হ্য পেই প্রদেশের থাং শান শহরে ১৪টি ইস্পাত কোম্পানির জন্য বিশেষ রেল পথ নির্মিত হয়েছে।  সড়ক পথ পরিবহনের বদলে তারা এখন রেলের মাধ্যমে সরাসরি পণ্যগুলো বন্দরে পৌঁছে দিতে পারছে। চীনে রেলপথে মালপরিবহনের পরিমাণ টানা ৪ বছর ধরে বেড়ে চলছে। তা ২০১৬ সালের ৭.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২১ সালে ৯.১ শতাংশে পৌঁছেছে।

 

চীনের প্রাকৃতিক পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বায়ু  ও পরিবেশ প্রশাসন বিভাগের প্রধান  লিউ পিং চিয়াং বলেন, চীনের জিডিপি ২০১৩ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ৬০ শতাংশ বেড়েছে। আর পিএম ২.৫-এর ঘনত্ব প্রায় ৬০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তা বিশ্বের বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের ইতিহাসে একটি অলৌকিক ঘটনা।

 

আজকাল চীন তার উন্নয়নের পদ্ধতি আরো সবুজ করেছে। ২০২১ সালে চীনের প্রতি ১০ হাজার ইউয়ান জিডিপিতে শক্তির খরচ ২০২০ সালের তুলনায় ২.৭ শতাংশ কমেছে, আর কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ৩.৮ শতাংশ কমেছে। নতুন ধরনের ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ও উন্নয়নে সারা বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে চীন।

 

আজকাল চীনে আরো বেশি সময় ধরে নীল আকাশ দেখা যায়। ২০২১ সালে সারা  চীনে আবহাওয়ার মান ভাল ছিল ২০১৫ সালের তুলনায় ৬.৩ শতাংশ বেশি, তার মানে প্রতি শহরে প্রতি বছর আরো ২৩ দিন বেশি নীল আকাশ দেখতে পারে চীনারা।

 

চতুর্থ পাঁচশালা পরিকল্পনা চালাকালে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় ধুয়াশা মোকাবিলার পর্যায়ে চলে আসে চীন। ক্রমাগত প্রচেষ্টায় নীল আকাশ, পরিষ্কার পানি ও সবুজ ভূমির সুন্দর চীন গড়ে তুলা হচ্ছে। (শিশির/এনাম/রুবি)