প্রযুক্তির সাহায্যে বিদেশি বাজারে ডুকছে চীনের মাঝারি ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান
2022-03-29 14:29:30

করোনা মহামারির কারণে গেল দুবছরে সারা বিশ্বে নানা লজিস্টিকের উত্পাদন ব্যয় অনেক বেড়েছে। কন্টেইনারের অভাব এবং বন্দরের যানজট মাঝে মাঝেই দেখা যায়, তা বিশ্বের লজিস্টিক ব্যবস্থার ওপর গুরুতর আঘাত হানে। এমন প্রেক্ষাপটে, আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্সের দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডিজিটাল আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইনের যুগ দ্রুত আসছে। তাই বিশ্বের শিল্পের সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীল উন্নয়নের বিধি প্রণয়নে অংশগ্রহণ করতে চায় চীন।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্টারনেট প্রযুক্তি এবং লজিস্টিক ও লেনদেন পদ্ধতির উন্নয়নের সাথে সাথে ই-কমার্স দ্রুত বাজার দখল করছে। মাতৃ ও শিশু পণ্য থেকে প্রসাধনী, খাবার, এবং ক্রীড়া পণ্য এমনকি পোষাকও ই-কমার্সে পাওয়া যায়। এটি সহজ ও কার্যকর এবং সরাসরি বিদেশী আমদানিকারকের কাছ থেকে ক্রয় করা যায়।  এছাড়া, আরো নানা সুবিধার কারণে ই-কমার্স জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

 

শুল্ক বিভাগের উপাত্ত অনুযায়ী, ২০২১ সালে চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্সের আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১.৯৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, তা ২০২০ সালের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। তার মধ্যে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১.৪৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যার বৃদ্ধির হার ২৪.৫ শতাংশ।

চীনের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিনিময় কেন্দ্রের আমেরিকা ও ইউরোপ বিভাগের প্রধান গবেষক চাং মো নান বলেন, দেশের সামষ্টিক নীতি এবং ব্যবসায়িক মডেল উদ্ভাবনের কারণে ই-কমার্স বিকশিত হতে পারে। তিনি বলেন,

নিউজিল্যান্ড, ব্রাজিল ও ইতালিসহ নানা দেশের সঙ্গে বহুপক্ষীয় ই-কমার্স সহযোগিতা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে চীন। ই-কমার্সের মাধ্যমে বিশ্বে প্রতিবেশীর সংখ্যা আরো বেশি অঞ্চলে প্রসারিত হয়েছে। রেশমপথ ই-কমার্স ও ‘এক অঞ্চল এক পথ’ প্রস্তাব বৈদেশিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। গত জানুয়ারিতে আরসিইপি চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে। এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক একীকরণ নিয়ে নীতি প্রণয়ণ করেছে আরসিইপি। ফলে তা এতদঞ্চলের শিল্প ও সরবরাহ চেইনের মিশ্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

 

বর্তমানে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বিগ ডেটা, ক্লাউড কম্পিউটিং ও এআইসহ নানা প্রযুক্তির মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্যের সরবরাহের নানা ডেটা সংগ্রহ করে তা একদিকে ছোট ও মাঝারি কোম্পানির বুদ্ধিমান উৎপাদন ক্ষমতা জোরদার করে, অন্যদিকে উত্পাদনের ব্যয় হ্রাস করে।

 

চীনের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিনিময় কেন্দ্রের উপপরিচালক ও একাডেমিক কমিটির পরিচালক ওয়াং ই মিং বলেন, ডিজিটাল সরবরাহ চেইন প্ল্যাটফর্ম যেমন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উন্নয়নের নতুন প্রবণতা প্রতিফলন করে, তেমনি চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের গুণগত মান উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়েছে।

 

তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে চীন অভ্যন্তরীণ লজিস্টিক ব্যবস্থা নির্মাণে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। তবে আন্তর্জাতিক লজিস্টিক ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। বর্তমানে করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক মালবাহী করিডোরে ঝুঁকি বেড়েছে এবং নৌ পরিবহনের দাম দিন দিন বাড়ছে। ডিজিটাল সরবরাহ চেইন প্ল্যাটফর্ম অর্থনীতি ও সাংগঠনিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে নানা পরিবহন পদ্ধতির সমন্বয় করে বহুমাত্রিক পরিবহন ও ওয়ান স্টপ সেবা প্রদান করতে পারে।

 

ডিজিটাল বাণিজ্য উন্নয়নের সাথে সাথে বিশ্বায়নও দ্রুত চলছে। চীনের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিনিময় কেন্দ্রের উপপরিচালক চু কুয়াং ইয়াও মনে করেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতির শৃঙ্খলা যখন পরিবর্তন হয়, তখন চীনের ডিজিটাল অর্থনীতির সুষ্ঠু উন্নয়ন বজায় রাখা অর্থবহ। গত নভেম্বরে চীন আনুষ্ঠানিকভাবে ডিজিটাল ইকোনমি পার্টনারশিপ চুক্তিতে (ডিইপিএ) যোগদানের আবেদন করেছে। তা ভবিষ্যতে বিশ্ব ডিজিটাল অর্থনীতির নীতি ও নিয়ম প্রণয়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। তিনি বলেন,

বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল অর্থনীতি সীমান্ত পেরিয়ে কাজ করছে এবং নিয়মের সংরক্ষণ ডিজিটাল অর্থনীতি বড় কোম্পানির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ম প্রণয়নের মাধ্যমে নতুন পরিস্থিতিতে বিশ্ব ডিজিটাল অর্থনীতি উন্নয়নের শৃঙ্খলার প্রতিষ্ঠা এগিয়ে নিতে হবে।(শিশির/এনাম/রুবি)