চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও দেশের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, ইন্টারনেট ও তথ্যায়নের উন্নয়ন চাইলে মানুষকে কেন্দ্র করে মানুষের চাহিদা পূরণ করতে হবে। তাহলেই কেবল কোটি কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আরো বেশি ইন্টারনেট উন্নয়নের সুবিধা উপভোগ করবে। সিপিসির অষ্টাদশ অধিবেশনের পর থেকে চীনের ইন্টারনেট ও তথ্যায়ন শিল্প ঐতিহাসিক সফলতা অর্জন করেছে। মানুষের উত্পাদন ও জীবনযাপনের রীতিকে গভীরভাবে পরিবর্তন করেছে ইন্টারনেট।
রাতের বেলায় চিয়াং সু প্রদেশের লিয়ান ইউন কাং শহরের তুং হাই জেলার সিংসি গ্রামের বাসিন্দাদের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন। ৪ ঘন্টার সময়ে ওই গ্রামের বাসিন্দা লি চুং লিয়াং লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বৃটিশ গ্রাহকদের কাছে হাজার ডলার মূল্যের ক্রিস্টাল পণ্য বিক্রয় করেন।
গ্রামের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক চাও চুং কাং জানিয়েছেন, আগে রাত ৮টার সময় গ্রামটি অন্ধকার হয়ে যেতো। তবে গেল কয়েক বছর ধরে ক্রস-বর্ডার লাইভ ই-কমার্স জনপ্রিয় হয়ে উঠার কারণে এখন ভোর ৩-৪ টায়ও গ্রামের বাতি জ্বলে।
ডিজিটাল গ্রামের উন্নয়ন গ্রামের উদ্ভাবনী জীবনীশক্তিকে উদ্দীপিত করেছে। এখন লি চুং লিয়াংয়ের মতো লাইভে বিক্রয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সিংসি গ্রামের বাসিন্দাদের আয় কয়েক গুণ বেড়েছে। দশ বছর আগে তুং হাই জেলার জিডিপি ছিল ২৭৭০ কোটি ইউয়ান। আর এখন ক্রিস্টাল + ক্রস-বর্ডার ই-কমার্স লাইভসহ নতুন শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে ২০২১ সালে সারা জেলায় শুধু ই-কমার্স অনলাইন খুচরা বিক্রির পরিমাণ ছিল ২,৮০০ কোটি ইউয়ান। সিংসি গ্রামের পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় সিপিসির অষ্টাদশ অধিবেশনের পর চীনে গ্রামীন ইন্টারনেট নির্মাণের সফলতা।
২০১৪ সালে সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং প্রথম বারের মতো চীনকে একটি শাক্তিশালি ইন্টারনেটের দেশে পরিণত করার উদ্দেশ্য উত্থাপন করেন। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে, সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটি প্রথম বারের মতো আয়োজন করে জাতীয় ইন্টারনেট নিরাপত্তা ও তথ্যায়ন কর্মসভা। সভায় সি চিন পিং শক্তিশালি ইন্টারনেট দেশের ধারণাটি তুলে ধরেন এবং তার নির্মাণ নিয়ে সার্বিক দিকনির্দেশনা দেন।
গ্রামে ইন্টারনেট অবকাঠামোর দুর্বলতা সম্পর্কে সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, বিনিয়োগ করে গ্রামে নেটওয়ার্ক নির্মাণ করতে হবে। বর্তমানে চীনের ৫ লাখ ১২ হাজার গ্রামে ইন্টারনেট রয়েছে। গ্রামে ইন্টারনেটের প্রবেশের হার ৫৭.৬ শতাংশ। তা দশ বছর আগের তুলনায় ৩৩.৯ শতাংশ বেশি।
গ্রামে ইন্টারনেট স্থানীয়দের জীবনযাপনকে পরিবর্তন করছে। এখন টেলিমেডিসিন সেবা প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে বাইরে না গিয়ে গ্রামের বাসিন্দারা ভাল চিকিত্সা সেবা গ্রহণ করতে পারে। আর গ্রামের শিশুরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে শহরের শিশুদের মতো ভাল মানের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
অন্য দিকে, ইন্টারনেট শহরের জীবনকেও সহজ করে তুলেছে। অনলাইন অফিস, অনলাইন মিটিং, কেনাকাটা ও যাদুঘর এবং মহামারি প্রতিরোধে কিউআর কোডসহ নানা ক্ষেত্রে মানুষের জীবন ও শহর প্রশাসনকে সহজ করছে ইন্টারনেট।
২০২০ সালের মার্চ মাসে সি চিন পিং হাংচৌ পরিদর্শনকালে বলেন, ডিজিটাল থেকে বুদ্ধিমান অর্থাত্ আমাদের শহরকে আরও বুদ্ধিমান ও স্মার্ট করে গড়ে তুলতে হবে। শহর প্রশাসনের দক্ষতা জোদারে এটি প্রয়োজন এবং এর বিস্তৃত সম্ভাবনা রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জনগণকেন্দ্রিক উন্নয়ন ধারণাকে মেনে চলে নতুন স্মার্ট শহর নির্মাণ করা হচ্ছে। হাংচৌ শহরের চিংথান কমিউনিটির বাসিন্দা ইউয়ু চিয়ান কুও ন্যূনতম জীবনযাত্রার ভাতার জন্য আবেদন করছেন৷ এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তিনি ৫ মিনিটের মধ্যে সব আবেদন শেষ করেছেন।
সিপিসির অষ্টাদশ অধিবেশনের পর থেকে চীনের ইন্টারনেট ও তথ্যায়ন শিল্পে বেশ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এখন চীনে নির্মিত হয় বিশ্বে বৃহত্তম ফাইবার ব্রডব্যান্ড এবং ৫জি নেটওয়ার্ক। সারা দেশে চালু ৫জি বেস স্টেশন ১৪ লাখ ২৫ হাজার, তা বিশ্বের ৬০ শতাংশের বেশি। চীনের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০০ কোটির বেশি। আর ইন্টারনেট প্রবেশ ৭৩ শতাংশ বলে বিশ্বের সর্বোচ্চ। চীনের ডিজিটাল অর্থনীতির পরিমাণ ৩৯.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, তা টানা কয়েক বছর ধরে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। (শিশির/এনাম/রুবি)