২০১৫ সালে প্রস্তুতি নিয়ে ২০১৬ সালে চীন-সিঙ্গাপুর আন্তঃযোগাযোগ প্রকল্প কার্যকর করা থেকে দু’পক্ষ সমন্বয় করে চীন-সিঙ্গাপুর আন্তঃযোগাযোগের নতুন অগ্রগতি সৃষ্টি করে। দু’পক্ষ আন্তঃসীমান্ত অর্থায়ন চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি অব্যাহতভাবে তাকে সম্প্রসারণ করতে থাকে। ২০২১ সালের শেষ নাগাদ চীন-সিঙ্গাপুর আন্তঃসীমান্ত প্রকল্পের মধ্যে আর্থিক খাতে সহযোগিতামূলক প্রকল্প ছিল ২০৮টি এবং অর্থ মূল্য ছিল ২৩.২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
চীন-সিঙ্গাপুর (ছোংছিং) কৌশলগত আন্তঃসীমান্ত দৃষ্টান্তমূলক প্রকল্প (সংক্ষেপে চীন-সিঙ্গাপুর আন্তঃযোগাযোগ প্রকল্প) চীন ও সিঙ্গাপুরের তৃতীয় আন্তঃসরকার সহযোগিতামূলক প্রকল্প। প্রকল্পটি ছোংছিং অপারেশন কেন্দ্র হিসেবে প্রধানত আর্থিক পরিষেবা, বিমান চলাচল শিল্প, পরিবহন লজিস্টিক এবং তথ্য যোগাযোগ-এ চারটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা চালায়। দু’পক্ষের সমন্বয়ে প্রকল্পটি “এক অঞ্চল এক পথ” উদ্যোগের আওতায় উচ্চমানের উন্নয়নের সফল দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে।
“এক অঞ্চল এক পথ” নির্মাণ করতে পলিসি কমিউনিকেশন, অবকাঠামো সংযোগ, আর্থিক একীকরণ, অবাধ বাণিজ্য এবং মানুষে-মানুষে ঘনিষ্ঠ বন্ধন তৈরি করতে হয়। পাঁচ বছর ধরে চীন ও সিঙ্গাপুর প্রাতিষ্ঠানিক উন্মুক্তকরণ এবং সমর্থনকারী নীতিতে মনোযোগ দিয়ে পাঁচটি চ্যানেলে প্রাধান্য গড়ে তোলে।
১. নতুন আন্তর্জাতিক স্থল-সমুদ্র বাণিজ্য চ্যানেল। ২০১৮ সালের নভেম্বরে চীন ও সিঙ্গাপুর সরকার “নতুন আন্তর্জাতিক স্থল-সমুদ্র বাণিজ্য চ্যানেল” নির্মাণ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক বা এমওইউ স্বাক্ষর করে। ২০২১ সালে নতুন স্থল-সমুদ্র চ্যানেলে মোট ১ হাজার ৪৯৩টি আন্তর্জাতিক রেল-সমুদ্র সম্মিলিত মালবাহী ট্রেন চালু ছিল। যা ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় ৭৭ শতাংশ বেশি। এর অর্থ মূল্য ৭৯ শতাংশ বেড়ে ১.৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়। আন্তঃসীমান্ত হাইওয়ে বাস ৩৭ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৫৯৯টিতে পৌঁছায়। আন্তর্জাতিক রেল-সমুদ্র সম্মিলিত মালবাহী ট্রেন ১ হাজার ৬৪টি কন্টেইনার পরিবহন করে।
একই সময় নতুন স্থল-সমুদ্র চ্যানেলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা স্থিতিশীলভাবে এগিয়ে গিয়ে সাফল্যের সঙ্গে দ্বিতীয় “এক অঞ্চল এক পথ” আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষ ফোরাম এবং ল্যাঙ্কাং-মেকং সহযোগিতার তৃতীয় সম্মেলনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলাফলের দলিলে অন্তর্ভুক্ত হয়।
২. চীন-সিঙ্গাপুর (ছোংছিং) আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট পরিসংখ্যান বিশেষ চ্যানেল। চ্যানেলটি চীনের প্রথম একক দেশের জন্য পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান বিশেষ চ্যানেল। বর্তমানে ছোংছিং ও সিঙ্গাপুর সংশ্লিষ্ট এমওইউ স্বাক্ষর করে, চ্যানেল ছোংছিংয়ের ৮টি শিল্প পার্কে প্রবেশ করাকে ত্বরান্বিত করেছে। এ ছাড়া, সিছুয়ান, কুইচৌ, ইয়ুননান ও কুয়াংসিসহ বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলের যৌথ আলোচনা, নির্মাণ ও সমন্বিত অর্জনকে আকর্ষণ করেছে।
৩. চীন-সিঙ্গাপুর আন্তঃসীমান্ত অর্থায়ন চ্যানেল। পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়নে কঠিন সমস্যা সমাধানে দু’পক্ষ আন্তঃসীমান্ত অর্থায়ন চ্যানেল নির্মাণ ও অব্যাহতভাবে সম্প্রসারণ করে। গত বছরের শেষ নাগাদ দু’পক্ষের আন্তঃযোগাযোগ প্রকল্পে অর্থায়ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা প্রকল্প ছিল ২০৮টি। অর্থ মূল্য ছিল ২৩২৩ কোটি মার্কিন ডলার। এছাড়া, তহবিল ব্যবস্থাপনা মাত্রা ছিল ১৪৬ কোটি মার্কিন ডলার। উদ্ভাবনী আন্তঃসীমান্ত আর্থিক পরিষেবার পরিমাণ ছিল ৩৬৬ মার্কিন ডলার।
৪. ছোংছিং-সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন চ্যানেল। “ছোংছিং-সিঙ্গাপুর রুটে” সর্বোচ্চ সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট চলাচল করে। যাত্রী পরিবহনের পরিমাণ ২০১৬ সালের ৪৫ হাজার থেকে ২০১৯ সালের ১.৯ লাখ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধ চলাকালে রুটটি যাত্রীবাহী থেকে মালবাহীতে রূপান্তর হয়ে সপ্তাহে ২ বার চালছে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ওয়াইড বডি এয়ারক্রাফট দিয়ে যাত্রীবাহী ফ্লাইট চালায় এবং ছোংছিংয়ের একমাত্র ধারাবাহিক চলাচল আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী রুটে পরিণত হয়।
৫. ছোংছিং-সিঙ্গাপুর মেধাশক্তি প্রশিক্ষণ বিনিময় চ্যানেল। চীন ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রশিক্ষণ সহযোগিতামূলক চুক্তি অনুযায়ী, ছয় দফায় ১৫৬ জন সরকারি কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সিঙ্গাপুরে বিনিময় ও লেখাপড়া করেছেন। এছাড়া, দক্ষ প্রতিভা প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক বিনিময় সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে, ছোংছিংয়ের উর্ধ্বতন দক্ষ প্রতিভা শিক্ষক ও ব্যবস্থাপক বিনিময় প্রশিক্ষণ চালানোর পাশাপাশি সিঙ্গাপুর-ছোংছিং যুব মেধাশক্তি বৃদ্ধি স্টেশন প্রকল্প শুরু করে দু’জায়গার যুব মেধাশক্তি বিনিময় প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা হয়।
চীন ও সিঙ্গাপুর ধারাবাহিকভাবে আর্থিক পরিষেবা, বিমান চলাচল শিল্প, পরিবহন লজিস্টিক এবং তথ্য যোগাযোগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহযোগিতা গভীরতর করার চেষ্টা চালিয়ে যৌথভাবে শিল্পের মিলন ত্বরান্বিত করে, সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে থাকে।
২০২১ সালের শেষ নাগাদ চীন-সিঙ্গাপুর আন্তঃসীমান্ত প্রকল্পে মোট ১৬২টি ব্যবসা সহযোগিতা প্রকল্প স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর অর্থ মূল্য ছিল ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন-সিঙ্গাপুর আন্তঃসীমান্ত দৃষ্টান্তমূলক প্রকল্প অব্যাহতভাবে গভীরতর হচ্ছে। ছোংছিংয়ের চীন-সিঙ্গাপুর দৃষ্টান্তমূলক প্রকল্প ব্যুরো সিছুয়ান প্রদেশের ছেংতু, কুয়াং আন ও নান ছোং শহরের সঙ্গে সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করে, ছোংছিং, সিছুয়ান ও সিঙ্গাপুরের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহ নিয়ে কৃষি পণ্য বাণিজ্য এবং চীন-সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক ডিজিটাল চ্যানেল অ্যাপ্লিকেশন দৃশ্যকল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিময় ও সহযোগিতা সম্প্রসারণ করে।
এছাড়া, এটি নতুন যুগে পশ্চিমাঞ্চলের মহা-উন্নয়নের জন্য পরিষেবা দিয়ে আসছে। চীন-সিঙ্গাপুর আন্তঃসীমান্ত অর্থায়ন চ্যানেল সেখানকার ১০টি প্রদেশ, অঞ্চল ও শহরে সক্রিয়। পশ্চিমাঞ্চলের অন্য ৯টি প্রদেশ ও অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫.৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আন্তঃসীমান্ত অর্থায়ন করে দিয়েছে।
পাশাপাশি, ইতিবাচকভাবে তৃতীয় পক্ষের বাজার সম্প্রসারণ করা হয়। ছোংছিং মহানগরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ শক্তিশালীভাবে ছোংছি ও সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান আসিয়ানের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্তি ত্বরান্বিত করেছে।
একই সময় চীন-সিঙ্গাপুর আন্তঃযোগাযোগ প্রকল্পের প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ আরো সুসম্পূর্ণ। বর্তমানে প্রকল্পের খ্যাতি, প্রভাবশক্তি এবং বিকিরণ প্রদর্শনের প্রভাব অব্যাহতভাবে উন্নত হয়ে যথাক্রমে ছোংছিং ও সিঙ্গাপুরের “পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট” সহযোগিতার মাধ্যমে চীনের পশ্চিমাঞ্চল, আসিয়ান এবং “এক অঞ্চল এক পথ” বরাবর দেশগুলোর আন্তঃযোগাযোগ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
(প্রেমা/এনাম)