মানুষ প্রকৃতিকে হতাশ না করে, প্রকৃতিও মানুষকে হতাশ করবে না
2022-03-27 18:56:26

বন্ধুরা, সুন্দর প্রকৃতি কে না পছন্দ করে? প্রকৃতি সংরক্ষণ ধীরে ধীরে সবার অভিন্ন চেতনায় পরিণত হচ্ছে। চীনের প্রাকৃতিক সংরক্ষণ কাজের অবস্থা কেমন? সরকার ও দেশের নেতারা কি এই কাজের ওপর গুরুত্ব দেন? আজ এই বিষয়টি আপনাদের জানাবো।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছিলেন: আমাদের উচিত প্রকৃতিকে সম্মান করা, প্রকৃতিকে মেনে নেয়া, প্রকৃতিকে রক্ষা করা, মানবজাতি এবং প্রকৃতির সুষম সহাবস্থানের পথ অনুসন্ধান করা।

৪০ বছরেরও বেশি সময়ে, গ্রামীণ কৃষক থেকে দেশের শীর্ষনেতা চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর সবুজ অনুভূতির কোনো পরিবর্তন হয় নি। তিনি সবসময় প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ কাজের ওপর গুরুত্বারোপ করছেন, এই কাজকে একটি বড় কাজ হিসেবে পরিচালনা করেন।

মানুষ যদি প্রকৃতিকে হতাশ না করে, তাহলে প্রকৃতিও মানুষকে হতাশা করবে না।

যখন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ফুচিয়ান প্রদেশে কাজ করতেন, তখন তিনি স্থানীয় ছাংথিং পানি ও ভূমি ক্ষয় প্রতিরোধ, মু লান সি বন্যা প্রতিরোধ প্রকল্পসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্প চালু করেন। ২০০০ সালে তিনি দেশে সবার আগে ফুচিয়ান প্রদেশকে ‘প্রকৃতি প্রদেশ’ হিসেবে নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেন।

২০ শতাব্দীর ৮০ ও ৯০ দশকে চ্যচিয়াং প্রদেশের উত্তরাঞ্চলের ইয়ু গ্রাম শ্রেষ্ঠ গুণগতমানের আকরিক সম্পদের কারণে সবার চোখের ‘প্রথম ধনী হওয়া গ্রামে’ পরিণত হয়। তবে এর ফলে প্রাকৃতিক দূষণ দেখা দেয়। প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতি দেখে ইয়ু গ্রামের মানুষ তা পরিবর্তন করতে চায়। ২০০৫ সালের গ্রীষ্মকালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ‘পরিচ্ছন্ন জল এবং সবুজ পাহাড় হলো সোনা ও রূপার পাহাড়’ চিন্তাধারা উত্থাপন করেন। যা গ্রামীণ উন্নয়নের দিক নির্দেশনা দেয়। গ্রামটি সবার আগে পরিবেশ সংরক্ষণের সঙ্গে অর্থনীতি উন্নয়নের নতুন পথ উন্মোচন করে।

২০১২ সালের ৭ ডিসেম্বর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার ২৩ দিন পর তিনি প্রথমবারের মত বেইজিং ত্যাগ করে কুয়াংতুং প্রদেশে যান। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে চাইলে প্রাকৃতিক সভ্যতা নির্মাণকাজ ভালোভাবে করতে হবে।

চীনের সাই হান পা এলাকার ১৯০০ মিটার উঁচু ইউয়ে লিয়াং পাহাড়ে দাঁড়িয়ে চোখে পড়ে সবুজের সমুদ্র। তা হল মরুভূমিকে বনভূমিতে পরিণত করার আরেকটি সবুজ মিরাকল।

প্রেসিডেন্ট সি বলেছিলেন: আমাদের দেশকে ভালোভাবে নির্মাণ করা, আমাদের সবুজ অর্থনীতিকে ভালোভাবে উন্নত করা, আমাদের প্রাকৃতিক সভ্যতা ভালোভাবে বাস্তবায়ন করা দরকার।

২০২০ সাল শেষ নাগাদ, চীনে বনভূমির আয়তন ২২ কোটি হেক্টরে উন্নীত হয়। দেশে বনভূমির আয়তন ২৩.০৪ শতাংশ। তৃণভূমির আয়তন ৫৬.১ শতাংশ। জলাভূমি সংরক্ষণের হার ৫০ শতাংশেরও বেশি। বনের কার্বন মজুদের পরিমাণ ৯ বিলিয়ন ১৮ কোটি টন। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, নাসা একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, বিশ্বে উদ্ভিদের আয়তন বৃদ্ধিতে ২৫ শতাংশই চীনের অবদান।

 

বড় আকারের সংরক্ষণ ও বড় ধরনের উন্নয়ন না করা

২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ইয়ুননান প্রদেশের তা লি শহরের আর হাই হ্রদের কাছে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ছবি তোলেন, এই ছবি একটি স্মৃতি। আরও কয়েক বছর পর আবার আসবো, আশা করি জল আরও পরিচ্ছন্ন হবে।

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, আমি এখন যে হৃদের জল দেখি, আশা করা যায় কয়েক বছর পর আরও কিছু ছবি তুলবো, তখন হ্রদের পানি বর্তমানের চেয়ে আরো বেশি পরিচ্ছন্ন হবে। যদি পরিচ্ছন্ন না হয়, তাহলে তোমাদের দায় নিতে হবে।

 

প্রেসিডেন্ট সি আরও বলেন, আমাদের উচিত প্রকৃতিকে সম্মান করা, এই প্রকৃতির সব কিছুর উন্নয়নের যত্ন নেওয়া এবং প্রকৃতি রক্ষার মাধ্যমে উন্নয়নের সুযোগ খোঁজা।

প্রাকৃতিক সভ্যতা মানবজাতির ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত। সবুজ বাড়িঘর নির্মাণ করা হল বিভিন্ন দেশের জনগণের অভিন্ন স্বপ্ন।

২০১৩ সালের ১৮ জুলাই, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং প্রাকৃতিক সভ্যতা বিষয়ক কুই ইয়াং আন্তর্জাতিক ফোরামে দেওয়া অভিনন্দনবাণীতে বলেন, চীন অব্যাহতভাবে আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালন করবে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে গভীরভাবে প্রাকৃতিক সভ্যতার বিনিময় ও সহযোগিতা করবে, ফলাফল শেয়ার করবে, যৌথভাবে সুন্দর প্রকৃতির পৃথিবী গড়ে তুলবে।

 

প্রেসিডেন্ট সি আরও বলেন, চীন চেষ্টা করবে ২০৩০ সালের আগে কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছানোর জন্য, ২০৬০ সাল নাগাদ কার্বন নিরপেক্ষতা বাস্তবায়ন করবে।

বর্তমানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি’র প্রাকৃতিক সভ্যতা চিন্তাধারার নির্দেশনায়, সুন্দর চীন গড়ে তোলা ইতোমধ্যে চীনাদের মনের অভিন্ন স্বপ্ন পরিণত হয়েছে। আরো নীল আকাশ, আরো সবুজ পাহাড় এবং আরো পরিচ্ছন্ন পানির সুন্দর দৃশ্য সবার চোখের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।

 

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, পৃথিবী হল মানবজাতির একমাত্র বাসস্থান। আমাদের উচিত নিজের চোখের যত্ন নেওয়ার মতো প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা করা, জীবন রক্ষা করার মতো প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ করা। যৌথভাবে সবুজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া।