বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
2022-03-26 17:39:46

বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের দাম হুহু করে বেড়েছে। আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে এই অবস্থা। বিগত সবসময়ই একই পরিস্থিতি দেখা গেছে। রমজানের সময় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও- পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা যায় না। এতে করে সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়ে সীমিত আয়ের মানুষ। এমন মানুষের কষ্ট রোধে বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন, কিছু পণ্যের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে, টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে এবং কম দামে নানা পণ্য বিক্রি করছে। নিঃসন্দেহে এসব ইতিবাচক উদ্যোগ। কিন্তু, দেশের বাজারগুলোতে লাগাম টানবে কে? এই কাজটিও প্রশাসনকেই করতে হবে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে নিত্যপণ্যের দামের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি রোধে প্রশাসনযন্ত্রকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। যেই স্থান থেকে দাম বাড়ানো হচ্ছে এবং যারা দাম বৃদ্ধি করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নিত্যপণ্যের দামের স্থিতিশীলতার সঙ্গে দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা ও উন্নয়ন ঘনিষ্ঠভাবে জাড়িত। জনজীবনে সুখ ও প্রশান্তি দিতে হলে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। জনগণের খাদ্য নিয়ে চক্রান্তকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

 

দেখা যাচ্ছে, সীমিত আয়ের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই হিমশিম খাচ্ছে। এ যেন এক সমাধানহীন যুদ্ধ। অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে। কর্মক্ষেত্রে অন্যায় করতে বাধ্য হচ্ছে। দেশে চাল, ডাল, তেল, সবজিসহ প্রতিটি জিনিসের উৎপাদন বাড়ছে, তারপরও দাম কেন বাড়বে? শাকসবজি, আমিষ, পোশাক থেকে শুরু করে চিকিৎসার ব্যয় ও ওষুধপত্রের দাম বেড়েছে। এমনকি রড, সিমেন্ট, ইট, বালু, টাইলস, স্যানিটারি আইটেম, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ সব ধরনের নির্মাণসামগ্রীর দাম অনেক বেড়েছে। এর নিয়ন্ত্রণ সাধারণ মানুষের হাতে নেই। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। তাদের রোধের শক্তি রাখে একমাত্র প্রশাসন।

 

সামাজিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নাগরিক জীবনে শান্তি ও স্বস্তির স্বার্থেই দ্রবমূল্য বৃদ্ধির অস্বাভাবিক গতি এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ জন্য সরকারকে বাজারব্যবস্থা নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। কঠোর ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। সিন্ডিকেট করে মজুদদারি ও বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টিকারীদের চেপে ধরতে হবে। বাজারে পণ্যের চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং এর পেছনে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে বাজার মনিটরিং, মজুদদারি বন্ধ এবং বাজারে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।

 

রমজান মাসে কোনো পণ্যের দাম যেন অহেতুক না বাড়ে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। দেখা যায়, বিত্তবান মানুষ রমজানের পুরো মাসের পণ্য একসাথে কেনেন। ফলে বাজারে হঠাৎ করে পণ্যের বিরাট চাহিদা সৃষ্টি হয় এবং এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। কোনো জিনিসের দাম সবসময় একই থাকবে না, এটি নিরেট সত্য। সময়ের সাথে সাথে মূল্যস্ফীতির কারণে সব কিছুর দাম বাড়া অর্থনীতির একটি স্বাভাবিক প্রবণতা। তবে সেই মূল্যবৃদ্ধির একটি সীমা পরিসীমা থাকতে হবে। দাম বাড়ার পরিমাণটা বাস্তব ও যুক্তিসঙ্গত হতে হবে।

 

তাই সরকারের বাজার মনিটরিং আরো বাড়াতে হবে এবং পণ্যের অবৈধ মজুদ ঠেকাতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।