ইউক্রেন ইস্যুতে চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন গুজব ও প্রসঙ্গকথা
2022-03-25 11:27:11


মার্চ ২৫: গতকাল (বৃহস্পতিবার) চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উ ছিয়ান ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ সংলাপ, পরামর্শ ও আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি উন্নয়নে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে চীন আশা করে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কন সরকার চীনের বিরুদ্ধে একের পর এক গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে, যা অশুভ। আন্তর্জাতিক সমাজও মার্কিন মিথ্যাচারের সাক্ষী।

মুখপাত্র বলেন, ইউক্রেন সংকটের পেছনে আছে জটিল ইতিহাস ও বাস্তবতা। এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন ফ্যাক্টরের কারণে। প্রশ্ন হচ্ছে: সংকট সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে বেশি কোন দেশ দায়ী? এ প্রশ্নের উত্তর সবারই জানা। চীন সবসময় ন্যায্য মনোভাব নিয়ে, ঘটনার বাস্তবতা অনুযায়ী স্বাধীনভাবে চিন্তাভাবনা করে, নিজের অবস্থান প্রকাশ করে আসছে। এই সম্পর্কে তিনি বলেন


“চীন মনে করে, বর্তমান সংকট সমাধান করতে জাতিসংঘের সনদ ও নিয়ম মেনে চলতে হবে; বিভিন্ন দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করতে হবে; সবার ন্যায্য অধিকারকে সম্মান করতে হবে; এবং সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিতর্কের সমাধান করতে হবে।”

উ ছিয়ান জোর দিয়ে বলেন, চীনের দৃষ্টিভঙ্গি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে আলাদা। যুক্তরাষ্ট্র সংকট তৈরি করে তা থেকে লাভবান হবার চেষ্টা করে; চীন তা করে না। চীন আশা করে, সকল পক্ষ সংলাপ, পরামর্শ এবং আলোচনা চালিয়ে যাবে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিস্থিতি শান্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে, এবং শান্তির সন্ধানে  গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে।

রাশিয়া আবিষ্কার করেছে যে, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক জৈবিক গবেষণাগার রয়েছে। এ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে উ ছিয়ান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দেশ যে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জীবাণু অস্ত্র কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩৬টি জৈবিক পরীক্ষাগার রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও ফোর্ট ডেট্রিকসহ বিভিন্ন গবেষণাগারে বিপুল সংখ্যক জৈবিক সামরিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে ও হচ্ছে। প্রকাশ্য তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনের কয়েক ডজন জৈবিক পরীক্ষাগার মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের আদেশে কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্র এসব করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার পরিচয় দেয় না। এসব কর্মকাণ্ডের মারাত্মক নিরাপত্তাঝুঁকি রয়েছে, যা উপেক্ষা করা যায় না। উ ছিয়ান বলেন,


“আমরা জানতে চাই, এই প্রকল্পগুলোর আসল উদ্দেশ্য কী? কেন মার্কিন পক্ষ এই প্রকল্পগুলোর বিশদ তথ্য প্রকাশ করে না? বিদেশে মার্কিন জৈবিক গবেষণাগার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক কী? যদি ইউক্রেনে মার্কিন পরীক্ষাগার শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার হবে, তবে কেন এর সঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ গভীরভাবে জড়িত? বিগত ২০ বছর ধরে ‘জীবাণু অস্ত্র কনভেশন নিষিদ্ধকরণ’ বহুপাক্ষিক পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিরোধিতা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর যুক্তরাষ্ট্রকেই দিতে হবে।”

উ ছিয়ান জোর দিয়ে বলেন, “ইউক্রেন ইস্যুতে চীনের অবস্থান সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং স্পষ্ট। আমরা সর্বদা শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং আলোচনার পক্ষে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করেছি। পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটানোর পরিবর্তে, আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে অবিলম্বে গুজব ছড়ানো ও অপবাদ দেওয়ার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই। বর্তমান ইউক্রেনীয় সংকটের বিকাশ ও বিবর্তনে নিজের লজ্জাজনক ভূমিকা পর্যালোচনা করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের এবং এ বিষয়ে সত্য বলা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইউক্রেন পরিস্থিতির উন্নয়নে বাস্তবধর্মী কাজ করা।” (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)