মার্চ ২২: ‘চীন রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে মর্মে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা; আমরা এর বিরোধিতা করি’। স্থানীয় সময় ২০ই মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রাষ্ট্রদূত ছিন কাং সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে এ কথা বলেন। তিনি ইউক্রেন ইস্যুতে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর মিথ্যাচার খণ্ডন করেন।
বহির্বিশ্ব লক্ষ্য করছে যে রুশ-ইউক্রেন সামরিক সংঘর্ষ শুরু হওয়ার আগে এবং পরে, কিছু মার্কিন রাজনীতিবিদ এবং মিডিয়া চীনের বিরুদ্ধে ভুয়া খবর প্রচার করে আসছে। এর মধ্যে, চীন রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দিতে পারে মর্মে যে গুজব প্রচার করা হচ্ছে তা ‘নোংরা জল’ যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঢেলে দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে এবং কিছু পশ্চিমা দেশও এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করছে। এমনকি মার্কিন কর্মকর্তারা এর ভিত্তিতে চীনা কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকিও দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সমাজ আমেরিকান আধিপত্যবাদী আচরণ ও ডাহা মিথ্যার সাথে অপরিচিত নয়। উনিশ বছর আগে, যুক্তরাষ্ট্র ‘ওয়াশিং পাউডারের টিউব’ ব্যবহার করে বিশ্বকে প্রতারিত করে ও ইরাকে হামলা চালায়। প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেওর ‘বিখ্যাত উক্তি’ হচ্ছে: ‘আমরা প্রতারণা করি, আমরা মিথ্যা বলি এবং আমরা চুরি করি’। এটা যেন আমেরিকান প্রতারণার সেরা স্বীকারোক্তি। আর এবার চীনের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রচারের জন্য ইউক্রেন ইস্যুকে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র। এর উদ্দেশ্য চীন-রাশিয়া সম্পর্ক নষ্ট করা এবং বহির্বিশ্বে চীনকে খাটো করা। এটা অবশ্য মার্কিনিদের একটি পুরানো কৌশল মাত্র। রয়টার্স পণ্ডিতদের বিশ্লেষণের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে যে, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সাবধানে পরিকল্পিত জুয়া ও ‘ব্ল্যাকমেইলিং’।
সত্যের সামনে মার্কিন অপকৌশল আনাড়ি এবং হাস্যকর বলে মনে হচ্ছে। ইউক্রেনের সঙ্কট শুরুর পর থেকে, চীন সর্বদা শান্তি ও আলোচনার কথা বলে এসেছে এবং ইউক্রেনে মানবিক সংকট প্রতিরোধে ছয় দফা প্রস্তাব পেশ করেছে। বর্তমানে চীন কোনো পক্ষকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ না-দিয়ে ইউক্রেনের স্থানীয় জনগণের জন্য খাদ্য, ওষুধ, স্লিপিং ব্যাগ, দুধের গুঁড়া ইত্যাদির কয়েকটি চালান পাঠিয়েছে ও পাঠাচ্ছে। চীন পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং প্রকৃত চাহিদা অনুযায়ী ইউক্রেনকে মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেন সংকটের সূচনাকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই সমস্যা আরও জটিল করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ ঘটিয়ে অন্তত পাঁচ বার এবং প্রতিবারই রাশিয়া তার প্রতিবাদ করেছে, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আর ২০১৪ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা পাঠিয়ে আসছে। পাশাপাশি, ন্যাটো অনেকগুলো সামরিক মহড়া চালিয়েছে ইউক্রেনকে সাথে নিয়ে। এসবই ছিল বর্তমান ইউক্রেন সংকট সৃষ্টির মূলে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সামরিক সংঘাত শুরুর পর, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং এক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলো একাট্টা হয়েছে। ইউক্রেনকে প্রচুর পরিমাণে সামরিক সহায়তাও দিয়ে যাচ্ছে দেশগুলো। এ ধরনের আচরণ সঙ্কট সমাধান করে না, বরং উস্কে দেয়। গত ১৬ই মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরিত এক স্মারকলিপি অনুসারে, মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ ইউক্রেনকে বিপুলসংখ্যক আক্রমণাত্মক অস্ত্রসহ ৮০ কোটি মার্কিন ডলারের অস্ত্র সহায়তা দেবে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই ইউক্রেনের জনগণের কল্যাণচিন্তা করতো, তবে তারা ইউক্রেনে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ না-করে বরং সেদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালাতো। কোনো কোনো বিশ্লেষক বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনায় বর্তমান অচলাবস্থার কারণ ইউক্রেন সরকার যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ বন্ধ করতে চাইলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি অর্জন কঠিন হবে না।
একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগত ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রদান করছে এবং রাশিয়ার ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধি করছে; অন্যদিকে, শান্তির কথা, মানবিক সহায়তার কথা বলছে। এটা পরস্পরবিরোধী আচরণ। বস্তুত, কে সংঘাত উস্কে দিচ্ছে তা বোঝার জন্য বেশি কষ্ট করতে হয় না। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ইয়াং)