আমি আপনাদেরকে কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই। আপনাদের প্রিয় ক্লাস কী? আপনারা যখন ক্লাসে থাকেন তখন ক্লাসরুমে শিক্ষক কি আপনার সাথে থাকেন? আপনি যখন ক্লাসে বসে থাকেন, তখন শিক্ষক কি বসে থাকেন- নাকি ভাসমান থাকেন?
আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, এমন অদ্ভুত প্রশ্নের মানে কী?! এক্ষেত্রে ‘থিয়েনগং ক্লাসের’ কথা উল্লেখ করতে হয়। চীনা ছাত্রছাত্রীরা একটি বিশেষ ক্লাসে অংশগ্রহণ করেছিল। তা হলো—‘থিয়েনগং ক্লাস’। ছাত্রছাত্রীরা বড় বড় ক্লাসরুমে বসে ছিল, কিন্তু তাদের শিক্ষক ও শিক্ষিকা ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪’শ কিলোমিটার উপরে ভাসমান অবস্থায় ছিলেন। আর সেটা ছিল মহাকাশ ক্যাপসুল!
‘থিয়েনগং ক্লাসরুম’, নাম থেকে বোঝা যায় যে এটি একটি মহাকাশ বিজ্ঞান শিক্ষার ক্লাস এবং এটি চীনের মহাকাশ স্টেশন থেকে প্রচারিত প্রথম মহাকাশ বিজ্ঞান শিক্ষার ব্র্যান্ড। ‘মহাকাশ শিক্ষকরা’ হলেন চীনা মহাকাশচারী এবং কিশোর-কিশোরীরা তাদের প্রধান লক্ষ্য। বড় বড় ক্লাসরুমের ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি, চীনের চারটি অঞ্চলে শাখা ক্লাসরুম আছে এবং সারা দেশের অনেক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ লাইভ টিভির মাধ্যমে একসাথে এই ক্লাস দেখেছেন।
‘থিয়েনগং ক্লাসরুম’-এর দ্বিতীয় পাঠ ২৩ মার্চ চীনের মহাকাশ স্টেশন থেকে শুরু হবে। নতুন ক্লাস শুরু হওয়ার আগে, আমরা আগের ক্লাসে কী শিখেছি তা পর্যালোচনা করব, কেমন?
আসলে, প্রথম ক্লাস শুরু হওয়ার আগে, ছাত্রছাত্রীরা অনেক মজার প্রশ্ন করেছে, যেমন নভোচারীরা কোথায় ঘুমায়? স্বপ্ন দেখেন কিনা? ঘুমালে কি ভেসে বেড়ায়? সেখানে কি ইউএফও আছে? তারা কি মিটমিট করে? মহাকাশের রঙ কেমন?
তিনজন মহাকাশচারী শিক্ষার্থীদের জন্য সমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রস্তুত করেছিলেন এবং শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। দেখা যায়, প্রথমে মহাকাশচারী ওয়াং ইয়াপিং সবাইকে মহাকাশ ক্যাপসুলের সাধারণ পরিস্থিতি ঘুরে ঘুরে দেখান। যেমন, ফ্রিজে কি আছে। রান্নাঘরটা কেমন। তারা কোথায় ঘুমায়। যেখানে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন সেই জায়গা কেমন। ছাত্রছাত্রীরা খুব মনোযোগ দিয়ে তা দেখেছে।
ওয়াং ইয়াপিংও ব্যাখ্যা করেন, কেন তাদের মুখ মোটা দেখাচ্ছে, কারণ মহাকাশে মানবদেহে রক্ত প্রবাহের অবস্থা পৃথিবীর থেকে কিছুটা আলাদা। তাই সুস্থ থাকার জন্য মহাকাশে তাদেরকে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হয়।
ওয়াং ইয়াপিং রান্নাঘর ও রেফ্রিজারেটর দেখালেন। দেখা যাচ্ছে যে মহাকাশচারীরা আপেল খেতে পছন্দ করেন।
তারপর ইয়ে কুয়াংফু শিক্ষার্থীদের একটি স্পেস সাইটোলজির পরীক্ষা দেখান।
একজন শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেন যে, মাটির মতো মহাকাশে হাঁটা ও ঘুরে বেড়ানো কি সম্ভব? এর উত্তর দেখুন। (ভিডিও)
এরপর তিনজন মহাকাশচারী শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বিস্ময়কর পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রস্তুত করেন। (ভিডিও)
তিনজন মহাকাশচারী শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, যেমন: মহাকাশ থেকে আকাশ নীল দেখা যায় না, বরং তা গভীর কালো। তারা প্রতিদিন ১৬বার সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখতে পায়। রোলার কোস্টারে চড়ার চেয়েও পৃথিবী থেকে বেরিয়ে বা পৃথিবীতে ফিরে আসা বেশি উত্তেজনাপূর্ণ, কারণ মহাকাশযানটি পৃথিবীর মধ্যে দিয়ে যাওয়ার এবং পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় যে লোড তৈরি হয় তা রোলার কোস্টারের চেয়েও অনেক বেশি। জাই জিগাং শিক্ষার্থীদের এভাবেই ব্যাখ্যা করেন।
এটি হাই-ডেফিনিশন কোর্স, দ্রুত ইন্টারনেট গতি এবং সমৃদ্ধ পরীক্ষামূলক জ্ঞানসহ আমার দেশের মহাকাশ স্টেশন নির্মাণব্যবস্থা দেখানো হয়।
আসলে রোল মডেলের শক্তি অনেক বেশি। ‘থিয়েনগং ক্লাসরুম’-এর অল্প কিছু ক্লাস হলেও; শুধুমাত্র একটি শ্রেণী কত বেশি তরুণ-তরুণীকে তাদের ‘বিজ্ঞানের স্বপ্ন’ অনুসরণ করার এবং তাদের ‘মহাকাশযানের স্বপ্ন’ বাস্তবায়নের জন্য উদ্দীপ্ত করতে পারে তা ধারণাও করা যায় না!