অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গতিশীল করছে বৃত্তিমূলক শিক্ষা
2022-03-21 15:12:27

“এক অঞ্চল এক পথ” নির্মাণ গভীরভাবে এগিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে আরো বেশি বৃত্তিমূলক শিক্ষা সহযোগিতামূলক প্রকল্প প্রকল্পের সদস্য দেশগুলোতে কার্যকর হয়েছে।  দেশী-বিদেশী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির যৌথ নির্মাণ এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে চীন “এক অঞ্চল এক পথ” বরাবর দেশগুলোর সঙ্গে বৈচিত্র্যময় মেধাশক্তি, প্রযুক্তি এবং কর্মসংস্থান ও শিল্প প্রতিষ্ঠাকে বেগবান করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্পষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে। এসব সাফল্য স্থানীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে জনশক্তির নিশ্চয়তা ও বুদ্ধিমত্তা প্রদান করছে।

 

২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর কম্বোডিয়ার সিহানুকভিল বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত সিহানুকভিল শিল্প ও বাণিজ্য কলেজের নতুন সেমিস্টারের প্রথম ক্লাস শুরু হয়। সিহানুকভিল বিশেষ অঞ্চলের কোম্পানি এবং উসি  ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট অব কমার্স যৌথভাবে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছে। কলেজটি বিদেশে চীনের প্রথম সহযোগিতামূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

 

মহামারীর প্রভাবে কলেজটির অনেক ক্লাস অনলাইনে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কলেজের ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা এবং তথ্য প্রযুক্তি-এ তিনটি বিষয়ের দু’টি সেশনে মোট ৫৯ ছাত্রছাত্রী পড়া-লেখা করছে। ভবিষ্যতে তাতে হিসাবরক্ষক, পর্যটন ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, ই-বাণিজ্য ও কৃষি প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় খোলা হবে।

 

কম্বোডিয়ার শিক্ষা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপ-প্রধান কলেজটির ভবিষ্যতে ভরসা রাখেন। তিনি মনে করেন, কলেজটির শিক্ষার দর্শন ও পরিবেশ ভালো হবার সঙ্গে সঙ্গে সিহানুকভিল বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের বহু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের অনুশীলনের ঘাঁটি সরবরাহ করছে।

 

সিহানুকভিল বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কোম্পানির মহাপরিচালক ছেন চিয়ানকাং বলেন, কলেজটি ছাড়াও এখানে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণে গুরুত্বারোপ করছে সিহানুকভিল চীন-কম্বোডিয়া ফ্রেন্ডশিপ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। দু’টো কলেজ অঞ্চলটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ মানব সম্পদ তৈরির পাশাপাশি দেশটির জন্য বহু সংখ্যক শিল্প-শ্রমিক ও প্রযুক্তিগত প্রতিভা লালন-পালন করছে।

 

জিবুতি রুবান কর্মশালা আফ্রিকায় চীনের নির্মিত প্রথম রুবান কর্মশালা। ২০১৯ সালে চালু হওয়া থেকে কর্মশালাটি সরকার, স্কুল ও প্রতিষ্ঠানসহ বহু পাক্ষিক সহযোগিতার রূপে রেলওয়ে চলাচলের  ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ অঞ্চল, লোকোমোটিভ সিমুলেশন ড্রাইভিং ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ অঞ্চল এবং প্রাতিষ্ঠানিক সিমুলেটেড ব্যবসায়িক প্রশিক্ষণ কক্ষসহ বেশ কয়েকটি  শিক্ষা এলাকা প্রতিষ্ঠা করেছে। ছাত্রছাত্রীরা আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলওয়ের নগদ স্টেশনে স্থাপিত ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে হাতেকলমে ট্রেন চালানো শিখছে।

 

২০১৯ শিক্ষা বর্ষে রুবান কর্মশালার এক ছাত্রের চীনে লেখাপড়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু রেলওয়ে বিষয় থাকায় তিনি রুবান কর্মশালাতে চলে আসেন। এটা তার কল্পনার বাইরে ছিল। তিনি বলেন, নিজের দেশে রেলওয়ে বিষয়ে পড়তে পারাটা তার কাছে স্বপ্নের মতো। এ পর্যন্ত মোট ২৪ জন ছাত্র রুবান কর্মশালায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে। ভবিষ্যতে তারা আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলওয়ের বিভিন্ন লাইনের কাজে অংশ নেবে।

 

শিক্ষক প্রশিক্ষণ হচ্ছে রুবান কর্মশালা প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক প্রকল্প। ২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জিবুতি রুবান কর্মশালার দু’দফায় পাঁচজন শিক্ষক চীনের থিয়ান চিন রেলওয়ে টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল কলেজে চারমাসব্যাপী প্রশিক্ষণ নেন। এর মধ্যে তারা তাত্ত্বিক জ্ঞান ও বিশেষ প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ নেয়ার পাশাপাশি চায়না রেলওয়ে বেইজিং গ্রুপ লিমিটেড কোম্পানির থিয়ান চিন ও বেইজিং নান স্টেশনে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। জিবুতির এক শিক্ষক বলেন, তিনি এখানে অর্জিত জ্ঞান দিয়ে আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য আরো বেশি অবদান রাখবেন।

 

জিবুতির সেকেলে ইন্টারনেট অবকাঠামো বিবেচনা করে, থিয়ান চিন রেলওয়ে টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল কলেজ চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশনের সঙ্গে সহযোগিতা করে বেইজিং রেলওয়ে প্রশাসনের অধীনে বিভিন্ন স্টেশন এবং আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলওয়ের সরঞ্জাম সরবরাহকারীর কাজের সাইটে গিয়ে ভিডিও কোর্স রেকর্ড করে। তারপর জিবুতির রুবান কর্মশালা ও  আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলওয়ের কর্মীদের কাছে পাঠায়। যাতে ডাউনলোড করে শিখা যায়। জিবুতির রুবান কর্মশালা পর পর ১৮টি চীনা, ইংরেজী ও ফরাসি ভাষার শিক্ষা-উপকরণ সংকলন করার পাশাপাশি ১৯৮টি মাইক্রো কোর্সসহ বিভিন্ন ভিডিও শিক্ষাদান উপকরণ তৈরী করেছে।

 

জিবুতির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক পরিদর্শক বলেন, আদ্দিস  আবাবা-জিবুতি রেলওয়ে চালু হওয়ার ফলে স্থানীয় রেলওয়ে শিল্পের গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। জিবুতি আফ্রিকার যাতায়াতের সংযোগস্থল হবার চেষ্টা করছে। রুবান কর্মশালা বিরাটভাবে স্থানীয় পরিবহন শিল্পে মেধাশক্তির লালন-পালন ত্বরান্বিত করবে। এটা জিবুতির রেলওয়ে নির্মাণ এবং শিল্প উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

 

আলজেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় বিস্কা প্রদেশের উমাশ বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের নির্মাণের জমিতে প্রশিক্ষক হুসাইন নয়জন আলজেরিয়ান টেমপ্লেট কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের সুদক্ষ টেমপ্লেট নির্মাণের পুরো প্রক্রিয়া অপারেশন আয়ত্ত করতে সাহায্য করেছেন।

 

প্রকল্পটি চায়না রেলওয়ে ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ লিমিটেডের (সিআরআইজি) আলজেরিয়ায় নির্মিত প্রথম বিদ্যুৎ কেন্দ্র। মহামারীর প্রভাবে প্রকল্পটি সুদক্ষ কর্মীর অভাবের সম্মুখীন হচ্ছে। তবে ২০২১ সালের অক্টোবরে একটি বিশেষ কর্মী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রকল্প বিভাগে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ৫টি কোর্সের মাধ্যমে ৭৯জন স্থানীয় কর্মী সুদক্ষ টেমপ্লেট কর্মীতে পরিণত হয়েছে।

 

সিআরআইজির কর্মী বাও ইয়েচিয়ান আলজেরিয়ায় ১৬ বছর ধরে আছেন। তিনি আরবী ভাষায় পারদর্শী। তিনি কেন্দ্রের প্রধান প্রশিক্ষক। বার বার বিবেচনার পর তারা কয়েক ডজন পৃষ্ঠার প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা ও রূপরেখা তৈরি করেছেন। ফলে কর্মীদের জন্য সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণ শিক্ষা উপকরণ তৈরী হয়েছে।

 

তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে সবাই সুদক্ষ কর্মী হয়ে আরো ভালো আয় ও জীবনের অধিকারী হবে। প্রতিবেশী প্রদেশের অনেক কর্মীরাও আকৃষ্ট হচ্ছেন। প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর তাদের আরো ভালো জীবন অন্বেষণের প্রত্যয় তৈরি হয়।

 

(প্রেমা/এনাম)