মার্চ ২১: ২০১১ সালে প্রথম চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেন ডুইসবার্গে পৌঁছায়। আর তার মাধ্যমেই এশিয়া-ইউরোপ স্থল-যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। গত ১১ বছরে চীন ও ইউরোপের মধ্যে মালবাহী ট্রেন চলাচল সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। হাল আমলে এসে মহামারী মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণেও এতদঞ্চলের দেশগুলোকে সাহায্য করেছে এই রেলপথ।
মার্চের শুরুতে, যান্ত্রিক সরঞ্জাম, ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ, অটো ও মোটরসাইকেলের খুচরা যন্ত্রাংশে বোঝাই একটি চীন-ইউরোপ ট্রেন ধীরে ধীরে ছুংছিংয়ের ‘থুয়ান চিয়ে’ স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। এটির গন্ত্যব জার্মানির ডুইসবার্গ। ১১ বছর আগে, প্রথম চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেন, এখান থেকে রওনা হয়েছিল। পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত, চীন-ইউরোপ রুটে ৫০ হাজারটিরও বেশি ট্রেন চলাচল করেছে এবং এগুলো ৪৫ লাখ ৫০ হাজার বাক্সের ২৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ইউরোপের ২৩টি দেশের ১৮০টি শহরে পরিবহন করেছে।
জার্মানির ডুইসবার্গ বিগত বছর ধরেই চীন ও ইউরোপের মধ্যে মালবাহী ট্রেন চলাচলের সাক্ষী হয়ে আছে। ডিআইটি স্টেশনটি ডুইসবার্গে চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেনের টার্মিনাল স্টেশন। এই স্টেশনের আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাড়ানোবিষয়ক প্রধান এমিলি এক্সলেবেন সাংবাদিকদের বলেন:
“১১ বছর আগে ছুংছিং থেকে প্রথম চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেনটি ছাড়ার পর থেকে এই পর্যন্ত বহু চীনা শহর এই লাইনে সংযুক্ত হয়েছে। এসব শহরের মধ্যে রয়েছে উহান, ই উ, সি আন, তা লিয়ান, সিয়া মেন এবং শাংহাই। এ বছর ডুইসবার্গ আরও নতুন রুট খুলবে এবং সমন্বয় অবকাঠামো নির্মাণের গতি বাড়ানো অব্যাহত রাখবে।’
চায়না রেলওয়ে এক্সপ্রেস এই রুট বরাবর দেশগুলোতে ক্রমবর্ধমান হারে উচ্চমানের চীনা পণ্য পরিবহন করছে। পাশাপাশি এটি স্থানীয় লোকদের জন্য হাজার হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এখানে অনেক নতুন শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্র এবং শিল্প পার্ক গড়ে উঠেছে। চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেন চালু হবার কারণে জার্মানির ডুইসবার্গ বন্দরে শত শত কোম্পানি গড়ে উঠেছে। এতে ২০ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় চায়না রেলওয়ে এক্সপ্রেস নতুন ‘পোস্টম্যান’ হয়ে উঠেছে, আন্তর্জাতিক মেইল বিতরণের জন্য একটি নতুন চ্যানেল খুলেছে। বিশেষ করে, কোভিড-১৯ মহামারীর এই সময়, বিশ্বব্যাপী শিপিং এবং বিমান পরিবহনব্যবস্থা যখন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, তখন চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেনের আন্তর্জাতিক মেইল পরিষেবা বিশ্বব্যাপী এ খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ছুংছিংকে উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক। মহামারী শুরু হওয়ার পরে, ছুংছিং দেশে আন্তর্জাতিক পার্সেল ডেলিভারির জন্য একটি জরুরি গন্তব্য হয়ে ওঠে। ২০২১ সালে, চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেন ৪২ লাখেরও বেশি পার্সেল বহন করেছে, যার মূল্য ২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। ছুংছিং পোস্ট কোম্পানির আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক কেন্দ্রের ম্যানেজার লুং ইয়ান বলেন:
‘ছুংছিং হলো প্রথম শহর যা চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেনের প্রথম গন্তব্য। মহামারী শুরুর পর থেকে আমাদের ৬০ শতাংশ দায়িত্ব বহন করেছে এই শহর।’
২০২০ সাল থেকেই চীন-ইউরোপ মালবাহী রেলপথে সর্বদা একটি নিরাপদ ও মসৃণ প্রবাহ বজায় আছে। এটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমুদ্র ও আকাশপথের বিকল্প হিসেবে কাজ করেছে। একটি কৌশলগত চ্যানেল হিসাবেও এর ভূমিকা অনন্য। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)