চীন-মার্কিন ভিডিও সংলাপে কি ইঙ্গিত দেয়?
2022-03-21 11:04:24

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ভিডিও সংলাপ করেছেন। গত ১৬ নভেম্বরের পর চীন ও মার্কিন শীর্ষনেতার দ্বিতীয়বার ভিডিও সংলাপ করলেন। এ আলোচনা কি কি ইঙ্গিত দেয়? আজ এই বিষয়ে কথা বলবো।

প্রথমত, চীনের সঙ্গে সংলাপ ও বিনিময়ের চাহিদা বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।

ভিডিও সংলাপে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করছে। একদিকে করোনাভাইরাসের মহামারি প্রতিরোধ করা, অন্যদিকে অর্থনীতি ও জনগণের জীবিকা নিশ্চিত করার কাজ। বড় দেশের নেতা হিসেবে তিনি ও বাইডেনের উচিত সঠিকভাবে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সঠিক সমাধান করা। অন্যদিকে বিশ্বের স্থিতিশীলতা ও বিশ্ববাসীদের জীবনের কথা বিবেচনা করা।

আসলে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলো একতরফা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন সমস্যা আরো জটিল হয়েছে। বিশ্বের অর্থনীতি, জ্বালানি, খাদ্য ও শিল্প চেইনের গুরুতর সংকট দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপের চাহিদাও বেড়েছে। এবারের শীর্ষ সংলাপে নানা প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নিঃসন্দেহে, বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপ ও সহযোগিতা জোরদার করা দু’দেশের জনস্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সমাজের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

 

দ্বিতীয়ত: মতভেদ নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

সংলাপে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধে জড়াবে না, চীনের ব্যবস্থা পরবির্তন করবে না, চীনের বিরোধিতা করবে না, স্বাধীন তাইওয়ানকে সমর্থন দেবে না। গত বছরের ভিডিও সংলাপেও তিনি এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এসব প্রতিশ্রুতিকে খুব গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরো বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু কেন? প্রত্যক্ষ কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্র দু’দেশের নেতাদের মতৈক্য বাস্তবায়ন করেনি। কিছু মার্কিন রাজনীতিক চীনের কেন্দ্রীয় স্বার্থে বার বার ঝামেলা সৃষ্টি করেছে এবং চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছে।

 

যা একটি দায়িত্বশীল দেশের সঠিক আচরণ নয়। আসলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ভিন্ন ব্যবস্থা, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন উন্নয়ন অবস্থার দু’টি বড় দেশ হিসেবে, দু’দেশের মতভেদ থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, মতভেদ নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

এখন যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ পর্যবেক্ষণ করার সময়, যুক্তরাষ্ট্রের কেমন আন্তরিকতা আছে, তা দেখতে হবে।

 

তৃতীয়ত: চীন সবসময় শান্তির জন্য চেষ্টা করে

ইউক্রেন ইস্যুটি ছিল এবার চীন-মার্কিন শীর্ষ সংলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আন্তর্জাতিক সমাজও এর ওপর নজর রাখছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, সংশ্লিষ্ট ঘটনা আবারও প্রমাণ করেছে যে, দেশের সম্পর্ক উন্নয়নকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া ঠিক না। সংঘর্ষ কারও স্বার্থের জন্য ভালো নয়। শান্তি ও নিরাপত্তা হলো আন্তর্জাতিক সমাজের অভিন্ন সম্পদ।

চীন ইউক্রেন সমস্যার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত দেশ নয়; তবে চীন সবসময় দায়িত্বশীল বড় দেশের মনোভাব নিয়ে শান্তি আলোচনার জন্য গঠনমূলক ভূমিকা পালন করছে।

একটি দেশের নিরাপত্তা কি অন্য দেশের ক্ষতির ভিত্তিতে পাওয়া যায়? আঞ্চলিক নিরাপত্তা কি সামরিক গোষ্ঠীকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যায়? ইউক্রেন সংকটের পিছনের কারণ ভালোভাবে বিবেচনা করা উচিত।

বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো সমস্যা সমাধানের সঠিক উপায় খুঁজে বের করা। অন্য পক্ষগুলো এতে সহায়তা দিতে পারে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, বিভিন্ন পক্ষের উচিত যৌথভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন সংলাপের সমর্থন করা। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর উচিত রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করা, যাতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের নিরাপত্তা উদ্বেগ দূর করা যায়।

প্রেসিডেন্ট সি সবসময় শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য চেষ্টা করেছেন, চীন অব্যাহতভাবে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে।