দু্ই অধিবেশনে উল্লেখিত নতুন উন্নয়নের দিকগুলো
2022-03-18 13:00:07

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং সরকারি কার্যবিবরণী পেশ করেন। তিনি বিগত বছরের সরকারি কাজের সারাংশ উল্লেখ এবং ২০২২ সালের চীন সরকারের প্রধান লক্ষ্যসমূহ ঘোষণা করেন। এতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে- এ বছর স্থিতিশীল বৃদ্ধিকে আরও গুরুত্ব দেওয়া হবে।

 

সরকারি কার্যবিবরণীতে প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং জানান, গত বছর ছিল চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও দেশের জন্য একটি মাইলফলক অতিক্রমের সময়। চীন সময়মত দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে এবং যথাসময়ে সার্বিক সচ্ছল সমাজ গঠনের লক্ষ্য পূরণ করেছে। এ বছর চীনে বিদেশি পুঁজির ব্যবহার করা হবে এবং চীনের উন্মুক্ত বৃহত্ বাজার সারা বিশ্বের প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে আরও বড় সুযোগ দেবে।

 

সরকারি কার্যবিবরণীতে বলা হয়, গত বছর চীনের জিডিপির পরিমাণ ছিল ১১৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান; প্রবৃদ্ধির হার ৮.১ শতাংশ। চলতি বছর জিডিপি উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ৫.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে দেশজুড়ে ১.১ কোটিরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, প্রাকৃতিক পরিবেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।

 

সরকারি কার্যবিবরণীতে তাইওয়ান প্রণালীর দু’তীর সম্পর্কে বলা হয় যে, চীন দৃঢ়ভাবে ‘স্বাধীন তাইওয়ান’ দাবির বিরোধিতা করে এবং তাইওয়ানে বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে। তাইওয়ান-সংশ্লিষ্ট নীতিতে অবিচল থাকতে হবে, নতুন যুগে তাইওয়ান সমস্যা সমাধানের মৌলিক কৌশল চর্চা করবে সিপিসি, এক-চীন নীতি এবং ‘১৯৯২ সালে পৌঁছানো সমঝোতা’ মেনে চলা, প্রণালীর দু’তীরের সম্পর্কের শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন এবং দেশের ঐক্য জোরদার করা হবে।

 

সরকারি কার্যবিবরণীতে বলা হয়, তাইওয়ান প্রণালীর দু’তীরের জনগণের উচিত যৌথভাবে জাতীয় পুনরুত্থানের মহান লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করা।

 

কার্যবিবরণীতে বলা হয়, নতুন সম্মিলিত কর সমর্থন নীতি

 কার্যকর করা হবে। ফলে ছোট ও ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানের করযোগ্য আয়ের ১ থেকে ৩ মিলিয়ন ইউয়ান অংশের এন্টারপ্রাইজের আয়কর অর্ধেক আদায় করা হবে। সেই সঙ্গে ভ্যাট থেকেও কর ফেরত নীতি বাস্তবায়িত এবং প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবন উত্সাহ মাত্রা বাড়ানো হবে।

 

এ ছাড়া, বাসিন্দাদের চিকিত্সা বীমা এবং মৌলিক জনস্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যয়ের মাথাপিছু সরকারি ভর্তুকি যথাক্রমে ৩০ ইউয়ান ও ৫ ইউয়ান বাড়ানো হবে।

 

একশ বিলিয়ন ইউয়ান বেকারত্বের বীমা তহবিল গঠন করা হবে। নতুন জ্বালানিশক্তির গাড়ি, গ্রামাঞ্চলে স্মার্ট হোম যন্ত্রপাতি এবং পুরনো হোম অ্যাপ্লায়েন্সে বিনিময়ে উত্সাহ দেওয়া হবে।

 

কার্যবিবরণীতে বলা হয়, বিদেশি বিনিয়োগে উত্সাহমূলক কাজ বাড়ানো হবে, মধ্য-উচ্চ পর্যায়ের উত্পাদন, গবেষণা ও আধুনিক সেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং মধ্য-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সমর্থন দেওয়া হবে। অবাধ বাণিজ্যের পরীক্ষামূলক অঞ্চল এবং হাইনান অবাধ বাণিজ্য বন্দর নির্মাণের কাজ দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নেওয়া হবে। পাশাপাশি, আঞ্চলিক সংস্কার ও উদ্ভাবন এগিয়ে নেওয়া হবে।

 

প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছাড়াও, সরকারি কার্যবিবরণীতে, চলতি বছর চীনের প্রধান প্রত্যাশিত লক্ষ্যগুলির মধ্যে রয়েছে: শহর ও গ্রামাঞ্চলে ১১ মিলিয়নেরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং শহর ও গ্রামাঞ্চলে বেকারত্বের হার সারা বছর ৫.৫ শতাংশের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা; সিপিআই প্রায় ৩ শতাংশ বাড়বে; শস্য উত্পাদনের পরিমাণ প্রায় ০.৭ ট্রিলিয়ন কেজির বেশি হবে ইত্যাদি। কর্মসংস্থান স্থিতিশীল করা, মানুষের জীবিকা রক্ষা করা এবং ঝুঁকি রোধ করা- ‘স্থিতিশীল বৃদ্ধির’ মূল ক্ষেত্রগুলিকে প্রত্যাশিত লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

 

উন্মুক্ত চীনের বড় বাজার চীনে আরও বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে, এবং সারা বিশ্বের কোম্পানিগুলিকে চীনে উন্নয়নের সুযোগও দেবে। চীন আরও দেশের সাথে সহযোগিতায় উভয়ের জয় এবং বহু পক্ষের জয় নিশ্চিত করা হবে।


সম্প্রতি সিপিপিসিসির জাতীয় কমিটির সদস্যরা সিএমজির সাংবাদিকদের জানান, চীনা সংস্কৃতির উদ্ভাবনী বৈশিষ্ট্য বিশ্বকে আকৃষ্ট করছে। 

 

ব্লাইন্ড বক্স হচ্ছে হালের একটি জনপ্রিয় বাণিজ্য পদ্ধতি। তার অর্থ হচ্ছে কেনার আগে বক্সের ভেতরে কি পণ্য রয়েছে, তা ক্রেতা জানতে পারেন না। হ্য নান প্রদেশের যাদুঘর সম্প্রতি ‘প্রত্নতাত্বিক ব্লাইনড বক্স’ নামক একটি নতুন পণ্য বাজারে এনেছে। দেশি ও বিদেশি তরুণ-তরুনীরা এটি অনেক পছন্দ করছেন। 

 

সিপিপিসিসির জাতীয় কমিটির সদস্য মা শিও লিন এ সম্পর্কে বলেন, “হ্যা নান হচ্ছে প্রত্নতত্বের দিক থেকে সমৃদ্ধ প্রদেশ। ব্লাইন্ড বক্স হচ্ছে হালের একটি জনপ্রিয় ধারনা। এজন্য আমরা এ দুটিকে সংযুক্ত করেছি। এই পণ্য সবাই অনেক পছন্দ করছে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা অনেক বেশি কিনছে এই পণ্য।”     

চীনা ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি অনেক ব্যাপক, গভীর এবং তার ইতিহাসও অনেক পুরোনো। সিপিপিসিসির জাতীয় কমিটির সদস্য ফান লু সেং জানান, চীনা ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি বরাবরই বিশ্বকে প্রভাবিত করে আসছে। তিনি বলেন, “সিল্ক রোড়ের মাধ্যমে চীনের চীনা মাটির বাসনকোসন, রেশম, খাবার, চা, এবং চীনা ঐতিহ্যিক ওষুধসহ নানা রকম চীনা সংস্কৃতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনা সংস্কৃতি প্রবীণ থেকে নবীন প্রজন্মে চলে আসছে। তা কখনো বন্ধ হয়নি। চীনা ঐতিহ্যিক চিকিতসা পদ্ধতি ও ওষুধের উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। মহামারী প্রতিরোধে তা অনেক ভাল ভূমিকা পালন করে আসছে।”

 

সিপিপিসিসির জাতীয় কমিটির সদস্য মা সিও লিন জানান, নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ সংস্কৃতির আদানপ্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনি বলেন, “জাদুঘরের প্রদর্শনীসহ নানা খাতে নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে শ্রোতারা আরো সুষ্ঠুভাবে সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারেন। পাশাপাশি, আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি।” 

সিপিপিসিসির জাতীয় কমিটির সদস্য ফান লু সেং বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে সাংস্কৃতিক বিনিময় যুগের বৈশিষ্ট্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত। নতুন যুগে চীনা সংস্কৃতির প্রাণশক্তি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা উচিত।