মার্চ ১৮: চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে চীনের অ-আর্থিক খাতে আকৃষ্ট বৈদেশিক পুঁজির পরিমাণ ছিল ২৪৩৭০ কোটি ইউয়ান, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায ৩৭.৯ শতাংশ বেশি। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন বৈদেশিক পুঁজি আকৃষ্ট করছে। আর এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের মহামারী পরিস্থিতির উত্থান-পতনসহ বিভিন্ন অনিশ্চিত উপাদান থাকা সত্ত্বেও চীন তার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে পেরেছে। বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠানকে আকর্ষণ করার শক্তি চীনের কমে যায়নি।
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ নাগাদ বিশ্বের ৫ শ সবচেয়ে শক্তিশালী হাইটেক প্রতিষ্ঠানের একটি হানিওয়েল এবং চীনের ওরিয়েন্টাল এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে ঘোষণা করে যে, চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের মাও মিং শহরে টেকসই বিমান-জ্বালানি উত্পাদনের ঘাঁটি নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে ব্রাজিলের বিমান শিল্প যাত্রী পরিবহনকে মাল পরিবহনে পরিণত করার প্রকল্প চালু করেছে। এর এটি মূল কারণ হল চীনের সমৃদ্ধ উন্নয়নের ই-কমার্স ব্যবসা।
পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে, ইউয়ানের হিসাবে, চীনের ব্যবহৃত বৈদেশিক পুঁজির প্রবৃদ্ধি ৩৭.৯ শতাংশ। এর মধ্যে পরিষেবা খাতে ব্যবহৃত বৈদেশিক পুঁজির পরিমাণ আগের বছরের এইক সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে। হাইটেক প্রযুক্তি শিল্পে ব্যবহৃত বৈদেশিক পুঁজির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৩.৮ শতাংশ। চীনের সমাজবিজ্ঞান একাডেমির বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতি গবেষণা বিভাগের গবেষক কাও লিং ইয়ুন বলেন,
“পরিষেবা খাতে ব্যবহৃত বৈদেশিক পুঁজি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪ শতাংশ। এর প্রধান কারণ হলো, চীনে বৈদেশিক পুঁজি প্রবেশের নেতিবাচক তালিকা কমে গেছে। বিশেষ করে চীন পরিষেবা বাণিজ্যে প্রথম নেতিবাচক তালিকা প্রকাশ করেছে। আরও উল্লেখ করতে হয় যে, চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ মহামারীর প্রাদুর্ভাবে পর কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও নিয়েছে। যেমন, বৈদেশিক প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক পরিচালনা প্রভাবিত হয়, এমন নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় কর কমানো হয়েছে, প্রকল্পের অনুমোদন-প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করা হয়েছে, বৈদেশিক প্রতিষ্ঠানের কাজ সহজতর করা হয়েছে।’
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কাও ফেং গতকাল (বৃহস্পতিবার) বেইজিংয়ে এক নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, বিভিন্ন অনিশ্চিত উপাদানের প্রভাব থাকলেও, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে চীন বৈদেশিক পুঁজি আকর্ষণ করেছে। তা থেকে প্রমাণিত হয় যে, চীনের অর্থনীতির দীর্ঘস্থায়ী সুষ্ঠু উন্নয়ন প্রবণতায় পরিবর্তন ঘটেনি। তিনি বলেন,
‘চলতি বছর চীনের অর্থনীতি টেকসইভাবে পুনরুদ্ধার হচ্ছে, উত্পাদনের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে, ভোগ স্থিতিশীলভাবে বাড়ছে, যা বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োগকারীদের আস্থাও বাড়িয়েছে। এ্যামচাম চায়না, এএইচকে গ্রেটার চায়না-র প্রকাশিত জরিপ রিপোর্ট অনুযায়ী, ৮৩ শতাংশ মার্কিন পুঁজি প্রতিষ্ঠান এবং ৯৬ শতাংশ জার্মানি পুঁজি প্রতিষ্ঠান চীনের বাজারের ওপর আস্থাবান। ৬৬ শতাংশ মার্কিন পুঁজি প্রতিষ্ঠান এবং ৭১ শতাংশ জার্মানি প্রতিষ্ঠান চীনে বরাদ্দ বাড়াবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানির চীনে বিনিয়োগ যথাক্রমে ৩৬.৪ শতাংশ ও ১০৯.১ শতাংশ বেড়েছে। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলো এবং আসিয়ানের পুঁজি বিনিয়োগ যথাক্রমে ২৭.৮ শতাংশ ও ২৫.৫ শতাংশ বেড়েছে।
গত বছর থেকে চীনের বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োগকে স্থিতিশীল করার ধারাবাহিক নীতি চালু হয়েছে, যা ভালো ফলাফল এনে দিয়েছে। বৈদেশিক পুঁজি প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব বিষয়ের ওপর বেশি গুরুতারোপ করে, যেমন দেশ-বিদেশের প্রতিষ্ঠানের সমানভাবে সরকারের ক্রয়ে অংশগ্রহণ, বৈদেশিক পুঁজির গবেষণাকেন্দ্র চীনের বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন আমদানি কর সুবিধা উপভোগ করা, বিদেশিদের ব্যক্তিগত আয়কর কমানোর সুবিধা নীতি ইত্যাদি, সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিশেষ করে ধারাবাহিক নীতি ও ব্যবস্থা নিয়েছে, গাড়ি উত্পাদনসহ বিভিন্ন খাতে বৈদেশিক পুঁজির শেয়ার হোল্ডিং-এর সীমাবদ্ধতা কমিয়ে দিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কাও ফেং জোর দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে চীন উচ্চ মানের উন্মুক্তকরণ আরও সম্প্রসারণ করবে, বিভিন্ন দেশের পুঁজি বিনিয়োগকারীদের চীনে প্রতিষ্ঠান স্থাপনকে স্বাগত জানাবে। চীন অব্যাহতভাবে বিভিন্ন দেশের পুঁজি বিনিয়োগকারীদের জন্য আরো ভালো সেবা প্রদানের চেষ্টা করবে এবং আন্তর্জাতিক মানের ব্যবসা-পরিবেশ সৃষ্টি করবে। (শুয়েই/আলিম/জিনিয়া)