দেহঘড়ি পর্ব-৬১
2022-03-18 19:18:24

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে স্বাস্থ্যখাতের একটি প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য বুলেটিন, সাক্ষাৎকার-ভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচলিত ভুল ধারণা নিয়ে আলোচনা ‘ভুলের ভুবনে বাস’।

#প্রতিবেদন

স্বাস্থ্যখাত ঢেলে সাজানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের


করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনার মহামারির দুই বছরের বেশি সময় পার করছে দেশটি। এ সময়ে করোনা নিয়ন্ত্রণসহ টিকাদানে সফলতা পেলেও সংকট ছিলো ব্যবস্থাপনায়।

 সম্প্রতি “কোভিড-১৯: প্রথম দুই বছর ও সামনের দিনগুলো” শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। অদূর ভবিষ্যতে মহামারি মোকাবিলায় আগের ভুল থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার আলোকে স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে করণীয় বিষয়গুলোর কথা তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘করোনা মহামারির মতো এতো বড় যুদ্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আরও সম্পৃক্ত করার দরকার ছিল। স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবস্থাগুলো নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের না দিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের হাতে দেওয়া হয়েছে।এতে করে কোভিডে আক্রান্তরা সমাজ থেকে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।

সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন বলেন, যে দেশের হেলথ কাভারেজ যত ভাল, তারা ততটাই উন্নত।

তার মতে, গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিক কম থাকায় শহরে সংক্রমণ বেশি ছড়িয়েছে। অভি/রহমান

 

#বুলেটিন

টানা তৃতীয় দিন করোনায় মৃত্যুশূন্য বাংলাদেশ

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে গেল তিন দিন কোনও মৃত্যু হয় নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা পরিস্থিতি সংক্রান্ত নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে মঙ্গল ও বুধবারও করোনায় মৃত্যুশূন্য ছিল দেশ। তবে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত গেল ২৪ ঘন্টায় এ ভাইরাসে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২৩৩ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৯ লাখ ৫০ হাজার ৩৫৭-এ। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বিশেষ টিকা ক্যাম্পেইন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে শুরু হয়েছে বিশেষ টিকাদান কার্যক্রম, চলবে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত। এ কার্যক্রমের আওতায় সব স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজের টিকা দেওয়া হচ্ছে।

এই বিশেষ ক্যাম্পেইনের আওতায় সারাদেশে তিন কোটির বেশিই মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ১২ বছরের বেশি যেসব ব্যক্তির প্রথম টিকা নেওয়ার ২৮ দিন অতিবাহিত হয়েছে তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে।

যেসব ব্যক্তি প্রথম ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন তাদের দুই মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রায় শূণ্যের কোটায় ডেঙ্গু রোগী

দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি শূন্যের কোটায় নেমেছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের হাসপাতালগুলোতে নতুন কোনও ডেঙ্গু রোগী ভর্তির তথ্য পাওয়া যায়নি।

বর্তমানে সারাদেশে মাত্র তিনজন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনজনই ঢাকার বাইরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বৃহস্পতিবার সারাদেশের সবশেষ ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অভি/রহমান

## আপনার ডাক্তার

এ পর্বে আজ আমরা আলোচনা করেছি নবজাতকদের রোগব্যাধি নিয়ে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নবজাতকের মৃত্যু হয় যেসব দেশে তার একটি বাংলাদেশ। যদিও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুহার কমানোর বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জন করে উন্নয়ন আইকন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ। তারপরেও দেশে নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। প্রতিবছর জন্মের পর মারা যায় ৬২ হাজার নবজাতক। এসব শিশুর মৃত্যু হয় জীবনের প্রথম মাসে এবং অর্ধেকই মারা যায় পৃথিবীতে আসার দিনই। জন্মের পরপরই নবজাতকের বেশ কিছু অসুখ বেশি হয়। ছোট শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বলে কিছু অসুখে তারা বেশি আক্রান্ত হয়। অনেক অসুখ আবার অল্প যত্নে ভালো হয়ে যায়।নবজাতকের রোগব্যাধি নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন ডাক্তার নাজমুস সাকিব। তিনি কর্মরত চীনের বেইজিংয়ে অবস্থিত পিকিং ইউনিভার্সিটি ফার্স্ট হসপিটালে, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুর রহমান অভি।

 

#ভুলের_ভুবনে_বাস

সেলফোনে ব্যবহারে ক্যান্সার হয় না

ক্যান্সার বা কর্কট রোগ মৃত্যুর একটি বড় কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের কারণে ১ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের আনুমানিক ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ তাদের জীবদ্দশায় কোনও না কোনও পর্যায়ে ক্যান্সার পরীক্ষা করায়। ক্যান্সারের অর্থ বেশ বিস্তৃত। শরীরের যে কোনও অংশকে প্রভাবিত করতে পারে এমন সব রোগের একটি সাধারণ নাম ক্যান্সার। এই বৈচিত্রের কারণে ক্যান্সার নিয়ে রয়েছে নানা বিভ্রান্তি ও ভুল ধারণা। আজ আমরা চেষ্টা করবো এমন কতগুলো ভুল ধারণা ভাঙতে।

ক্যান্সার মানে কি মৃত্যু অনিবার্য?

ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়। উপরে যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে, তা সত্ত্বেও একথা এখন স্বীকৃত যে ক্যান্সার হলেই জীবনের সব আশা শেষ হয়ে যায় না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সার নিরাময়ের হারও বেড়ে চলেছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসের হিসাবে দেখা যায়, প্রায় ১ কোটি ৬৯ লাখ ক্যান্সার থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। যুক্তরাজ্যে ক্যান্সার থেকে বেঁচে থাকার হার গত ৪০ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। তবে এটাও লক্ষণীয় যে, বেঁচে থাকার হার নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরনের উপর। যেমন ধরুন, যুক্তরাজ্যে টেস্টিকুলার ক্যান্সারে বেঁচে থাকার হার ৯৮ শতাংশ, যেখানে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার থেকে বেঁচে থাকার হার মাত্র ১ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, ১৯৯০’র দশক থেকে দেশটিতে ক্যান্সারে মৃত্যুর হার ক্রমশ কমেছে। এখন স্তন, প্রোস্টেট ও থাইরয়েড ক্যান্সারের মতো কিছু ক্যান্সারে ৫ বছর বেঁচে থাকার হার ৯০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি। সকল ক্যান্সারে ৫ বছর বেঁচে থাকার হার বর্তমানে প্রায় ৬৭ শতাংশ।

সামগ্রিকভাবে, ক্যান্সারে মৃত্যুর হার ধীরে ধীরে কমছে, যদিও কিছু ক্যান্সারে বেঁচে থাকার হার অন্যদের তুলনায় বাড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যান্সার পরিস্থিতি নিয়ে ২০২০ সালে প্রকাশিত এক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ক্যান্সারে মৃত্যুর হার গড়ে প্রতি বছর ১ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কমেছে।

ক্যান্সার কি সংক্রামক?

কারও কারও মধ্যে এই ভুল ধারণা রয়েছে যে, ক্যান্সার একটি সংক্রামক রোগ। বাস্তবতা হলো ক্যান্সার একদম ছোঁয়াচে নয়; ক্যান্সারে আক্রান্ত কেউ এটি অন্যদের মধ্যে ছড়াতে পারে না। তবে এটা ঠিক হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) এবং হেপাটাইটিস বি ও সি-সহ কিছু যৌনবাহিত রোগ জরায়ু ও লিভারে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে একটি সংক্রামক এজেন্ট ক্যান্সার সৃষ্টি করে, তবে ক্যান্সার নিজেই সংক্রামক নয়।


সেলফোন কি ক্যান্সারের কারণ?

 সেল ফোন ক্যান্সার সৃষ্টি করে আজ পর্যন্ত এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে ভুল ধারণার একটি কারণ হলো এই ডিভাইসগুলো রেডিওফ্রিকোয়েন্সি বিকিরণ করে, যা অ-আয়নাইজিং বিকিরণের একটি রূপ। শরীর এই বিকিরণ শোষণ করে। বিজ্ঞানীরা জানেন, এক্স-রের মতো আয়নাইজিং রেডিয়েশনের সংস্পর্শে এলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। তবে রেডিওফ্রিকোয়েন্সি বিকিরণ একটি নন-আয়নাইজিং বিকিরণ, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় না। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এক নিবন্ধে বলেছে, “যদিও অনেক গবেষণায় রাডার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, সেলফোন ও অন্যান্য উৎস থেকে নন-আয়নাইজিং বিকিরণের সম্ভাব্য স্বাস্থ্যগত প্রভাবগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে, তবে বর্তমানে এমন কোনও সঙ্গতিপূর্ণ প্রমাণ নেই যে, নন-আয়নাইজিং বিকিরণ মানুষের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।"

বৈদ্যুতিক লাইন কি ক্যান্সার সৃষ্টি করে?

বৈদ্যুতিক লাইনের কারণে ক্যান্সার হয় - এটাও অতি প্রচলিত ভুল ধারণা। বৈদ্যুতিক লাইন থেকে উত্পন্ন অত্যন্ত কম ফ্রিকোয়েন্সি বা ইএলএফ’র চৌম্বক ক্ষেত্রগুলো অ-আয়নাইজিং এবং তাই সেটা ক্যান্সার সৃষ্টি করে না। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি এক নিবন্ধে লিখেছে, "বেশ কয়েকটি বড় গবেষণায় ইঁদুরের উপর ইএলএফ’র চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের সম্ভাব্য প্রভাবগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে। সাধারণত বাড়িতে থাকলে চৌম্বক ক্ষেত্রের যতটা সংস্পর্শে আসতে হয়, গবেষণাগুলোতে তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের কাছে রাখা হয় ইঁদুরগুলোক। ফলাফলে দেখা যায়, ইঁদুরগুলোর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়েনি। ইএলএফ বিকিরণের সংস্পর্শে থাকা প্রাণীগুলোর মধ্যে কয়েক ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি আসলে কম ছিল।"

তবে, ক্যান্সার সোসাইটি এটাও জানিয়েছে যে, কিছু গবেষণায় বিদ্যুৎ লাইনের কাছাকাছি থাকা শিশুদের লিউকেমিয়ার ঝুঁকি খানিকটা বেশি দেখা গেছে। যদিও এর কারণ স্পষ্ট নয়।

যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত হেমাটোলজিস্ট এবং ইস্ট সাসেক্স হেলথকেয়ার ট্রাস্টের প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জোয়েল নিউম্যান বলেন, "আমাদের কাছে কোনও বাস্তব প্রমাণ নেই যে, সেলফোন বা বৈদ্যুতিক লাইন ক্যান্সার সৃষ্টি করে। তবে ধূমপান ও অ্যালকোহল পানসহ এমন অনেক কিছু আমরা নিয়মিত করি যা আমাদেরকে অনেক বেশি ক্যান্সারের ঝুঁকিতে ফেলে।" - রহমান

 

 ‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।