১. চীনের অগ্রণী নারীরা
২. গণমাধ্যমে জেন্ডার সংবেদনশীল নীতিমালা প্রয়োজন: অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন
৩. মহাকাশ থেকে শুভেচ্ছা
৪.গান: ইয়াং মি
৫. সিনচিয়াংয়ের মানুষ সুখে আছেন
চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠান থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া।
চীনের অগ্রণী নারীরা
চীনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে তরান্বিত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছেন সর্বস্তরের চীনা নারীরা। দেশের জন্য বিশেষ গৌরবোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যারা স্থাপন করেছেন তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এ শুভেচ্ছা জানানো হয়। চীনে গবেষণা, প্রযুক্তি, খেলাধুলা, চিকিৎসা ও রাজনীতি থেকে শুরু করে সমাজের সব ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকা অপরিমেয় বলেও উল্লেখ করেন সি। বিস্তারিত রয়েছে প্রতিবেদনে।
বলা হয়ে থাকে, অদম্যসাহসী এবং কঠোর পরিশ্রমী চীনা নারীরা।চীনের সব জাতিগোষ্ঠীর জীবন মান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সেদেশের নারীরা অনন্য অনুপ্রেরণা। দেশকে এগিয়ে নিতে অসংখ্য নারী অসামান্য অবদান রেখেছেন।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এই গুণী নারীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। এসময় গত এক বছরে, চীনের সর্বস্তরের নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সি চিনপিং বলেন, ‘সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে, আমি সমস্ত নারী রাজনৈতিক উপদেষ্টা, দুই অধিবেশনে যোগদানকারী কর্মীদের এবং সব জাতিগোষ্ঠীসহ চীনের সর্বস্তরের নারীদের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানাচ্ছি। বর্তমান নতুন প্রজন্ম তাদের অদম্য সাহস ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাজে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে এবং তাদের কর্মের মাধ্যমে চীনা বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরছে।’
চীনা থিয়ানকং মহাকাশ স্টেশনে প্রবেশ করা প্রথম নারী মহাকাশচারী ওয়াং ইয়াফিং। যিনি ২০২১ এর অক্টোবরে, শেনচৌ-১৩ মিশনে অংশ নেন। দুই ক্রু সদস্যের সঙ্গে ওয়াং মহাকাশে একটি ছয় মাসের মিশন শেষ করছেন, যা কিনা যে কোনও চীনা মানব মিশনের দীর্ঘতম সময়কাল।
চীনের জাতীয় টেলিভিশন সিসিটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ওয়াং বলেছিলেন, ‘মানুষের স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া হলেও অবিরাম প্রচেষ্টায় তা অর্জন করা সম্ভব।’
মহাকাশের উচ্চতা থেকে পাহাড়ের সীমান্ত, কোথায় নেই নারীদের পথচলা। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের একটি পার্বত্য অঞ্চলে মেয়েদের প্রথম এবং একমাত্র বিনামূল্যের পাবলিক হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এবং অধ্যক্ষ চং কুইমেই।
যিনি দারিদ্র পীড়িত জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো দিতে প্রাণপন লড়েছেন। তিনি একজন সফল নারী। কারণ তার প্রচেষ্টায় এ অঞ্চলের অনেক মেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেদের ভাগ্যের গতি পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে।
চলতি বছরে AFC নারী এশিয়ান কাপ ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৩-২ গোলে পরাজিত করে, ১৬ বছর পর শিরোপা জিতেছে চীনের নারী ফুটবল দল। এর আগে গেল বছর অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্টে ভালো পারফর্ম করে সাফল্য নিশ্চিত করে তারা। শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে এই নারী ক্রীড়া বাহিনী।
এদিকে, তরুণ চীনা শুটার ইয়াং ছিয়ান গত গ্রীষ্মের টোকিও গেমসের প্রথম স্বর্ণপদক জয় করেন।
সম্প্রতি, চীনের ফ্রিস্টাইল স্কি তারকা কু আইলিং বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকে দুটি স্বর্ণপদক লুফে নেন। গবেষক, প্রযুক্তিবিদ, চিকিৎসক ছাড়াও সমাজে লাইমলাইট থেকে দূরে থাকা এমন অনেক নারী রয়েছেন যারা নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে অক্লান্ত পরিশ্রমের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
গণমাধ্যমে জেন্ডার সংবেদনশীল নীতিমালা প্রয়োজন
গণমাধ্যমে নারীর অধিকার, গণমাধ্যমে নারীর প্রক্ষেপণ এবং নারীর ইমেজ নারীর অধিকার অর্জনের অগ্রযাত্রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এ বিষয়ে আজ আমরা কথা বলবো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিনের সঙ্গে। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।
সাক্ষাৎকার
অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বাংলাদেশের গণমাধ্যমের কিছু চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে গণমাধ্যম পুরুষশাসিত এবং সেখানে নারীর সনাতনী ভূমিকাকেই বেশি তুলে ধরা হয়। নারীর পরিবর্তিত ভূমিকায় অনেক সময় নারীকে এক ধরনের ‘সুপার ওম্যানে’র ভূমিকায় দেখানো হয় যেখানে নারী বাইরের এবং ঘরের কাজে সমান পারদর্শী। এতে নারীর উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়। কারণ নারী তো সুপার ওম্যান নয়। আরেকটি বিষয় হলো মিডিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ। এখানেও রয়েছে বৈষম্য।
নারীর দেহিক সৌন্দর্য এখানে বেশি গণ্য হয় তার মেধা ও সৃজনশীলতার চেয়ে। নীতি নির্ধারণী স্তরে এবং ক্ষমতার পদে নারীর সুযোগ অনেক কম বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি মনে করেন, প্রতিটি মিডিয়া হাউজে জেন্ডার নীতিমালা এবং আচরণবিধি থাকাটা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ করা জন্য গণমাধ্যম শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তবে সেজন্য সবার আগে গণমাধ্যমের ভিতর থেকে জেন্ডার বৈষম্য বিলোপ করতে হবে।
সুপ্রিয় শ্রোতা, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই।
মহাকাশ থেকে শুভেচ্ছা
এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মহাকাশ থেকে নারীদের প্রতি শুভেচ্ছা জানান চীনের বিখ্যাত নারী নভোচারী ওয়াং ইয়াফিং। তিনি বিশ্বের নারীদের জন্য প্রেরণা জাগানো কিছু কথা বলেন ।
চীনের দ্বিতীয় নারী নভোচারী এবং চায়নিজ স্পেস স্টেশনের প্রথম নারী ওয়াং ইয়াফিং এক ভিডিও বার্তায় বিশ্বের নারীদের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে অসাধারণ কিছু কথা বলেছেন। ওয়াং বর্তমানে চীনের মহাকাশ স্টেশনে ছয় মাসের মিশনে রয়েছেন। তিনি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের অফিসের জন্য ভিডিও বার্তা রেকর্ড করে পাঠান।
এই বার্তায় ওয়াং বলেন, ‘আমি আশা করি যে মেয়েরা মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে তারা নক্ষত্রের সমুদ্রে যাওয়ার জন্য তাদের দৃষ্টিভঙ্গীকে ধরে রাখবে। আপনি যখন উপরে তাকাবেন তখন দেখবেন স্বপ্ন এরমধ্যেই আপনার হাতের নাগালে এসে গেছে।
ওয়াং আরো বলেন যে নারীরা সকলেই পুরুষ মহাকাশচারীদের মতো একই প্রশিক্ষণ এবং মূল্যায়ন উচ্চ মানের সাথে সম্পন্ন করতে পারে। নারীদের অনেক শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য পুরুষ মহাকাশচারীদের পরিপূরক হয়ে মহাকাশে একটি সুবিধার ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি বলেন, "আমি প্রতিটি নারীকে তার নিঃস্বার্থ উৎসর্গের জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমি চাই যে প্রতিটি নারী আমাদের নিজের তারাময় আকাশে আমাদের পছন্দের জীবন এবং ক্যারিয়ারের জন্য উজ্জ্বল নক্ষত্র বেছে নেবে।"
ওয়াং এবং অন্য দুই মহাকাশচারী শেনচৌ ১৩ স্পেসশিপে গত বছর মহাকাশে যান। তারা ১৬ অক্টোবর, ২০২১-এ স্পেস স্টেশনে প্রবেশ করেছিলেন এবং ছয় মাসের মহাকাশ মিশন শুরু করেন।
এই ত্রয়ী ১৩০ দিনেরও বেশি সময় ধরে কক্ষপথে রয়েছে। ওয়াং এমন একজন চীনা নারী মহাকাশচারী যিনি মহাকাশে সবচেয়ে বেশি দিন থাকার রেকর্ড স্থাপন করেছেন।
গান
সুপ্রিয় শ্রোতা, চীনের একজন বিখ্যাত অভিনেত্রী ও কণ্ঠশিল্পী ইয়াং মি। ১৯৮৬ সালে বেইজিংয়ে জন্ম নেওয়া এই শিল্পী সংগীত ও অভিনয় দুটির জন্যই দেশে বিদেশে খ্যাতি পেয়েছেন। চীনের মাইক্রোব্লগিং প্লাটফর্ম ওয়েইবোতে তার অনুসারীর সংখ্যা ১১০ মিলিয়নের বেশি।
এখন শুনবো ইয়াং মিয়ের কণ্ঠে একটি গান। গানটির শিরোনাম ‘আমার কাছে।
ক্যাপশন: শিল্পী ইয়াং মি
সিনচিয়াংয়ের মানুষ সুখে আছেন
চীনের উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের মানুষ সুখে আছে এবং সেখানে কোন বাধ্যতামূলক শ্রম নেই বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন সিনচিয়াংয়ের একজন আইন প্রণেতা উয়েরনিসা কাদিয়ের। বিস্তারিত শুনবো প্রতিবেদনে।
সিনচিয়াংয়ের একজন জনপ্রতিনিধি উয়েরনিসা কাদিয়ের। ২০০১ সালে গ্র্যাজুয়েশনের পর উয়েরনিসা তার হোম টাউনে ফিরে আসেন। তিনি কৃষি প্রযুক্তিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালান। তিনি আঙুর চাষে কৃষকদের সহায়তা করেন। ২০১৮ সালে তিনি ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের ডেপুটি নির্বাচিত হন।
তিনি বলেন তিনি কখনও তথাকথিত ‘বাধ্যতামূলক শ্রম’দেখেননি। তিনি বলেন, ‘আমাদের শ্রম বাজার উন্মুক্ত ও স্বাধীন। মানুষ যেখানে চায় সেখানে চাকরি খুঁজে নিতে পারে। বাধ্যতামূলক শ্রম কিভাবে সম্ভব? ‘
উয়েরনিসা তথাকথিত ‘জেনোসাইড’ এর পশ্চিমা অভিযোগকেও হাস্যকর বলে মনে করেন।
‘এটা শুনে আমার হাসি আসে। এটা সত্যি নয়। ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিনচিয়াংয়ের উইগুর জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। কেন? কারণ সিনচিয়াংয়ের মেডিকেল ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার দ্রুত উন্নতি হয়েছে। এখানে কিভাবে জেনোসাইড হবে?’
এই জনপ্রতিনিধি জানান, গত কয়েক দশকে সিনচিয়াংয়ের জীবন মানে অনেক উন্নতি হয়েছে। ১৯৮০ ও ৯০ এর দশকে কৃষকরা পুরনো আমলের ঘরবাড়িতে থাকতো। এখন তারা হিটিং সিস্টেম আছে এমন নতুন বাড়িতে বাস করে। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তি, দ্রুত উন্নয়ন ও ভালো জীবন চাই।’
তিনি জানান সিনচিয়াংয়ের জন্য নানা রকম জনবান্ধব নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। ফ্রি স্বাস্থ্যসেবাও রয়েছে। রয়েছে ফ্রি ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা। বর্তমানে সিনচিয়াংয়ের মানুষের সুখী জীবনের চিত্র এভাবেই তুলে ধরেন জনপ্রতিনিধি উয়েরনিসা কাদিয়ের।
সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা।
আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ ৯ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলার ওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.
আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা, উপস্থাপনা এবং অডিও সম্পাদনা : শান্তা মারিয়া
‘চীনের অগ্রণী নারীরা’ বিষয়ক প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
মহাকাশ থেকে শুভেচ্ছা এবং সিনচিয়াংয়ের মানুষ সুখে আছেন, প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া