মার্চ ১৭: রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ শুরুর পর থেকেই বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে খাদ্যের দাম রেকর্ড ভেঙেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি সংঘাত অব্যাহত থাকে বা তীব্রতর হয় তবে এটি বিশ্বের খাদ্য-সরবরাহ চেইনের ক্ষতি করবে এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য-সংকট সৃষ্টি করবে।
রাশিয়া বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গম উত্পাদক ও রপ্তানিকারক দেশ। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচারের তথ্য অনুসারে, ইউক্রেন ও রাশিয়া একসাথে বিশ্বের মোট চাহিদার প্রায় ৩০ শতাংশ গম রফতানি করে থাকে। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে বিরোধের কারণে সরবরাহ-চেইনের শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার ফলে বাজারে গমের সংকট দেখা দেবে। ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দামে তীব্র ওঠানামা শুরু হয়েছে।
ইউক্রেনীয় মেরিটাইম অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতে, সংঘাত শুরু হওয়ার পর ইউক্রেন তার অভ্যন্তরীণ বন্দরগুলি বন্ধ করে দিয়েছে। উপরন্তু, বসন্তকালীন ফসল রোপণের মরসুম ঘনিয়ে আসছে, এবং সংঘাতের ধারাবাহিকতা ইউক্রেনে ভুট্টার আবাদ অনেক কমিয়ে দেবে।
এদিকে, অভ্যন্তরীণ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য, ইউক্রেনীয় সরকার ৯ মার্চ ঘোষণা করেছে যে, এটি প্রধান কৃষি পণ্য যেমন গম এবং ওট, সেইসাথে ভুট্টা এবং বাকউইট রপ্তানি নিষিদ্ধ করবে। বহির্বিশ্ব চিন্তিত যে, এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ হ্রাস পাবে এবং এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের অনেক দেশে খাদ্য সংকট তৈরি হবে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা অনেক ব্যবসায়ীকে রুশ পণ্য কিনতে নিরুত্সাহিত করছে। ব্যাঙ্কগুলো রুশ পণ্যের বাণিজ্যে অর্থায়ন করতেও অনিচ্ছুক। রুশ কৃষিপণ্যের বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ এখন কঠিন।
শিকাগো-ভিত্তিক একটি কৃষি সংস্থা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ রাশিয়ার মূল পণ্যগুলোর জন্য বিশেষ সুবিধা বাতিল করেছে এবং রুশ পণ্যের ওর শুল্ক বর্তমানের ৩ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাশিয়ার কৃষি পরামর্শক সংস্থা সোভইকন রিসার্চ কয়েকদিন আগে বলেছে, সরবরাহ-চেইনে বাধার কারণে চলতি বছর রুশ গম রফতানি নাটকীয়ভাবে কমে যাবে।
বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। প্রধান ভোক্তা দেশগুলি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ক্রয় জোরদার করছে। মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার প্রধান আমদানিকারক দেশগুলো পণ্যের নতুন উত্স খুঁজছে এবং অনেক দেশ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।
লেবানন, মিসর এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ ইউক্রেনীয় গমের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে এবং লেবাননের আমদানিকৃত গমের অর্ধেকেরও বেশি ইউক্রেন সরবরাহ করে। স্থানীয় খাদ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে গত ১১ মার্চ লেবাননের সরকার। মিসরও গত সপ্তাহে গম ও আটা রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে।
এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানিতে কড়াকাড়ি করেছে। প্রতিবেশী দেশ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর ব্ল্যাক সি অঞ্চলের বুলগেরিয়া স্থানীয় শস্যের মজুদ বাড়াচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য দেশ গম, ভুট্টা এবং সয়াবিন আবাদের এলাকা বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এতে করে শেষ রক্ষা হবে বলে মনে হচ্ছে না। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)