মার্চ ১৭: ইয়াংসি নদী চীনা জাতির মাতৃনদী। এটি এশিয়ার দীর্ঘতম নদী। ইয়াংসি নদী অর্থনীতি এলাকার উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়নে চীন কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে এবং কী ধরনের অগ্রগতি অর্জন করেছে? আজকে এই বিষয় নিয়ে কথা বলবো।
ইয়াংসি নদীর মোহনায় তথা নান থুং এলাকায় ইয়াংসি নদীর বিশেষ মাছ ফিনলেস পোরপাস পাওয়া যায়। টানা দুই মাস ধরেই এখানে মাছের আনাগোনা দেখা যায়। এদিকে, নদীর তীরে বসন্তের ফুল ফুটেছে, বসন্তের আমেজ চোখে পড়ছে। ইয়াংসি নদীর তীরে ফিনলেস পোরপাসের দেখা ও বসন্তের ফুল উপভোগ করা ইতোমধ্যে স্থানীয় মানুষের সবচেয়ে প্রিয় কাজে পরিণত হয়েছে। অথচ, এই সেদিনও এটা ছিল দেশের বৃহত্তম গন্ধক-বিনিময়ের জায়গা; এখানকার সর্বত্র ছিল দূষিত পানি।
স্থানীয় বাসিন্দা চু পিন জানান, কয়েক বছর আগেও তারা নদীর তীরে থেকেও নদী দেখার সুযোগ পেতেন না। কারণ, তখন ইয়াংসি নদীর তীরে অনেক ছোট জাহাজঘাট ও কারখানা ছিল। নদী দেখা তাই ছিল কঠিন কাজ। ‘নদীর তীরে বাস করেও নদী দেখা যায় না; পানির কাছাকাছি থাকলেও, বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায় না’—অনেকটা এমন ছিল অতীতে ইয়াংসি নদীর তীরের সাধারণ মানুষের ধারণা।
২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি, ছুছিং শহরে আয়োজিত ইয়াংসি নদীর অর্থনৈতিক এলাকার উন্নয়ন আলোচনা-সভায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যৌথভাবে সংরক্ষণের কাজ করার প্রস্তাব দেন। তিনি তখন ইয়াংসি নদীর অর্থনৈতিক এলাকা উন্নয়নের জন্য নিয়ম ও নির্দেশনা দেন। প্রেসিডেন্ট সি বলেন, ‘আমরা ইয়াংসি নদীর কাছে ঋণগ্রস্ত। ইয়াংসি নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। দৃঢ় সংকল্প নিয়ে পরিবেশ উন্নয়ন করার সময় এসেছে। চীনা জাতির দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ বিবেচনা করে প্রাকৃতিক পরিবেশকে শীর্ষ স্থানে রাখতে হবে এবং সবুজ উন্নয়নের পথ বাছাই করতে হবে।’
এর পর থেকেই ইয়াংসি নদীসংশ্লিষ্ট প্রদেশ ও শহরগুলো নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধারকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে গ্রহণ করে। ইয়াংসি নদীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দশ বছরের জন্য মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। সি ছুয়ান, কুই চৌ ও ইয়ুন নান প্রদেশে প্রাকৃতিক ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যৌথভাবে ইয়াংসি নদীর উচ্চ অববাহিকার প্রকৃতি সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। মধ্য-অববাহিকার হু পেই প্রদেশের উ হান শহর ইয়াংসি নদীর পরিবেশ রক্ষায় শহরের দূষিত পানি যাতে ইয়াংসি নদীতে না-পড়ে তা নিশ্চিত করে। আর নিম্ন অববাহিকার শহরগুলো যৌথভাবে নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের কাজ করে, পরিসংখ্যান শেয়ার করে, যৌথভাবে চেষ্টা করে। এর ফলে ইয়াংসি নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশের আকাশ-পাতাল পরিবর্তন ঘটেছে।
২০২০ সালের ১২ নভেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ইয়াংসি নদী পরিদর্শন করেন এবং এ পরিবর্তনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ইয়াংসি নদী অর্থনৈতিক এলাকা নির্মাণের মূল লক্ষ্য ছিল পরিবেশ সংরক্ষণ করা, বড় উন্নয়ন করা নয়।
উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণ করা এবং সংরক্ষণের পাশাপাশি উন্নয়ন করা—এই নীতির ফলে ইয়াংসি নদী অববাহিকার বিভিন্ন স্থানে পরিবেশগত ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। সি ছুয়ানের থিয়ান ফু নতুন এলাকার ৭০ শতাংশ জায়গাকে প্রাকৃতিক জায়গা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জায়গায় কোনো দূষণ সৃষ্টিকারী কোম্পানির প্রবেশ নিষিদ্ধ।
নদীর মধ্য-অববাহিকায় চিয়াংসি, হু নান, হু পেই—এই তিনটি প্রদেশ অবকাঠামো, শিল্পের উদ্ভাবন এবং গণসেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে উন্নয়নের চেষ্টা চালায়। নিম্ন অববাহিকায় চিয়াংসু প্রদেশ নদীর তীরে এক কিলোমিটার আওতার সব রাসায়নিক শিল্প-প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়।
ইয়াংসি নদীর হাই মেন অংশে অতীতে অনেক রাসায়নিক শিল্প-প্রতিষ্ঠান ছিল। এখন জায়গাটি একটি হাইটেক শিল্পের উদ্যানে পরিণত হয়েছে। এতে দুই শতাধিক জৈব ওষুধ প্রতিষ্ঠান আছে। এখানে বিভিন্ন হাইটেক কর্মীও ছুটে আসেন, যা আগে কখনই কল্পনা করা যায়নি।
চীনে একটি কথা আছে: আমরা সবাই একই নদীর পানি পান করি। তাই আমরা যৌথভাবে ইয়াংসি নদীর সৌন্দর্য রক্ষা করি। একটি নদীর পানি পরিষ্কার হলে, বিভিন্ন শিল্প সমৃদ্ধ হতে পারে। এটা নতুন যুগে চীনের সবুজ উন্নয়নের চেতনার প্রতিফলন। (শুয়েই/আলিম/জিনিয়া)