চাং কুযাং বেই ‘Romance of the Three Kingdoms’ নামে টিভি নাটকের লুই বু’র চরিত্রে অভিনয় করেন এবং ‘Drawing Sword’ টিভি নাটকে ছু ইউন ফেই’র চরিত্রে অভিনয় করেন। নৌবাহিনীর একজন সদস্য থেকে অভিনেতা পর্যন্ত, তিনিই বিভিন্ন চরিত্রের চ্যালঞ্জ গ্রহণ করেছেন। ২০১৮ সালে তার ভিন্ন একটি নতুন পরিচয় তৈরি হয়। তিনি চীনের গণ-রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন বা সিপিপিসিসি’র সদস্য হন। এই পরিচয়কে তিনি অনেক গুরুত্ব দেন। প্রতি বছর তিনি মনোযোগ দিয়ে গবেষণা করেন এবং সক্রিয়ভাবে নিজের প্রস্তাব ও মতামত দেন।
চলতি বছরের দুই অধিবেশন চলাকালে তিনি আবার ‘তলোয়ার খুলে ফেলার’ চেতনা এবং মুভি ও টিভি শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষদের দায়িত্ব তুলে ধরেন। হয়তো এখানে অনেকে জানতে চাইবেন, ‘তলোয়ার খুলে ফেলার’ চেতনা মানে কি?
‘Drawing Sword’ টিভি নাটকে এমন একটি কথোপোকথন আছে। তা হলো ‘যখন সংকীর্ণ রাস্তায় দেখা হয়, তখন সাহসী পক্ষ জয়ী হয়! উজ্জ্বল তলোয়ার আমাদের সেনাবাহিনীর চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে! প্রতিবন্ধকতার সামনে ভয় দেখানো উচিত্ নয়, বরং সাহসের সাথে তা মোকাবিলা করা উচিত্। ব্যর্থতা ভয়ংকর নয়, সবচে ভয়ংকর বিষয় হলো- প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়ার সাহস না থাকা। শক্তিশালী শত্রুর সামনে দাঁড়ালেই তলোয়ার উন্মুক্ত করতে হবে।’
সিপিপিসিসি’র সদস্য হিসেবে চাং কুয়াং বেইয়ের ধারণায় ‘‘তলোয়ার খুলে ফেলা’ আত্মা মানে কি?তিনি বলেন,
‘তলোয়ারের খুলে ফেলা’ হল এক ধরনের জাতীয় চেতনা এবং এক ধরনের দেশপ্রেমিক চেতনা। ‘Drawing Sword’ টিভি নাটকে তার অভিনীত ছু ইউনফেই’র একটি কথা তার মনে গভীর দাগ কাটে। তা হলো দেশের স্বার্থ ও জাতীয় স্বার্থ সবকিছুর উপরে। একজন চীনা হিসাবে, ‘তলোয়ারের খুলে ফেলা’ আত্মা হল এক ধরণের মানসিক অবস্থা, যা দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য সর্বদা শক্তিতে পরিপূর্ণ।
নতুন যুগে কীভাবে ‘তলোয়ার খুলে ফেলার’ চেতনা লালন করা যায়? এই প্রশ্নের উত্তর দেন চাং কুয়াং বেই। বর্তমানে ‘তলোয়ারের খুলে ফেলা’ চেতনার আধুনিক সমাজে বাস্তবসম্মত অর্থও আছে। তিনি বলেন, বিগত একশ’ বছরে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিসি’র নেতৃত্বে চীনা জনগণের ধনী হওয়া এবং শক্তিশালী হওয়ার মহান লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়েছে। দ্বিতীয় ‘একশ বছরের লক্ষ্যের’ দিকে দেশে সার্বিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পূর্বপুরুষদের ‘তলোয়ার খুলে ফেলার’ চেতনা তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া উচিত্। ‘তলোয়ার খুলে ফেলার’ চেতনার প্রভাবে আমাদের দেশ ও জাতি নিঃসন্দেহে আরও শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রেডিও ও টেলিভিশন সাধারণ প্রশাসন ‘চতুর্দশ পাঁচশালা পরিকল্পনাকালে চীনের টিভি নাটক বিকাশের পরিকল্পনা’ প্রকাশ করে, যা চীনের টিভি নাটক বিকাশের দিকনির্দেশনা এবং প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখেছিল। চীনের চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন শিল্প বিকাশের একজন অভিজ্ঞ সাক্ষী হিসাবে চাং কুয়াংবেই মনে করেন, চীনের চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন নাটক নির্মাণের কাজগুলো আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়ে উঠছে। তা ছাড়া, কীভাবে চীনা চলচ্চিত্র এবং টিভি সিরিজগুলিকে আরও ভালোভাবে নির্মাণ করা যায়, সে সম্পর্কে তিনি নিজের পরামর্শও দিয়েছেন।
তিনি বিশ্বাস করেন, চমৎকার সাহিত্য ও শিল্পকর্মকে সময়ের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা উচিত এবং সময়ের স্পন্দন থেকে শিল্পের স্পন্দন অনুভব করা উচিত। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ‘The Battle at Lake Changjin’এবং ‘Crossing the Yalu River’সহ বেশ কয়েকটি চমৎকার মূল ধারার চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন নাটক দর্শকদের সামনে হাজির হয়েছে। এসব শিল্পকর্ম সময়ের উন্নতি, সামাজিক পরিবেশ এবং মানুষের আবেগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এগুলো দর্শকদের অনুপ্রাণিত করে এবং দর্শকদের মধ্যে অভিন্ন আবেদন সৃষ্টি করে।
একই সাথে, ব্যাপক সাহিত্যিক ও শিল্পীদের জনগণের কাছে যেতে হবে। অবশ্যই নিজ উদ্যোগে শুটিং করতে হবে, লিখতে হবে এবং যে জীবনের সাথে পরিচিত তার অভিনয় করতে হবে। এটিই সাফল্যের নিশ্চয়তা। তিনি বলেন,‘Drawing Sword’ টিভি নাটকে তার অভিনীত ছু ইউনফেইয়ের চরিত্র সফল হওয়ার কারণ হলো- তার আগে সবার একই রকম অভিজ্ঞতা ছিলো। ভূমিকা সফল হয়েছে। কারণ তাঁর একই রকম জীবনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি একজন নৌ-সেনা ছিলেন। নৌবাহিনীর সামরিক অভিজ্ঞতা তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন। একজন সেনা হিসাবে সেই অভিজ্ঞতা এই চরিত্রে ভালভাবে অভিনয়ের সময় কাজে লেগেছে। অন্তত আমার অভিনীত এ চরিত্রে একজন সৈনিকের ‘আত্মা’ রয়েছে।
তার সম্প্রতি চীনের খুব জনপ্রিয় আরেকটি টিভি নাটক ‘A Lifelong Journey’ একটি উদাহরণ। তিনি বলেন, যদি লেখক লিয়াং সিওশেং-এর জীবনের গভীরতার অভিজ্ঞতা না থাকতো, তাহলে মাও তুন সাহিত্য পুরস্কার-জয়ী এমন একটি চমৎকার উপন্যাস তৈরি করা অসম্ভব। ওয়াং হেইলিং উপন্যাসের ভিত্তিতে এত চমৎকার স্ক্রিপ্ট তৈরি করা সম্ভব না। শুধুমাত্র মানুষের কাছাকাছি থাকা এবং মানুষের কথা বোঝার মাধ্যমে আমরা বাস্তব, বিশ্বাসযোগ্য, উষ্ণ এবং উচ্চ-স্তরের শিল্পকর্ম তৈরি করতে পারি, যাতে দর্শকেরা উন্নতির চেতনা এবং উষ্ণতার শক্তি অনুভব করতে পারে।
২০৩৫ সালে শক্তিশালী সংস্কৃতির দেশ গঠনের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘সুখী জীবন অর্জন করতে হলে পরিশ্রম করতে হবে। যখন প্রত্যেকের একটি দিকনির্দেশনা ও একটি স্বপ্ন থাকবে এবং এই স্বপ্নের জন্য পদক্ষেপ নেবে, তখন দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য একটি বিশাল ঢেউ তৈরি হবে।
তিনি বলেন, সিপিপিসিসি’র কিছু সদস্য একটি হিসাব করেছেন। দেশের প্রতি ছয় লাখ মানুষ শুধু একজন সিপিপিসিসি’র সদস্য নির্বাচন করতে পারে। আমাদের জনগণের কণ্ঠস্বর শোনা, বিশেষ করে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন কর্মীদের কণ্ঠস্বর শোনার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত।
চলতি বছর চাং কুয়াংবেই পঞ্চমবারের মতো দুই অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন। দেশের প্রধান নীতি ও নীতির বিষয়ে পরামর্শ দিতে পেরে তিনি খুব খুশি। এই বছর সিপিপিসিসি’র সভায়, তিনি নিজের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত সাহিত্য ও শিল্পকর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে পারফরমিং আর্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং সোসাইটিগুলির নির্মাণ ও বিকাশের বিষয়ে পরামর্শ করেন।
তিনি বলেন, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন কর্মী হিসাবে, আমাদের অবশ্যই সিপিসি, দেশ, জনগণ এবং হিরোর প্রশংসা করে নানা শিল্পকর্ম নির্মাণ করা উচিত্। আরও বাস্তব, স্পর্শকাতর এবং প্রগতিশীল চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটক তৈরি করতে হবে। চলতি বছর, ‘Drawing Sword’ টিভি নাটকের নামে চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। এতে তিনি আবার ছু ইউনফেই চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি বলেন, চলচ্চিত্রটিতে মাত্র একটি পর্যায়ের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। টিভি নাটকের চেয়ে এটি আলাদা। তবে, চলচ্চিত্র বা টিভি নাটক, যাই হোক, তাদের মানসিক অবস্থা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং রচনার দিক একই, ‘তলোয়ার খুলে ফেলা’ চেতনাও বাঁচিয়ে রাখা হয়।
(লিলি/তৌহিদ)