বইমেলা: করোনার ক্ষতি কতোটা কাটিয়ে উঠলেন প্রকাশকরা?
2022-03-17 20:32:21

আফরিন মিম, ঢাকা: বাংলাদেশে সারা বছরের সবচেয়ে বড় বই কেনাবেচার মৌসুম একুশের বইমেলা। চলতি বছরও করোনা মহামারির কারণে দেরিতে শুরু হলেও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। কিন্তু বই এর ব্যবসা কতোটা জমজমাট ছিলো? গেল কয়েক বছরের মন্দা কাটিয়ে উঠতে কতোটা সহায়ক হলো এবারের বই মেলা?

করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের দাপটে এ বছরের শুরুতে দেশে রোগীর সংখ্যা আবার বাড়তে থাকায় বইমেলা শুরুও পিছিয়ে দেওয়া হয়। ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও পিছিয়ে শুরু হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি। তারপরও বইমেলা নিয়ে প্রত্যাশার কমতি ছিল না প্রকাশকদের। কারণ, সারা বছরের সবচেয়ে বেশি বই বিক্রির যেমন মৌসুম এটি, তেমনি লেখকদের জন্য নতুন বই প্রকাশের আনন্দটাও থাকে এ সময়ের অপেক্ষায়। 

পাঠক ও ক্রেতার আগমনেই প্রাণ পায় মেলা। এ বছর মেলায় অনেক দর্শনার্থী আসলেও পাঠক ও ক্রেতার সংখ্যা কম বলছেন শব্দশৈলী প্রকাশনীর প্রকাশক ইফতেখার আমিন।

চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে তিনি জানান, এবারের বই মেলায় নিজেদের খরচই উঠাতে পারবেন না অনেক প্রকাশক।

“আমরা এ বছর খুব আশাবাদী ছিলাম  যে খুব ভালো বই বিক্রি হবে , আমরা আমাদের ক্ষতিটা কাটীয়ে উঠতে পারবো, কিন্তু সে তুলনায় আমাদের তেমন বই বিক্রি হয়নি। স্টল ভাড়াও উঠবে না অনেকের।”

অনেক টাকার বই বিক্রি করার প্রত্যাশা নিয়ে মেলায় অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন বই প্রকাশনী। মাসজুড়েই মেলায় আসতে থাকে তাদের নতুন বই। 

কর্তৃপক্ষের স্টল বিন্যাসকেও বই বিক্রির অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তিনি। তিনি জানান, “এবার যেভাবে স্টল বিন্যাস হয়েছে তাতে দেখা গেছে  অনেক স্টলগুলোর দিকে পাঠকরা পোঁছাতেও পারে নি। এতে কেউ কেউ ভালো বিক্রি করেছে, কারোরও হয়ই নাই”।

একই সুর অন্যধারা প্রকাশনীর প্রকাশক মনির হোসেন পিন্টুর কথায়। তিনি বলছেন, মেলা শেষে পুঁজি নিয়েই ফিরতে পারবে না অনেক প্রকাশক।

“প্রকাশকরা মেলা শেষে তাদের পুঁজি নিয়ে যেতে পারবে না। স্টল ভাড়া, স্টাফ খরচের পর তাদের হাতে কোন টাকা থাকবে না। গতবছর মেলাটা একদম না হওয়ার মতই ছিল। আর এ বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভালো বই বিক্রি হচ্ছিলো। এরপর বিক্রির গতিটা কমে গিয়েছে। এ বছর মেলায় আমরা ২০ লাখের মত বই বিক্রি করেছি।  যা ২০২১ এর তুলনায় ভালো কিন্তু ২০২০ এর তুলনায় খারাপ।”

এবারের বইমেলার মাঝামাঝি সময়ে বিক্রি বালো ছিল বলে জানান শিশু কিশোরদের প্রকাশনী প্রিয় প্রকাশনীর প্রকাশক আতিক রহমান। তিনি চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে জানান, বিগত বছরের চেয়ে ভালো হলেও এর আগের কয়েক বছরের তুলনায় অনেক কম বিক্রি হয়েছে। কয়েক লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে আমাদের।

অন্যদিকে, বইমেলার পাশপাশি অনলাইনেও ভালো বিক্রি হচ্ছে বলে সন্তুষ্ট অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক মো মনিরুল হক। অন্যন্যা প্রকাশনী এবারের বইমেলায় ৪০ লাখের মত বই বিক্রি করেছে।

মো মনিরুল হক, প্রকাশক, অনন্যা প্রকাশনী

“বিগত বছরগুলোর চেয়ে কম বিক্রি হলেও আশানুরূপ হয়েছে ব্রিক্রি। আমাদের অনেক বই প্রকাশ হওয়ার পর দেখা যায় পাঠক অনলাইনে কিনে ফেলছে। তাছাড়া মহামারী করোনার জন্য মানুষের অর্থনৈতিক  দুরাবস্থা মধ্যে বই কেনার অন্যতম কারণ। তারপরেও বলবো ভালো বিক্রি হয়েছে”।

তবে এবারের মেলা নিয়ে অনেকটাই সন্তুষ্ঠ নতুন প্রকাশকরা। এ খাতের নতুন উদ্যোক্তা অদম্য প্রকাশের প্রকাশক নাজিব রাফে বলছিলেন, মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে উঠা সম্ভব না হলেও স্থবির হয়ে পড়া শিল্পে গতি এসেছে।

নাজিব রাফে, প্রকাশক, অদম্য প্রকাশ

“মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে উঠা সম্ভব নয়। কিন্তু গত দুই বছরের তুলনায় ভালো বিক্রি হয়েছে। মহামারিতে প্রকাশনী ইন্ডাস্ট্রি স্থবির হয়ে পড়েছিল। মানুষের বই পড়ার ও কেনার আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছিলো। এবারের বই মেলার মাধ্যমে আবার প্রকাশনা ইন্ডাস্ট্রি তার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে বলে।”

অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক মনিরুল হক জানান, মেলার পাশাপাশি এবার অনলাইনেও ভালো বিক্রি হয়েছে।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের বই মেলায় যেখানে বই বিক্রির পরিমাণ ছিলো ৬৫ থেকে ৮০ কোটি টাকার মধ্যে, সেখানে মহামারির কারণে ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৩ কোটি ১১ লাখ টাকায়।

সম্পাদনা: সাজিদ রাজু