মার্চ ১৫: ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব পরীক্ষাগার সম্বন্ধে গতকাল (সোমবার) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র চাও লি চিয়ান বেইজিংয়ে এক নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে যে ফাইল, ছবিসহ বিভিন্ন প্রমাণ পেয়েছে, তার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র শুধু ‘ভুয়া তথ্য’ শব্দটি উচ্চারণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র আসলে কাউকেই তার জবাব বিশ্বাস করাতে পারেনি।
জানা গেছে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গত শুক্রবার সম্মেলন আয়োজন করে ইউক্রেনের জৈব নিরাপত্তা সমস্যা নিয়ে আলাপ করেছে।
এই সম্বন্ধে চীনা মুখপাত্র চাও লি চিয়ান বলেন, বর্তমানে উন্মুক্তভাবে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে দশটিরও বেশি জৈব পরীক্ষাগার মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে। এসব পরীক্ষাগারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ২০ কোটিরও বেশি মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট গবেষণার উদ্দেশ্য হল মারাত্মক ভাইরাসের গুপ্ত সংক্রমণ ব্যবস্থা স্থাপন করা।
এক রুশ কর্মকর্তার বরাতে চীনা মুখপাত্র জানান, রাশিয়া ইউক্রেনে ৩০টিরও বেশি যুক্তরাষ্ট্রের জৈব পরীক্ষাগার আবিস্কার করেছে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো জরুরীভাবে বন্ধ করা হয়েছে, তবে প্লেগ রোগ, অ্যানথ্রাক্সসহ বিভিন্ন ভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া গেছে।
মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড স্বীকার করেছেন যে, ইউক্রেনে ‘জৈব গবেষণা স্থাপনা’ আছে। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সঙ্গে সহযোগিতা করছে, তবে এসব গবেষণা সামগ্রী রাশিয়ার হাতে পড়বে না।
মার্কিন তথ্যমাধ্যম জানিয়েছে, ইউক্রেনে গুপ্ত জৈব পরীক্ষাগারের বিষয়ে মার্কিন সরকার মিথ্যা বলেছে, জনগণকে এসব পরীক্ষাগারকে সমর্থন করার আসল উদ্দেশ্য জানায়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোম্যধে ইউক্রেনে গণস্বাস্থ্য পরীক্ষাগারে রাখা বিপজ্জনক ভাইরাসকে ধ্বংস করার প্রস্তাব দিয়েছে।
চীনা মুখপাত্র চাও লি চিয়ান বলেন,
যুক্তরাষ্ট্র সবসময় ‘উন্মুক্ত এবং সচ্ছ’ দেশ হিসেবে নিজেকে আখ্যায়িত করে, যদি যুক্তরাষ্ট্র একে ‘ভুয়া তথ্য’ বলে, তাহলে কেন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে না? যুক্তরাষ্ট্রের বরাদ্দ করা ২০ কোটি মার্কিন ডলার কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে? যুক্তরাষ্ট্র কি কি ভাইরাস নিয়ে কি কি গবেষণা করেছে? ইউক্রেনে মার্কিন দূতাবাস তার ওয়েবসাইটে সব সংশ্লিষ্ট ফাইল ডিলিট করেছে, তারা কি লুকিয়ে রাখতে চায়? যুক্তরাষ্ট্র কেন ২০ বছর ধরে ‘জৈব অস্ত্র নিষিদ্ধ কনভেনশন’-এর আওতায় বহুপক্ষীয় পরীক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনের বিরোধিতা করে? যুক্তরাষ্ট্র কেন এসব জৈব পরীক্ষাগারকে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের স্বাধীন তদন্তের জন্য উন্মুক্ত করে না?
চাও লি চিয়ান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ায় দ্বিচারিতা ছিল। ২০০৫ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউক্রেনের স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ইউক্রেনের স্থাপনার সমস্ত কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছে। তবে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্ধারিত ‘স্পর্শকাতর তথ্য’ প্রকাশ করতে পারে না। ২০২১ সাল শেষে ‘জৈব অস্ত্র নিষিদ্ধ কনভেনশন’ স্বাক্ষরকারী দেশের সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের দাখিল করা দলিল অনুযায়ী, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের ২৬টি জৈব পরীক্ষাগারসহ বিভিন্ন সহযোগিতামূলক স্থাপনা আছে।
চাও লি চিয়ান বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্রের নিজের প্রকাশিত তথ্য পরস্পরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক সমাজ কিভাবে বিশ্বাস করতে পারে যে, যুক্তরাষ্ট্র সত্যিকার অর্থে ‘জৈব অস্ত্র নিষিদ্ধ কনভেনশন’ পালন করেছে?
চীনা মুখপাত্র চাও লি চিয়ান আরো বলেন, এত বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় অন্য দেশকে নিয়ম মেনে চলতে এবং স্বাধীন পরীক্ষা চালানোর সুযোগ দিতে চাপ দিয়ে আসছে। এসব অজুহাতে অন্য দেশের ওপর শাস্তি আরোপ বা আক্রমণ করেছে। তবে কেন যুক্তরাষ্ট্র নিজে স্বাধীন পরীক্ষাকে ভয় পাচ্ছে? এটি আসলে মার্কিন স্টাইলের দ্বৈত মানদন্ড।
চাও লি চিয়ান আবারও যুক্তরাষ্ট্রকে দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে সামরিক কর্মকান্ডের সার্বিক ব্যাখ্যা দান এবং ‘জৈব অস্ত্র নিষিদ্ধ কনভেনশন’-এর পরীক্ষা ব্যবস্থার বিরোধিতা না করার তাগিদ দেয়।
চীনা মুখপাত্র বলেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আন্তর্জাতিক সমাজের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য এবং বিশ্বের জৈব নিরাপত্তা মান বাড়ানোর জন্য সহায়ক।
(শুয়েই/এনাম/জিনিয়া)