প্যারালিম্পিকের চেতনার পর্দা কখনো নামবে না
2022-03-14 14:45:12

মার্চ ১৪: বেইজিং শীত্কালীন প্যারালিম্পিক গেমস গতকাল (রোরবার) সমাপ্ত হয়েছে। তাতে ৪০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ৫০০ জনেরও বেশি ক্রীড়াবিদ অংশ নিয়েছেন।  তুমুল প্রতিযোগিতায় তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও সংগ্রামী চেতনায় ‘দুই অলিম্পিকের আয়োজক সিটি’ তথা বেইজিংয়ে ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন।

 

তার পিছনে রয়েছে অনেক ঘাম ও শ্রমের গল্প। আজকের টপিক অনুষ্ঠানে আপনারা  শুনবেন তাদের  কিছু গল্প।

 

সাতাশ বছর বয়সী স্যু হোং শেং চীনের প্যারালিম্পিক গেমসের আলপাইন স্কি টিমের একমাত্র ক্রীড়াবিদ, যার দুটি বাহু নেই। বিশ্বের এ ধরণের টিমে তার মতো ক্রীড়াবিদের সংখ্যা খুব বিরল। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ২,০০০ মিটার উঁচুতে দাঁড়িয়ে স্যু হোং শেং দ্রুত বেগে পিছলিয়ে চলছেন। দুটি বাহু হারানো স্যু হোং শেং তুষার স্টিকে ভর করে তার ভারসাম্য রাখতে পারেন না। তিনি কেবল শরীরের মাধ্যমে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা চালান। 

 

ছোট বেলায় বিদ্যুত দুর্ঘটনায় দুটি বাহু হারান স্যু। তবে ২০১৬ সালে চীনের প্রতিবন্ধী আলপাইন স্কি দলে যোগ দেন স্যু। দুটি বাহু হারানোর কারণে প্রশিক্ষণের সময় তিনি প্রায়ই ট্র্যাক থেকে বাতাসে উড়ে মাটিতে পড়ে যেতেন। তবে তিনি কখনো ব্যথার কথা মনে রাখেন নি। তিনি উত্সাহী মনে তার সংগ্রাম চালিয়ে নিজের অলিম্পিক স্বপ্ন পূরণ করেছেন।

 

চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাই একমাত্র বড় কিছু নয়, বরং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারাটাই সবচেয়ে বড় অর্জন। সকল ক্রীড়াবিদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার পাশাপাশি বিশেষ আস্থার দৃশ্য দেখা গেছে এবারের গেমসে ।

 

চীনের ক্রীড়াবিদ চু তা ছিং গুরুতর চোখের রোগে আক্রান্ত। তাঁর চোখের দৃষ্টিসীমা মাত্র ১০ সেন্টিমিটার। তবে তিনি তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার মধ্য দিয়ে  বেইজিং প্যারালিম্পিক গেমসের চারটি পুরস্কার পেয়েছেন। তার পুরস্কার জেতার পিছনে রয়েছেন ইয়ান হান হান। তিনি চু তা ছিংয়ের চোখের কাজ করেছেন। অর্থাত্ পথ দেখিয়েছেন। চু তা ছিং বলেন, ‘আমার জন্য তিনি অনেক কিছু করেছেন। আমার সব পুরস্কারের পিছনে রয়েছে তার ব্যাপক অবদান” । প্যারালিম্পিক গেমসের পর চু তা ছিং এ কথা বলে ইয়ানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

 

অনেকে হয়তো জানেন না, ইয়ান হান হানের বাম বাহুটি নেই। মাধ্যমিক স্কুলে তিনি একজন প্রতিবন্ধী সাঁতার ক্রীড়াবিদ ছিলেন। তারপর তিনি জাতীয় প্রতিবন্ধী আলপাইন স্কি দলে যোগ দেন। তবে তিনি চু তা ছিংয়ের স্কি ক্যারিয়ারের জন্য তার চোখে পরিণত হয়েছেন।  প্রতিযোগিতার সময় তিনি দ্রুত ট্র্যাকের অবস্থা জানাতেন চু তা ছিংকে।

 

এমন জুটি এবারের প্যারালিম্পিক গেমসে অনেক দেখা গেছে। তাদেরকে মজা করে ডাকা হয়, ‘তুমি আমার চোখ’ জুটি। 

প্যারালিম্পিক গেমসে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি রয়েছে অনেক উষ্ণতা। ক্রস-কান্ট্রি স্কি পুরুষদের দীর্ঘ দূরত্বের প্রতিযোগিতা এ গেমসের সবচেয়ে দীর্ঘ প্রতিযোগিতা। এ আইটেমের ক্রীড়াবিদদের সাধারণ মানুষের কল্পনার বাইরে গিয়ে পরিশ্রম করতে  হয়। চীনের ক্রীড়াবিদ ছাই চিয়া ইয়ুন ৫৪ মিনিট ২৭.৭ সেকেন্ডে সর্বপ্রথম প্রতিযোগিতা শেষ করেন। এর পর পরই তিনি ক্লান্ত হয়ে ট্র্যাকে শুয়ে পড়েন। প্রতিযোগিতার অপেক্ষার সময়টিতে ছাই চিয়া ইয়ু অন্যদের উত্সাহিত করেন। সর্বাবস্থায় নিজ দলের সদস্য বা প্রতিযোগীকে তিনি তাত্ক্ষণিকভাবে সাহায্য করেন।

 

ক্রীড়া মানে না রাষ্ট্রের সীমা রেখা। সবারই অভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে। প্রতিবন্ধীরা ক্রীড়ায় পরস্পরকে সহযোগিতা করেন। কেউ কেউ এমন মন্তব্যও করেছেন যে, নিজের অঙ্গ নেই, তবে তারা দেহে আত্মাকে লালন করে উজ্জ্বলতা অর্জন করেছেন। বাহু না থাকলেও, তারা স্নোবোর্ডকে পাখা হিসেবে গ্রহণ করে স্বপ্ন পূরণ করেছেন। প্রতিযোগিতার আসল সৌন্দর্য জয়-বিজয়ের নয়, বরং নিজের সক্ষমতা উন্নয়নে অবিরাম প্রচেষ্টা। প্রাণের সৌন্দর্য আসলে স্পটলাইটে থাকার  মুহূর্ত নয়, বরং সীমাবদ্ধতাকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস।

 

(রুবি/এনাম/আকাশ)