খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রযুক্তির উন্নয়নে জোর দিলেন সি চিন পিং
2022-03-11 11:46:46

সম্প্রতি চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সম্মেলন তথা ‘দুই অধিবেশন’ শুরু হয়ে এখনো চলছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গত ৬ মার্চ বিকেলে চীনের জাতীয় পরামর্শ পরিষদের ১৩তম সম্মেলনের পঞ্চম অধিবেশনে অংশগ্রহনকারী কৃষি, সমাজ কল্যাণ ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন। তখন তিনি আবারও খাদ্যশস্যের নিরাপত্তার কথা জোর বলেন। তিনি বলেন, গ্রামীণ পুনরুত্থানের কৌশল বাস্তবায়ন করতে গেলে কৃষি পণ্য বিশেষ করে খাদ্যশস্য সরবরাহকে প্রাধাণ্য দিতে হবে। কৃষি উত্পাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধিকে আরও অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। জমি ও প্রযুক্তিসহ নানা পদ্ধতিতে খাদ্যশস্য উত্পাদনের সক্ষমতা উন্নত করতে হবে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গণজীবিকা ও জাতীয় নিরাপত্তার উচ্চতায় খাদ্যশস্য নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং খাদ্যশস্য উত্পাদন জোরদারের জন্য ধারাবাহিক কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন। তার কথায় খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য চেতনামূলক নির্দেশনা রয়েছে।

 


চীনে একটি প্রবাদ রয়েছে: ‘পাঁচটি খাদ্যশস্য হাজারো মানুষের প্রাণ এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ’। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে চীন বিশ্বের ৯ শতাংশ আবাদযোগ্য জমি, ৬ শতাংশ জলজ সম্পদ দিয়ে বিশ্বের ৫ ভাগের এক ভাগ জনসংখ্যাকে লালন করছে।  বিষেশ করে এ শতাব্দীতে চীনের খাদ্যশস্য টানা কয়েক বছর ভালো ফলেছে। খাদ্যশস্য মুজদের পরিমাণ টানা সাত বছর ধরে ছিল ০.৬৫ ট্রিলিয়ন কেজি, যা বিশ্বের খাদ্যশস্য নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

 


 

নিরাপত্তার মধ্যেও সংকটের কথা ভুলে না চীন। বর্তমান ও ভবিষ্যতের নির্দিষ্ট সময় চীনে খাদ্যের চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য বজায় রাখাকে প্রাধান্য দেওয়ার কাঠামো পরিবর্তিত হবে না। খাদ্যশস্য চাষের জমির আয়তন ও উত্পাদন বাড়ানো কঠিন হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বর্তমানে বিশ্বের প্রতিকূল  পরিস্থিতিতে নানা অনিশ্চয়তা বেড়ে গেছে। তাই আমাদের উচিত চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং’র কৃষি, গ্রাম ও কৃষক-সংক্রান্ত কাজের নির্দেশনা অনুসরণ করে খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দেশীয় খাদ্যের স্থিতিশীল সরবরাহের মাধ্যমে বাইরের পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা দূর করা।

 


খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মূলত আবাদি জমি বাড়াতে হবে এবং উন্নত হতে চাইলে প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করতে হবে। তাই বিভিন্ন স্তরের পার্টির কমিটি ও সরকারের উচিত সবচেয়ে কঠোরভাবে আবাদি জমি রক্ষার নীতি পালন করা এবং ১২ কোটি হেক্টর আবাদি জমির পরিমাণ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি, উর্বর জমি তৈরিতে অবিচল থাকতে হবে, যাতে খরা ও বন্যার পরিস্থিতিতেও স্থিতিশীল উত্পাদন হয়।  কৃষি প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করতে হবে। কৃষি খাতে সরঞ্জাম ব্যবহার সম্প্রসারণ, সবুজায়ন ও ডিজিটাইজিং উন্নয়ন করতে হবে। ভুট্টা ও সয়াবিন উত্পাদনকারীদের ভর্তুকি প্রদানের পাশাপাশি খাদ্যশস্য উত্পাদনকারী বড় প্রদেশ ও জেলাকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন। যাতে কৃষকদের চাষাবাদ এবং স্থানীয় সরকার খাদ্যশস্য উত্পাদন থেকে আয় করতে পারে।

 


“খাদ্যশস্য সরবরাহের পাশাপাশি মাংস, সবজি, ফলমূল ও মত্স্য পণ্যসহ নানা খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ধরণের খাদ্যের অভাব হলে চলবে না”। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জনগণের খাওয়ার অভ্যাস পরিবর্তন উপলব্ধি করে তাদের সুন্দর জীবন নিশ্চিত করার জন্য এ নির্দেশনা দেন। এ বিষয়ে দুটি সম্পদের ভালো ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন সি চিন পিং। প্রথমত, আবাদি জমি, বন, গ্রাসল্যান্ড, নদনদী ও সমুদ্রসহ নানা সম্পদ কাজে লাগিয়ে খাদ্যের উত্স সম্প্রসারণ করা। দ্বিতীয়ত, আদান-প্রদান ও সহযোগিতা জোরদার করা প্রয়োজন। জমি ভাড়া করা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন করাসহ নানা পদ্ধতিতে বিদেশে ব্যবহারযোগ্য সম্পদ অবিস্কার করার কথা বলেন তিনি।

 

সকল চীনাদের উচিত নিজেদের চালের বাটি নিজ হাতে ধরে রেখে দেশের ভিত্তি সুসংহত করা, গ্রামীন পুনরুত্থান ও অর্থনীতির গুণগত মান সম্পন্ন উন্নয়নের জন্য দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন এবং বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিজের অবদান রাখা।