আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী নারী; অধিকার প্রতিষ্ঠায় কতদূর?
2022-03-11 15:58:43

ঢাকা, মার্চ ১০: দিন দিন বেড়েই চলছে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ। নারীরা এখন আর শুধু ঘরেই কাজেই সীমাবদ্ধ নেই। শিক্ষক, নির্মাণকর্মী, বিজ্ঞানী, ব্যাংকার, উদ্যোক্তা, শিল্পী, গণমাধ্যমকর্মী প্রায় সব পেশাই বেছে নিচ্ছেন নারী। এমনকি এখন পেশা হিসেবে গৃহকর্মকেও বেছে নিচ্ছেন তাঁরা। আত্মকর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা।

বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, এক কোটি ৮৭ লাখ নারী কৃষি, শিল্প ও সেবা —অর্থনীতির বৃহত্তর এই তিন খাতে কাজ করছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘সার্ভে অব ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ’ জরিপের তথ্যমতে দেশে নারীর কর্মসংস্থান বাড়ছে শিল্প খাতে নারীর অংশগ্রহণ ৪৪ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে তা ২৪ লাখ চার হাজার ৬৭১ জন। 

সংগৃহীত

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাংলাদেশের অর্থনীতির পটপরিবর্তনে একটি উল্লেখযোগ্য দিক। স্বাধীনতার পাঁচ দশকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের সফলতায় বড় অবদান রেখেছেন নারীরা।

২০২০ সালে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় বলা হয়, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) নারীর অবদান প্রায় ২০ শতাংশ। তবে সংসারের ভেতর ও বাইরের কাজের মূল্য ধরা হলে নারীর অবদান বেড়ে দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশ।

সংগৃহীত

 

উৎপাদনব্যবস্থায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারী কর্মীদের বেশির ভাগই শ্রমজীবী। তবে শ্রমবাজারে নারীর একটা বড় অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত।যেমন কর্মজীবী নারীদের অর্ধেকের বেশি কৃষিকাজ ও গৃহস্থলির কাজে নিয়োজিত।

অর্থনীতি কিংবা সামাজিক মানদন্ডের বিচারে যা এখনো অস্বীকৃত। সাম্প্রতিক সময়ে গৃহস্থালি ও সেবামূলক কাজে নারীর অবদানের বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃত দেওয়া আলোচনায় এলেও আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিকভাবে অর্থবহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়না। 

সংগৃহীত

 

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ৩০ মার্চ ২০২১ প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে নারী-পুরুষের সমতার দিক থেকে বিশ্বে ১৫৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৫তম। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অবস্থানে প্রথম। পাশাপাশি নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নেও বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম।

এসব অবস্থান দেখে কী বলা যায় দেশে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?

চাকরিজীবী কিংবা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলেই একজন নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় না বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক সালমা আহমেদ।

তিনি  চীন আর্ন্তজার্তিক বেতারকে জানান, “ অর্থনৈতিক মুক্তিই নারীর ক্ষমতায়ণ নিশ্চিত করে না। নারীর ক্ষমতায়ন হতে হলে চিন্তার ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যেটা এখনো হয়নি”।

অন্যদিকে মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশে কর্মরত পি আর এন্ড মিডিয়া রিলেশন ম্যানেজার রুখসানা মিলি বলছেন অন্যকথা। তিনি বলছেন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী  হওয়াটা নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম নিয়ামক। পাশাপাশি তিনি নারীর ইচ্ছাশক্তি ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার থাকতে হবে। যাদের সিধান্ত নেওয়ার অধিকারটা আছে তারা সব জায়গাতেই ঘুরে দাঁড়াতে পারে। 

প্রতিবেদক: আফরিন মিম

সম্পাদনা: সাজিদ রাজু