তিব্বতি জনগণের সুখের পথ, প্রাণের পথ
2022-03-11 19:29:12

চার পাশে উঁচু পাহাড়ে ঘেরা, বাইরে যাওয়ার কোনো পথ নেই; এমন জীবনে কি আশার আলো দেখা যায়? লোকজন কীভাবে এই অবস্থায় জীবনযাপন করে? সড়ক নির্মাণ এমন ছোট জেলায় কেমন পরিবর্তন আনতে পারে? জেলাটি ছিল চীনের প্রান্তিক জেলা, সেখানে যাতায়াতের পথ ছিল না। তাহলে, এখন সেখানকার অবস্থা কেমন? আজ আপনাদের এই জেলার গল্প জানাব।

 

ধনী হতে চাইলে প্রথমে সড়ক নির্মাণ করতে হয়। সড়ক তিব্বতের মো থো জেলার জন্য সুখের পথ এবং প্রাণের পথও বটে।

তিব্বতের মো থো জেলা ঘিরে রেখেছে উঁচু উঁচু পাহাড়। এই জায়গাকে ‘পদ্ম ফুলের রহস্যময় জায়গা’ হিসেবে বলা হয়। জেলাটি ছিল চীনে চূড়ান্ত জেলা, যেখানে যাতায়াতের কোনও পথ ছিল না।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মো থো জেলার সড়ক পথের কথা গভীরভাবে চিন্তা করেন। ২০১৩ সালে চীনের বার্ষিক রাজনৈতিক সম্মেলন- ‘দুই অধিবেশনের’ সময়, সি চিন পিং তিব্বত প্রতিনিধিদলের আলোচনাসভায় অংশ নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন: মো থো জেলায় যাতায়াতের পথ কি চালু হয়েছে?

 

বাই মা ছুই চেন দ্বাদশ জাতীয় গণ-কংগ্রেসের প্রতিনিধি, তিনি মো থো জেলার দ্য সিং গ্রামের সিপিসি’র উপ-সম্পাদক, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলতি বছর সার্বিকভাবে চালু হওয়ার কথা। সারা চীনে অনেক বেশি কাজ; তবে দেশের শীর্ষনেতা হিসেবে প্রেসিডেন্ট সি মো থো ছোট জেলার সড়ক পথ নির্মাণের কথা মনে রেখেছেন। তা প্রমাণ করেছে, চীনের স্বপ্নের আওতায় গোটা দেশের কোনো একটি ছোট জায়গাও বাকি থাকবে না।

 

মো থো জেলায় যাওয়ার পাহাড়ি পথ ছিল অনেক কঠোর ও বিপজ্জনক। স্থানীয় লোকজন বাধ্য হয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা চার হাজার মিটারেরও উঁচু দুটি পাহাড় অতিক্রম করে বাইরে যেত। পাহাড়ে সারা বছর তুষার পড়ত। পথে পাহাড় ধ্বসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটত। অর্ধ শতাব্দীতে স্থানীয় লোকজন বার বার মো থো সড়ক নির্মাণের চেষ্টা করেছেন। অবশেষে ২০১৩ সালের শেষ নাগাদ- প্রেসিডেন্ট সি ও বাই মা ছুই চেনের আলাপের সাত মাস পর, মো থো জেলায় যাতায়াতের প্রথম ও প্রধান সড়কপথ চালু হয়।

 

ক্য সাং দ্য জি, চীনের জাতীয় গণ-কংগ্রেসের প্রতিনিধি এবং মো থো জেলার প্রাথমিক স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপল। তিনি বলেন, মো থো সড়ক চালু করা যেন একটি মিরাকল। কারণ আমরা ছোটবেলা থেকেই তুষারের পাহাড় অতিক্রম করতাম, খাড়া উঁচু পাহাড় ডিঙিয়ে চলতাম। পাহাড়ি পথ সত্যিই ভীষণ বিপজ্জনক, প্রাণের ঝুঁকি অনেক বেশি। সরকারের সমর্থনে মো থো সড়কপথ চালু হয়, আমাদের দেশ সত্যি অসাধারণ ভালো।

 

ক্য সাং দ্য জি বলেন, আগে মো থো থেকে কাছাকাছি বড় শহর লি জিতে যেতে ৭/৮ দিন সময় লাগত। এখন গাড়িতে মাত্র ৭/৮ ঘন্টা সময় লাগে।

তিনি বলেন, আমি খুব মুগ্ধ হয়েছি। কারণ প্রেসিডেন্ট সি আমাদের মো থো’র সড়কপথের প্রতি গুরুত্ব দেন। আমাদের এখানকার জনগণের প্রতি তিনি খেয়াল রাখেন। প্রেসিডেন্ট সি সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে আমাদের এই সীমান্তের ছোট জেলার উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে চান, আমাদের জীবনকে উন্নত করতে চান।

 

মো থো মানুষ হিসেবে ক্য সাং দ্য জি সেখানে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষা দিয়েছিলেন। শুরুতে তাঁর এক সবচেয়ে কঠোর দায়িত্ব ছিল ‘স্কুলচ্যুত শিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে আনা’।

তিনি বলেন, তখন স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ অনুন্নত ছিল, প্রধান কারণ হলো- পথের খারাপ অবস্থা। সবসময় শিশুরা স্কুলচ্যুত হতো। সড়কপথ চালু হওয়ার পথ আমাদের মো থো’র শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক স্কুলে স্নাতকের পর বাইরে উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তে যেত ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো। তারপর স্নাতক পাস করে আবার মো থো জেলায় ফিরে আসে। কেউ কেউ বড় শহরে কাজ খুঁজে নেয়। তারা সবাই খুব ভালো জীবন কাটাতে পারছে।

 

শিক্ষা ছাড়া সড়ক চালু মো থো জেলায় আরো অনেক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ই সি লো বু বলেন, মো থো সড়ক চালু হওয়ার পর এখন জেলা থেকে বের হওয়া এবং ফিরে আসা অনেক সুবিধাজনক। যা কিনতে চাই, তা জেলায় কিনতে পাওয়া যায়।

ছি রেন ওয়াং তুই নামে বাসিন্দা বলেন, বিশেষ করে লোকজনের বাইরে চিকিত্সা করতে যাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক সুবিধা হয়েছে।

 

ক্য সাং দ্য জি বলেন, মো থোতে  সড়কপথ চালু হওয়ার পর আকাশ-পাতাল পরিবর্তন ঘটেছে। অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। বিদ্যুত্, ইন্টারনেটব্যবস্থা চালু হয়েছে। লোকজনের বাইরে যাতায়াত অনেক সহজ হয়েছে, বাইরের পর্যটকরাও আমাদের এখানে ভ্রমণ করতে আসতে পারে।

পথ চালু শুধু মো থো মানুষের জীবন পরিবর্তনই করেনি; বরং, মানুষের চিন্তাধারায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।

 

ক্য সাং দ্য জি বলেন, আগে পথ ছিল না, আমাদের জেলা যেন অবরুদ্ধ একটি জায়গা। এখন মানুষের চিন্তাধারা অনেক উন্নত হয়েছে। কেউ ব্যবসা করে, কেউ পুঁজি বিনিয়োগ করে, কেউ বাইরে গিয়ে কাজ করে; সবাই নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে সুখের জীবন গড়ে তুলেছে।

২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মো থো জেলার জিডিপি’র বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ১২.৯ শতাংশ। সুনির্দিষ্ট দারিদ্র্যবিমোচন নীতির কারণে পুরো জেলা দারিদ্র্যমুক্ত হয়। ২০১৩ সাল থেকে এই পর্যন্ত, মো থো জেলার সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৫শ’ কিলোমিটার বেড়েছে। গত বছরের মে মাসে মো থো থেকে কাছের বড় শহর লিন জি’র সঙ্গে সংযুক্ত আরেকটি পথের নির্মাণ শেষ হয়। চলতি বছর তা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে। এর ফলে দুই জায়গার মধ্যে যাতায়াতের সময় অর্ধেক কমে যাবে।

 

ধনী হতে চাইলে সবার আগে সড়ক নির্মাণ করতে হয়। মো থো জেলায় সড়কব্যবস্থা চালু হওয়ার পর অবকাঠামো উন্নতি হয়েছে, শিল্পের উন্নতি সম্ভব হয়েছে। তিব্বতের আকাশপাতাল পরিবর্তন ঘটছে। তিব্বতি জনগণও আরও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য চেষ্টা করছে।