মার্চ ৯: চীনের বার্ষিক ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস (এনপিসি)-র অধিবেশনকে প্রায়শই বিদেশি মিডিয়া চীনকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উইন্ডো হিসাবে বিবেচনা করে। এর মধ্যে সরকারি কার্যবিবরণী বিদেশি মিডিয়ার নজর বেশি কাড়ে। ‘আজকের টপিক’ আসলে আমরা এ নিয়ে আলোচনা করব।
ব্লুমবার্গ চীন সরকারের কাজের প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত এই বছরের জন্য প্রধান প্রত্যাশিত উন্নয়ন লক্ষ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। চীন প্রায় ৫.৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ৪.৮ শতাংশ পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য, চীন সংশ্লিষ্ট আর্থিক নীতি বাস্তবায়ন জোরদার করা ও আবাসনের মূল্য স্থিতিশীল রাখার মতো বিষয়গুলোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেবে বলে ব্লুববার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, প্রতিবেদনে হংকং হুয়াক্সিং সিকিউরিটিজের ম্যাক্রো এবং কৌশলগত গবেষণার প্রধান ব্রুস প্যাং-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে ‘বিনিয়োগ, বিশেষ করে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ, এই বছর স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য চালিকাশক্তি হবে’।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি উন্নয়নের ওপর চীনা সরকারের গুরুত্বারোপের বিষয়টি তুলে ধরেছে। রয়টার্সের নিবন্ধে বলা হয়েছে যে, চীনের সরকারি কার্য-বিবরণী অনুসারে, চীন মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ভাইরাসের মিউটেশান নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যেতে, ভ্যাকসিন ও সংশ্লিষ্ট ওষুধ নিয়ে গবেষণা ত্বরান্বিত করতে কার্যক্রম চালিয়ে যাবে এবং টিকাদান কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব দেওয়া অব্যাহত রাখবে।
রয়টার্সের নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে যে, ২০২০ সালের গোড়ার দিকে কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে চীনের নীতিনির্ধারণে খাদ্য-নিরাপত্তা বেশি গুরুত্ব পেয়ে আসছে। চীনের সরকারি কার্য-বিবরণী অনুযায়ী, চীন গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্য যেমন শস্যের স্থিতিশীল উত্পাদন ও সরবরাহকে শক্তিশালী করবে এবং মাংসের উত্পাদন বাড়াবে। নিবন্ধে বলা হয়েছে, এর আগে চীনে মাংসের দাম বেড়েছে, এবং ভোক্তা মূল্য সূচকও টানা বেড়েছে। তারপর থেকে, চীন দ্রুত স্বাভাবিক হতে শুরু করে। মাংসের উত্পাদন ও দাম স্থিতিশীল রাখা সরকারের প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। নিবন্ধ অনুসারে, সরকারি কাজের প্রতিবেদনে ‘ভাতের ব্যাগ’ পূরণ করার এবং ‘সবজির ঝুড়ি’ সমৃদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে ১.৪ বিলিয়ন চীনার খাদ্যের চাহিদা সহজে মিটানো সম্ভব হয়।
ইউএস কনজিউমার নিউজ অ্যান্ড বিজনেস চ্যানেল চীনা সরকারের কাজের প্রতিবেদনে উল্লেখিত জনগণের জীবিকা বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। চ্যানেলটি বলছে, চীন প্রস্তাব করেছে যে এই বছর ১১ মিলিয়নেরও বেশি নতুন শহুরে চাকরি সৃষ্টি করা হবে, শহুরে বেকারত্বের হার ৫.৫ শতাংশের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা হবে এবং ভোক্তা মূল্য বৃদ্ধি প্রায় ৩.৩ শতাংশ হবে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সম্প্রতি চীনের বেশ কয়েকটি সরকারি বিভাগের প্রধানরা আরও অর্থনৈতিক সহায়তার পরিকল্পনার কথা বলেছেন, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং ভোক্তাদের জন্য। সরকারি কাজের প্রতিবেদনে এটিও প্রস্তাব করা হয়েছে যে, সরকার ‘একাধিক চ্যানেলের মাধ্যমে বাসিন্দাদের আয় বাড়ানোর চেষ্টা করবে, আয় বন্টন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাবে, এবং ব্যবহারের ক্ষমতা বাড়াবে’। এবং নির্দিষ্ট ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ বাসিন্দাদের নতুন জ্বালানিচালিত যানবাহন ক্রয়ের ক্ষমতা বাড়ানো। সামাজিক কল্যাণের দিক দিয়ে চীনা সরকারের কাজের প্রতিবেদনে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, আবাসিক চিকিত্সা বীমার জন্য অর্থায়ন বাড়ানো হবে এবং মৌলিক জনস্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য ভর্তুকি বাড়ানো হবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)