আকাশ ছুঁতে চাই ৬৪
2022-03-10 14:00:59

জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য

১. সাক্ষাৎকার: বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম

২. নারী দিবস: বিশেষ প্রতিবেদন

৩মিয়াও জাতির সুযোগ্য কন্যা

৪. গান : শিল্পী না ইং

৫. প্যারা-অলিম্পিকের মশালবাহী নারী

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই  অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া।

৮ ই মার্চ ছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য এই প্রতিপাদ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপিত হয়েছে নারী দিবস। স্বাধীনতার পর থেকে এদেশে নারী দিবস উদযাপনে প্রথম থেকেই অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। এ প্রসঙ্গে আজ আমরা কথা বলবো বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেমের সঙ্গে। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।

সাক্ষাৎকার

প্রয়োজন দৃষ্টি ভঙ্গীর পরিবর্তন: সীমা মোসলেম

 

                                           

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, বাংলাদেশে নারী অনেক অগ্রসর হয়েছে এবং এখন প্রতিটি পেশায় নারীকে দেখা যাচ্ছে। এই পরিবর্তিত জীবনের চাহিদা ও সমস্যাকে মোকাবেলা করাই এখন বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে নারী পুরুষের বৈষম্য রয়েছে। তবে বৈষম্য যে রয়েছে এটি এখন সকলেই স্বীকার করছেন। এটা একটা বড় অগ্রগতি  বলে তিনি মনে করেন। এখন নারীরা নীরবতার প্রথা ভেঙে তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়েছেন। তারা মুখ ফুটে তাদের সমস্যার কথা বলছেন। সীমা মোসলেম জাতিসংঘের সিডোও সনদের কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশ সিডোও সনদে স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু এই সনদের যে মূল একটি ধারা (ধারা নম্বর ২),  সেটিতে  রিজার্ভেশন রয়েছে।এর ফলে নারীরা উত্তরাধিকার আইনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নে শুধু পরিকল্পনা গ্রহণ করলেই হবে না তার পুরোপুরি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

নারী পুরুষের সমতা নিশ্চিত করতে হলে সমাজের উচ্চ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করেন সীমা মোসলেম। দৃষ্টিভঙ্গীর কারণেই নারী আজও নির্যাতনের শিকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

নারী দিবসের বিশেষ প্রতিবেদন : জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য

নারী পুরুষের টেকসই সমতা নিশ্চিতকরণকে অগ্রাধিকার দিয়ে ৮ই মার্চ বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়েছে।  উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের দেশের নারীদের ইতিবাচক এবং উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আরো এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন মানবাধিকারকর্মীরা। বিস্তারিত জানাচ্ছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের প্রতিবেদক রওজায়ে জাবিদা ঐশী। 

বিশ্বব্যাপী বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অনুন্নত থেকে উন্নয়নশীলের তালিকায় এখন বাংলাদেশ।

বর্তমানে বাংলাদেশে নারীদের অবস্থান কেমন এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন জোট-উইক্যানের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে বলেন, নারী ঘরে বাইরে দ্বিমুখী শ্রমের চাপে ভারাক্রান্ত।

জিনাত মনে করেন, নিঃসন্দেহে এ দেশের নারীরা অনেক এগিয়েছে এ কথাটা যেমন সত্য, আবার এটাও সত্য উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করলে আরো বহুদূর পথ এগিয়ে যেতে হবে তাদের। 

বর্তমান নারীরা নানা দুর্ভেদ্য পথ অতিক্রম করে নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করলেও অবস্থানের বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি বলে মনে করেন জিনাত।  

জিনাত বলেন, মূল্যবোধ এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নারীদের অনেক বেশি এগিয়ে আসা উচিত। পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সামাজিক চিন্তা ভাবনায় স্বচ্ছতা তৈরি করতে হবে।

নারীদের নিরাপত্তাহীনতার এই আধাঁর ভেঙ্গে একদিন আলোকিত হবে বাংলাদেশ এমনটিই প্রত্যাশা বিশ্লেষকদের। 

নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান, শ্রদ্ধা ও সংহতি জ্ঞাপন, নারীর আর্থিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবদমন প্রতিহত করা এবং নারীর বিরুদ্ধে নানামুখী আক্রমণ, সন্ত্রাস ও নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে নারীর মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রতিবছরই বিশ্বের নানা প্রান্তে উদযাপিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এবার ‘টেকসই আগামীর জন্য জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। 

সুপ্রিয় শ্রোতা, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই।

 মিয়াও জাতির সুযোগ্য কন্যা

নানা জাতির দেশ চীন। মিয়াও জাতির রয়েছে সুদীর্ঘ ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে ব্যবহার করে একজন নারী কিভাবে স্থানীয় অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করেছেন  এবং অন্য অনেক নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন শুনবো সেই গল্প।

মিয়াও এমব্রয়ডারিকে জনপ্রিয় করে তোলার পাশাপাশি এটিকে ব্যবহার করে অন্য অনেক নারীর জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙা করা যায়।

২০১৪ সালে মিয়াও জাতির নারী ওয়েই চুইং একটি সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। এতে স্থানীয় নারীদের যেমন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়, পাশাপাশি এলাকার জীবনমানও উন্নত হয়।

তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে  আমি ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসে প্রতিনিধি নির্বাচিত হই। আমার প্রস্তাব ছিল মিয়াও এমব্রয়ডারির উত্তরাধিকারকে  সংরক্ষণ করা। পাশাপাশি নারীর কর্মসংস্থান ও অবকাঠামো নির্মাণ। দুই অধিবেশনে আমি এই প্রস্তাব পেশ করি।

ওয়েই চুইং এর প্রস্তাব স্থানীয় সরকার স্তরে গৃহীত হয়। স্থানীয় সরকারের সহায়তায় প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতে থাকে। ওয়েই তার এলাকার ৩০০ নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন।

বর্তমানে তিনি মিয়াও এমব্রয়ডারি ও সংস্কৃতির সঙ্গে পর্যটনকে যোগ করেছেন। পর্যটকদের কাছে তুলে ধরছেন তার জাতির সংস্কৃতি। বিক্রি হচ্ছে মিয়াও এমব্রয়ডারিতে তৈরি বিভিন্ন পোশাক ও সামগ্রী। আরও ৩০০ নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে।

এভাবেই এগিয়ে চলেছেন মিয়াও জাতির সুযোগ্য কন্যা ওয়েই চুইং।

গান: ঠিক যেন স্বপ্নের মতো

চীনের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী না ইং। ১৯৬৭ সালে লিয়াওনিং প্রদেশের শানইয়াংয়ে জন্ম নেন  না ইং। ১৯৭৯ সালে তিনি যুবশিল্পী হিসেবে মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করেন। ১৯৮৩ সালে জাতীয় পর্যায়ের সংগীত প্রতিযোগিতায় ‘সানশাইন রিং’ সম্মাননা জয় করে তুমুল খ্যাতি পান। আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি না ইংকে।

বর্তমানে বিভিন্ন সংগীত সংগীত প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবেও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। এখন শুনবো না ইংয়ের কণ্ঠে একটি গান। গানটির শিরোনাম ‘ঠিক যেন স্বপ্নের মতো’

প্যারা-অলিম্পিকের মশালবাহী নারী

বেইজিং প্যারালিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী আসরে মশাল বহনকারীদের অন্যতম ইয়াং শুথিং একজন প্রতিবন্ধী নারী। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধিথতাকে অতিক্রম করে তিনি জীবনে সাফল্যের পথে এগিয়ে চলেছেন। এই অদম্য নারী বিষয়ে শুনবো একটি প্রতিবেদন।

বেইজিং প্যারালিম্পিকের আসরে মশাল বহন করেছেন ইয়াং শুথিং নামে একজন ক্রীড়াবিদ। তিনি তার শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে জয় করেছেন। উন্নত প্রযুক্তির বিশেষ ধরনের ক্রাচ ব্যবহার করে হাঁটা প্র্যাকটিস করতে হয়েছে তাকে। এটি ছিল এক বড় সম্মান।

তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধী মানুষদের প্রতিনিধি হয়ে শীতকালী প্যারালিম্পিকসে অংশ নিতে পেরে আমি সম্মানিত। আমি আশা করি সব ক্রীড়াবিদ শীতকালীন  ক্রীড়ার আনন্দ উপভোগ করতে পারবে এবং ভালো ফলাফল করবে।

ইয়াং শুথিং তার প্রতিবন্ধিতাকে জয় করার জন্য বদ্ধ পরিকর। স্থানীয় সরকারের সহায়তায় ইয়াং ২০১৬ সালে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এখানে দারিদ্র্য পীড়িত ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক প্রকল্পে নিয়োগ দেয়া হয়। এ পর্যন্ত তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৩০০ মানুষ উপকৃত হয়েছেন।

ইয়াং বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে আমি অনুভব করেছি যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমার মনে আছে জেনারেল সেক্রেটারি বলেছেন, প্রতিবন্ধী মানুষরা মানব সমাজে অবদান রাখতে পূর্ণভাবে উৎসাহী ও সক্ষম। ’

অদম্য নারী ইয়াং  ‍শুথিং এভাবেই নিজে যেমন এগিয়ে যাচ্ছেন সফলতার পথে তেমনি অন্য অনেক প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনে আশার আলো জ্বেলে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রেরণা দিচ্ছেন, পথ প্রদর্শন করছেন।

আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ ৯ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলার ওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা, উপস্থাপনা : শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী ও শান্তা মারিয়া

নারী দিবসের বিশেষ  প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

মিয়াও জাতির সুযোগ্য কন্যা এবং প্যারা-অলিম্পিকের মশালবাহী নারী প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া