সি চিনপিং এর নেতৃত্বে মুগ্ধ অধ্যাপক এন ব্রাউন
2022-03-04 17:29:48


সাজিদ রাজু, সিএমজি বাংলা ডেস্ক: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উইলিয়াম এন ব্রাউন। জন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হলেও এখন তিনি চীনের সিয়েমেনের মানুষ। চীন সরকার তাকে সেখানকার সম্মানিত নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৯ সালে পুরো চীন ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। মানুষের জীবনমানের উ্ন্নয়ন ও পরিবর্তনের রূপরেখা তাকে মুগ্ধ করেছে, আকৃষ্ট করেছে প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং এর নেতৃত্ব।

ফুচিয়ানের সঙ্গে নিজের ভাগ্যকে এক করে নিয়েছেন উইলিয়াম এন ব্রাউন। সিয়েমেনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের মতোই তিনি মুগ্ধ চীনের ইতিহাস-সংস্কৃতি ও জীবনাচারে। বিশেষ করে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং এর নেতৃত্বে।

খুব কাছ থেকে দেখা সি চিনপিংকে তাই মূল্যায়ন করেন বাস্তবতার নীরিখে। তুলে ধরেন নিজের দেখা সি চিনপিং এর গল্প।

প্রেসিডেন্ট সি সম্পর্কে তার মূল্যায়ন, তিনি সবার বন্ধু। কারণ তিনি মানুষকে বোঝেন, তাদের প্রত্যাশার কথা ভাবেন।

উইলিয়াম এন ব্রাউন, অধ্যাপক, সিয়েমেন বিশ্ববিদ্যালয়

“সি চিনপিং সম্পর্কে আমি প্রথম শুনি ১৯৮৮ সালে। তখন সিয়েমেনে থাকি। এটা সম্ভবত জুলাই মাস হবে, যখন তিনি নিংদে ছাড়েন।”

চীনের এক সময়ের দারিদ্র্যপীড়িত এলাকা নিংদেতে চালানো উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি ছিলো চীনের সবচেয়ে গরিব এলাকাগুলোর মধ্যে একটি। সেখানে তিনি চমৎকার কিছু কাজ করেন। নিংদেবাসীকে সহযোগিতা করতে চেয়েছেন।

১৫ বছর আগে কিছু বিদেশীকে চীনে নিয়ে আসেন তিনি। প্রায় ৮ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে যেতে হয় নিংদে এলাকায়।

“এরপর প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা পাহাড়ি পথ পেরিয়ে সেখানে পৌঁছাই।”

সি চিনপিং সেখানে টানা ২ বছর অবস্থান করেন এবং কঠোর পরিশ্রম করেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

“সেখানকার জীবনমান ছিলো খুবই খারাপ। কিন্তু তিনি বলতেন, সেখানকার পরিবেশ ছিলো অসাধারণ।”

নিংদে পৌছে সেখানকার সব জায়গায় তিনি গেছেন। সরাসরি নিজে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন।

“নিংদেতে অবস্থানকালে বেশি কিছু লেখালেখিও তিনি করেছেন। এসব চিন্তা ছিলো খুবই আধুনিক ও বলিষ্ঠ।”

প্রেসিডেন্ট সি যেভাবে কাজ করেছেন তা তার চিন্তারও বাইরে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি ভাবতেও পারেননি যে এক সময় সি চিনপিং চীনা জাতির নেতৃত্ব দেবেন।

“২০ বছর আগের সে চিন্তা, এখন দারিদ্র নেই।”

প্রেসিডেন্ট সি’র উৎসাহে একটি বই লেখেন এন ব্রাউন। ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে তাকে ভূষিত করা হয় ফুচিয়ানের সম্মানিত নাগরিক। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন সেদিন সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট সি বলেন, চীনা জনগণ বিশ্বকে বোঝে, কিন্তু বিশ্ব চীনকে বুঝতে চায়না।

সেই থেকে ‘ম্যাজিক সিয়েমেন’ বই এর আদলে কাজ শুরু করেন ‘ম্যাজিক কুয়াংচু’ লেখার। এরপরই তিনি কুয়াংচু’র ইতিহাস পড়তে শুরু করেন। কারণ এখানেই সামুদ্রিক সিল্ক রুটের শুরু। সে সময়ই প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বেল্ট অ্যান্ড রোড এর ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন।

“আমি অনেক বই ও আর্টিকেল লিখেছি। ‘অফ দ্য ওয়াল’ বই এর একটি কপি আমি তাকে পাঠাই। তার কাছে এটা ছিলো অপ্রত্যাশিত। তিনি যে এটি পাবেন আর আমাকে এর জবাবও দেবেন, তা আমি প্রত্যাশাও করিনি। তিনিও তার দুটি বই আমাকে পাঠান।”

সি চিনপিং ২০১৩ সালে হুনানের শিবাতোং গ্রামে বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে দারিদ্য দূর হতে পারে। এ কথা শুনে উল্লসিত হন তিনি। তবে ছিলো কিছুটা শঙ্কাও। এতো মানুষ, এতো বড় দেশ, এখানে এতো উন্নয়ন কী করে সম্ভব? এই প্রশ্ন জাগে তার মনে।

“সি চিন পিং এর উপর আমার আস্থা আছে। কারণ আমি দেখেছি, ফুচিয়ানে তিনি কী করেছেন।”

২০১৯ সালে আমি দ্বিতীয়বারের মতো পুরো চীন ঘুরে দেখেন উইলিয়াম ব্রাউন। ২০ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণে ঘুরে দেখেন চীনের বহু স্থান। তবে যেখানেই গেছেন, দেখেছেন সি চিনপিং এর ছবি।

“এর মানে হলো তিনি এরই মধ্যে সেখানে আছেন। সেখানকার বিষয়গুলো দেখছেন। নিংসিয়ার একজন কৃষক আমার উইচ্যাট অ্যাকাউন্ট থেকে স্ক্যান করতে চাইলেন। আমি বললাম, আপনি ইউচ্যাট ব্যবহার করেন? তিনি বললেন, নিশ্চই।”

এখানকার মানুষ তাকে জানায়, সবাই সব কিছু কেনা-বেচা করেন ইউচ্যাট ব্যবহার করে। একই পরিস্থিতি দেখেন তিব্বতেও।

“এ এক অসাধারণ দেশ।”

 

এক সময় ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে সি চিনপিং এর অসাধারণ উদ্যোগের প্রশংসা করেন তিনি।

“আমি জীবনের আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। হংকং এর হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। সি চিনপিং শোনার পর দুজনকে পাঠিয়েছেন আমাকে দেখতে, হাতে ফুলসহ। তিনি বলেছেন, আমি খুব শিগগিরই আমার দেশে ফিরতে পারবো। এ কথা শুনে আমার চোখে জল এসে যায়। আমি সত্যিই সিয়েমেন ও ফুচিয়ানে ফিরতে চেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রে নয়।”

একজন সাধারণ নাগরিকের মতো আর্থিক অবস্থা, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের প্রতি সি চিনপিং এর এমন মনোভাব কখনোই ভুলবেন না তিনি। মানুষের প্রতি এমন মমত্ববোধ থেকেই যে সি চিনপিং অনেক বড় নেতা হয়ে উঠেছেন সে কথাও ফুটে ওঠে উইলিয়াম ব্রাউনের মনে।