আজকের টপিক: নিক্সনের চীন সফরের ৫০ বছর প্রসঙ্গ
2022-03-03 14:40:25

মার্চ ৩: ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭তম প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন বিশেষ বিমানে বেইজিং পৌঁছান। তিনি গ্যাংওয়ে থেকে নামলে, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী চৌ এনলাই তাকে উষ্ণভাবে স্বাগত জানান। পরের সপ্তাহে, পশ্চিম ও প্রাচ্যের মধ্যে অগণিত উষ্ণ করমর্দন বিশ্বকে বদলে দেয়।

পঞ্চাশ বছর পরে, দুটি প্রধান শক্তির মধ্যে সম্পর্ক এখনও বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করছে। তবে, এ সম্পর্ক ৫০ বছর আগের বসন্তের থেকে আলাদা। আজকের চীন-মার্কিন সম্পর্ক ঠান্ডা, বরং হাড়-ঠাণ্ডা। সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে চীনের নান চিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষণালয়ের প্রধান এবং মার্কিন ইস্যুতে বিশেষজ্ঞ  অধ্যাপক  চু ফেং বলেন,

“খুবই ভাল একটি প্রশ্ন করেছেন যে, ‘আমরা কি ৫০ বছর আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছি, নাকি আমরা সত্যিকারের সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সুবিধার জন্য একটি নতুন সূচনাবিন্দুর দিকে যাচ্ছি?”

৫০ বছর পরের আজকের বসন্তে, ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে  দাঁড়িয়ে, আমরা ইতিহাস থেকে ভবিষ্যতের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি। ৫০ বছর আগে ‘এক সপ্তাহে বিশ্ব পরিস্থিতি বদলে দেওয়ার’ ঘটনাটি কেন ঘটেছিল? ওই ঘটনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পটভূমি দুটি: ১. নিক্সনের চীন সফরের আগে দু’দেশের সম্পর্ক ছিল ঠাণ্ডা ও স্নায়ুযুদ্ধের মুখোমুখি। নিক্সন দেখলেন যে, চীন দ্রুত উঠে আসছে এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে পরিণত হচ্ছে এক নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। একে আর উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। তিনি আরও মনে করলেন যে, চীনের প্রতি শত্রুতা পোষণ করার আর কোনো কারণ নেই, বরং দেশটির সঙ্গে সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

২. যুক্তরাষ্ট্র তখন চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন দেখতে পাচ্ছিল। সে প্রেক্ষাপটে তখন কিসিঞ্জারের চীন সফর ছিল তাঁর কূটনৈতিক প্রজ্ঞার প্রতিফলন।  বস্তুত, রিচার্ড নিক্সনের তখনকার সফরের উদ্দেশ্য ছিল দ্রুত শক্তিশালী হয়ে ওঠা চীনের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের বিরূপ সম্পর্কের সুযোগ কাজে লাগানো।

নিক্সনের চীন সফর কেবল চীন-মার্কিন সম্পর্কের দ্বার উন্মোচন করেনি, বরং কমরেড তেং সিয়াও পিংয়ের পরের চীনা নেতাদের সামনে বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল।

নিক্সনের সফর চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ভিত্তি স্থাপন করেছিল। ১৯৭৮ সালের শেষের দিকে, চীন তার সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি বাস্তবায়ন শুরু করে। কমরেড সিয়াও পিং তখন বলেছিলেন, যদি আগামী ৫০ বছর আমরা বড় কোনো যুদ্ধে না-জড়াই, তবে আমরা দেড় গড়ার কাজে মন দিতে পারব।

আসলে, আজ যে চীন বিশ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পেরেছে, তার সঙ্গে ৫০ বছর আগে রিচার্ড নিক্সনের বেইজিং সফরের একটা সম্পর্ক আছে। প্রশ্ন হচ্ছে: বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিবেশে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আবার সেই ‘স্বর্ণ যুগে’ ফিরে যেতে পারে কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, সহসা চীন-মার্কিন সম্পর্কে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনা কম। যদি যুক্তরাষ্ট্র আধিপদ্যবাদী আচরণ অব্যাহত রাখে, তবে দু’দেশের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও খারাপ হবার আশঙ্কা আছে। এখন দু’দেশের সম্পর্ক উন্নত করার চেয়েও বেশি প্রয়োজন সম্পর্কের আরও অবনতি ঠেকানো। আশা করি, দু’পক্ষের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন পর্যায়ের সংলাপের মাধ্যমে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের আরও অবনতি ঠেকানো সম্ভব হবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)