মার্চ ১: সম্প্রতি চীনের প্রথম গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান গবেষণাগার আন হুই শহরে উদ্বোধন হয়। এ ল্যাবের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে ‘চন্দ্র অনুসন্ধান প্রকল্পের চতুর্থ ধাপ’ এবং ‘গ্রহ অনুসন্ধান প্রকল্প গবেষণা ও নির্মাণ কাজ’ সম্পন্ন করা। এর মাধ্যমে গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য একটি নতুন মঞ্চও সৃষ্টি হলো।
গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান হলো মহাকাশ-গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীনের ছাংএ্যা-৪ মহাকাশযান প্রথম চাঁদের পিঠে সফ্ট ল্যান্ডিং করে ও চন্দ্রযান চাঁদের পৃষ্ঠে ঘুরে বেড়ায়। তারপর ছাংএ্যা-৫ মহাকাশযান প্রথম বারের মতো চন্দ্রের পৃষ্ঠ থেকে মাটি ও পাথর সংগ্রহ করে পৃথিবীতে নিয়ে আসে। তা ছাড়া, চীনে মঙ্গলগ্রহ ও সূর্য অনুসন্ধানের বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়নকাজও শুরু হচ্ছে। এমনি এক প্রেক্ষাপটে চীনের জাতীয় মহাকাশ ব্যুরো, আনহুই প্রদেশ এবং চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান গবেষণাগার উদ্বোধন করা হলো।
এ প্রসঙ্গে চীনের চন্দ্র অনুসন্ধান প্রকল্পের প্রধান নকশাকার উ ওয়েই রেন বলেন,
“গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান গবেষণাগারের প্রধান দায়িত্ব হবে: প্রথমত, চীনের গভীর মহাকাশ-গবেষণা প্রকল্পের জন্য প্রযুক্তিগত সমর্থন দেওয়া; দ্বিতীয়ত, গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান ক্ষেত্রে অগ্রসর, মৌলিক ও কৌশলগত গবেষণা চালিয়ে যাওয়া; তৃতীয়ত, পরবর্তী প্রকল্পের জন্য প্রযুক্তিগত সমর্থন দেওয়া। তা ছাড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা ও গবেষণার সাহায্যে একটি শিল্প গড়ে তোলা হবে। এটি চীনের মহাকাশ-গবেষণা খাতের উন্নয়নের জন্য চালিকাশক্তি যোগাবে। আর এ লক্ষ্যেই গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান গবেষণাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান গবেষণাগার অগ্রসর প্রযুক্তির সাহায্যে গড়ে উঠেছে। চীনের জাতীয় মহাকাশ অনুসন্ধান প্রকল্পগুলোর সংযোগে এটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকল্পের যৌথ উন্নয়নের নতুন গবেষণা সংস্থা হিসেবে কাজ করবে।
চীনের জাতীয় মহাকাশ ব্যুরোর মহাপরিচালক চাং খ্য চিয়ান এর আগে জানান, গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান গবেষণাগার ‘চন্দ্র অনুসন্ধান প্রকল্পের চতুর্থ ধাপ’ এবং ‘গ্রহ অনুসন্ধান প্রকল্প গবেষণা ও নির্মাণ কাজ’, আন্তর্জাতিক চন্দ্র গবেষণাগার গঠনের তাত্ত্বিক ও প্রাকৃতিক উপায় যাচাই করা এবং গ্রহাণু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ইত্যাদি বড় বড় গবেষণা প্রকল্পে নেতৃত্ব দেবে। তা ছাড়া, ল্যাবটি বড় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রসহ গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান ক্ষেত্রের বড় আকারের গবেষণা অবকাঠামোর গবেষণা ও নির্মাণ এবং চন্দ্রগ্রহে গবেষণাগার নির্মাণ, ইত্যাদি আন্তর্জাতিক বড় বৈজ্ঞানিক প্রকল্প ও সহযোগিতা প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বও পালন করবে।
এর আগে প্রকাশিত ‘চীনের মহাকাশ প্রকল্প-২০২১’ শ্বেতপত্র অনুযায়ী, আগামী ৫ বছরের মধ্যে গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান ক্ষেত্রে চীন পৃথকভাবে গ্রহ অনুসন্ধান প্রকল্প বাস্তবায়ন, গ্রহাণু অনুসন্ধানকারী মহাকাশযান পাঠানো, পৃথিবীর কাছাকাছি গ্রহাণু ও ধূমকেতু থেকে নমুনা সংগ্রহ, মঙ্গলগ্রহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা, এবং বৃহস্পতি গ্রহে অনুসন্ধান চালানো, ইত্যাদি খাতে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অর্জন করবে এবং সৌরজগতের শেষ সীমায় মহাকাশযান পাঠানোর প্রযুক্তি আয়ত্ব করবে।
উ ওয়েই রেন বলেন, এ ল্যাবের প্রতিষ্ঠা আন্তর্জাতিক প্রতিভাবান মানুষদের আকর্ষণের জন্য একটি মঞ্চ হিসেবে কাজ করতে পারে। তিনি বলেন,
“আমরা আশা করি, এ ল্যাব আন্তর্জাতিক প্রতিভাবান মানুষদের আকর্ষণের জন্য একটি মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে। তা ছাড়া, এটি গভীর মহাকাশ অনুসন্ধান ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দিক দিয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন উদ্ভাবনশীল সংস্থা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে পারে। আমাদের অনেক কাজ করতে হবে এবং তার ভবিষ্যতও উজ্জ্বল। এ ল্যাব সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হলে আমাদের দেশের মহাকাশ-গবেষণা অনেক এগিয়ে যাবে এবং এ শিল্পে আমরা নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবো।” (ইয়াং/আলিম/ছাই)