বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে যাত্রা শুরু করলো চীনের প্রথম জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি--সিবিসি
2022-02-28 14:54:31

গত ২২ ফেব্রুয়ারি সিবিসি ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে চীনের প্রথম জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি।

 

চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা ধারাবিহকভাবে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে অনেক চীনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আর্থ-বাণিজ্যিক পরিষেবা চালাচ্ছে, অর্থনৈতিক নির্মাণে অবদান রাখছে এবং সবশেষ সিবিসি পুঁজি বাজারে প্রবেশ করেছে। তবে বাংলাদেশের আরো অনেক ক্ষেত্রে বিরাট উন্নয়নের সুপ্তশক্তি ও চাহিদা রয়েছে। সিবিসি সঠিক সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রথম বিদেশি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এটি চীন-বাংলাদেশের মধ্যকার গভীর আর্থিক সহযোগিতার প্রতিফলন, যা দু’দেশের বাস্তব সহযোগিতা, বিশেষ করে চীনা প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নির্মাণে যোগদানে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক নিশ্চয়তা প্রদান করবে।

 

নতুন প্রতিষ্ঠিত চীন-বাংলাদেশ জয়েন্ট ভেঞ্চার এন্টারপ্রাইজের প্রতিষ্ঠা আসলে একটি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। এটি বাংলাদেশে চীনের এবং অন্যান্য দেশের বিনিয়োগকারীদের ব্যবসায়িক ব্যাংকিং সেবা দেয়ার চেষ্টা চালাবে। এ ছাড়া, বিদেশি ব্যবসায়ীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের পুঁজি বাজারের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

 

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি চিমিং অনলাইনে এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তাতে তিনি বলেন, সিবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটের এই যাত্রা বাংলাদেশের অগ্রসরমান শেয়ার বাজারকে আরও এগিয়ে নেবে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে এই যৌথ উদ্যোগের সূচনার ফলে একটি মূলধন ব্যবস্থাপনা প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে, যা বাংলাদেশে চীনা ও অন্যান্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য মার্চেন্ট ব্যাংকিং পরিষেবার পথকে আরও সুগম করবে।

 

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম এবং শাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে ফলপ্রসূ কৌশলগত অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গড়ে উঠা এই সহযোগিতা দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও গভীরতর করবে। পাশাপাশি, দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সার্বিক উন্নয়নে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

 

চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান অনলাইনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেন, ‌বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়াতে চাইনিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন অর্থাত্ সিইএবি যে ভূমিকা পালন করছে, তা তাঁকে মুগ্ধ করেছে। ২০২১ সালেও মোট বিনিয়োগের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম বড় নাম চীন। বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেটে সিইএবির সংযুক্তি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরো বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন চীনা প্রতিষ্ঠান মূল-ভূভাগের বাইরের বাজার (যেমন: হংকং, নিউইয়র্ক, লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ (এলএসই) ইত্যাদি) সম্প্রসারণ করতে শুরু করেছে। তাদের শেয়ার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সাড়া লাভ করেছে। বাংলাদেশের দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতি চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় ও কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ স্থান। ভাল কর্পোরেট গভর্নেন্স সহ যোগ্যতাসম্পন্ন চীনা প্রতিষ্ঠান ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে নিজেদের স্বার্থ খুঁজে বের করার পাশাপাশি বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদেরও লাভবান করবে।

 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান এসইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশ শুধু নিজেদের অর্থনৈতিক সাফল্য দেখে না, বরং উভয় পক্ষের লাভজনক অবস্থানকে সমর্থন করে। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আপনারা আপনাদের ব্যবসায়ীক প্রস্তাব নিয়ে আসুন। কীভাবে আপনারা এবং দেশ (বাংলাদেশ) উভয় পক্ষই মুনাফা করতে পারে, তা আমরা দেখবো। এটা কোনো উপহার কিংবা ঋণ নয়। চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্কে দুই পক্ষের লাভজনক অবস্থানের পক্ষে আমরা।”

 

সিবিসির হোল্ডিং কোম্পানি লিজ গ্রুপ হচ্ছে গত প্রায় ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশে চীনা প্রতিষ্ঠানের একটি রোল মডেল। গ্রুপটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গভীরভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে। এবার এটি বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত প্রথম বিদেশি নিয়ন্ত্রিত পূর্ণাঙ্গ মার্চেন্ট ব্যাংকারে পরিণত হয়েছে।

 

লিজ গ্রুপ এবং সিবিসি ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট চুয়াং লিফেং বলেন, দীর্ঘকালের তদন্ত, জরিপ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে  বাংলাদেশে প্রথম চীনা নিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে “দক্ষিণ এশিয়ার বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রশাসন ব্যবস্থার সবচেয়ে অবাধ দেশ” হিসেবে মূল্যায়ন করেছে। বাংলাদেশের বাজারে আরো বিশাল উন্নয়ন স্পেস রয়েছে। সিবিসি প্রতিষ্ঠা ছোট একটি পদক্ষেপ হলেও এটি চীনা প্রতিষ্ঠানসহ বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশের পুঁজি বাজারে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ। তিনি আশা করেন, তাঁদের প্রচেষ্টাটি অন্যান্য চীনা প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন ধারণা ও উন্নয়ন স্পেস তৈরি করবে। ফলে আরো বেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে শিল্প প্রতিষ্ঠা ও পুঁজি বিনিয়োগে উত্সাহী হবে।

 

কোভিড-১৯ মহামারী অনেক চ্যালেঞ্জ ডেকে আনছে। তবে ব্যক্তি মালিকাধীন খাতের বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভাল রয়েছে। অর্থনীতির ধারাবাহিক পুনরুদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে আরো বেশি চীনা বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের বিরাট উন্নয়ন ভবিষ্যতে ভরসা রাখে। অনুমান করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে আরো অনেক বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বাজার সম্প্রসারণ করবে।

 

সিবিসি’র প্রতিষ্ঠা “এক অঞ্চল এক পথ” এর আওতায় উচ্চমানের, টেকসই এবং গণজীবিকা উন্নয়নের পক্ষে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সিবিসি তার নিজস্ব অগ্রগতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি অন্যান্য চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা জোরদার করছে। বাংলাদেশে চীনা প্রতিষ্ঠানসমূহের উচ্চমানের উন্নয়নে নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি আরো বেশি আগ্রহী চীনা প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে উন্নয়ন সুযোগ খুঁজে বের করতে সহায়কের ভূমিকা পালন করছে সিবিসি।

 

২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে যাবে। বাংলাদেশ তার "ভিশন ২০৪১" বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। চীন তার উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে দেশটির সাথে আরও বাস্তব সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। সিবিসি ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এ ক্ষেত্রে সেতুর ভূমিকা পালন করে চীনা প্রতিষ্ঠানসমূহের স্থানীয় পুঁজিবাজারে প্রবেশ ত্বরান্বিত করবে। ফলে দু’দেশের মধ্যে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার হবে এবং চীন-বাংলাদেশ অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি নিশ্চিত হবে।

 

(প্রেমা/এনাম/আনন্দী)