সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আইন অনুযায়ী গঠিত হলো নির্বাচন কমিশন। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসি ও চারজন নির্বাচন কমিশনার পেল বাংলাদেশ। রোববার শপথ নিয়েছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ও চার নির্বাচন কমিশনার।
সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদার নেত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের স্থলাভিষিক্ত হলেন তারা। ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে আগেরে নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। নতুন নির্বাচন কমিশনের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনার মাধ্যমে একটি অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা।
২৬ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ সিইসি হিসেবে নিয়োগ দেন সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান। তাদের নিয়োগের ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এর আগে নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত সার্চ কমিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, পেশাজীবি সংগঠন, ব্যক্তি পর্যায় থেকে প্রস্তাবিত ৩২২ জনের মধ্য থেকে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে ২২ ফেব্রুয়ারি। ২৪ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে এই তালিকা হস্তান্তর করে। সে তালিকা থেকে ৫ জনকে নিয়োগ দিলেন রাষ্ট্রপতি।
স্বাধীনতার পর এবারই আইন অনুযায়ী প্রথম ইসি গঠিত হলো। এ জন্য গত ২৭ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ জাতীয় সংসদে পাস হয়।
এরপর আইনানুযায়ী ইসি গঠনে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ের জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতি করে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকে নাম সুপারিশের জন্য সময় দেয়া হয় ১৫ কার্যদিবস। তাদের সময় ২৭ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কমিটি ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পন্ন করে। কমিটি নিজেদের মধ্যে সাতটি বৈঠক করেছেন। ইসি গঠনে পরামর্শ নিতে গত ১২, ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মোট তিন দিনে চার দফায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মোট ৪৭ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বৈঠক করে সার্চ কমিটি।
সবকিছু মিলিয়ে দৃশ্যত সার্চ কমিটি তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাসময়ে শেষ করেছে।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নতুন নির্বাচন কমিশনকে স্বাগত জানিয়েছে। এ কমিশন দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। একই সঙ্গে নেতারা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সকলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন উপহার দিতে নতুন ইসিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে যথারীতি প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নতুন নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে নিস্পৃহ ভাব দেখিয়েছে। দলটির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারই মুখ্য বিবেচনার বিষয়, নির্বাচন কমিশন নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয় বলে আগের অবস্থানে অনঢ় তারা।
নতুন নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জটাও ঠিক এ জায়গাটিতে। আগের নির্বাচন কমিশনের মতো নতুন নির্বাচন কমিশনকেও আমলে নিচ্ছে না বিএনপি। নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপেও যায়নি বিএনপি। কমিশন গঠনে প্রস্তাব করেনি কোনো নাম।
নতুন নির্বাচন কমিশনকে এখন শুধু তাদের রুটিন দায়িত্ব পালন করলেই চলবে না। কীভাবে প্রধান বিরোধীদল বিএনপির আস্থা অর্জন করে বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করা যাবে- সেটিই হবে তাদের অগ্নিপরীক্ষা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারাও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেছেন। কাজেই এটা ধরে নেওয়া যায় তারা আশা করছেন বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে আসবে।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালও গণমাধ্যমে দেওয়া তার প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। বলেছেন- আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমস্যা নেই। বিএনপির নাম উল্লেখ না করে তিনি তাদের নির্বাচনে আসার আবেদন জানান।
তবে শুধু আবেদন বা আহ্বানে সীমাবদ্ধ না থেকে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন করে তাদের নির্বাচনমুখী করাটাই হবে নির্বাচন কমিশনের গুরু দায়িত্ব। জাতির প্রত্যাশা নতুন কমিশন সে দায়িত্ব পালনে তৎপর হবে।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।