রাশিয়া ও ইউক্রেন সংকট সমাধানে প্রয়োজন দু’পক্ষের সংলাপ
2022-02-26 17:22:02

রাশিয়া ও ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলের সবচেয়ে আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি এক জরিপে বলা হয়েছে- ইউক্রেনে ৭১ ভাগ মানুষ বিশ্বাস করে যে, তাদের দেশ ইতোমধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘ এ সংকট এড়াতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মিনস্ক চুক্তি বাস্তবায়িত হয় নি। এদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্রিটেন, কানাডা, আমেরিকা এখন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা-সহ নানা ধরনের কূটনৈতিক বল প্রয়োগের পথ অবলম্বন করছে। তবে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিবদমান দুই পক্ষের আলোচনা এবং  আন্তর্জাতিক মহলকে স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা বাদ দিয়ে বাস্তবভিত্তিক সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখা উচিত।

 

পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো কিয়েভের বিরুদ্ধে মস্কোর সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার নানা ধরনের খবর প্রচার করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যুদ্ধের নানা ধরনের ভ্রান্ত ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। বাস্তবতার চেয়ে স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা ও উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়ার চূড়ান্ত চেষ্টার ছাপ দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট। জানা গেছে, রাশিয়ার সঙ্গে অস্ত্রবিরতি নিয়ে আলোচনায় প্রস্তুত আছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি। আলোচনার জন্য সম্ভাব্য তারিখ ও ভেন্যু নিয়ে ক্রেমলিনের সঙ্গে কথা বলছে কিয়েভ। জেলেনস্কির মুখপাত্রের বরাতে রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি এ তথ্য জানিয়েছে।

শুক্রবার ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান সম্পর্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক খসড়া প্রস্তাবে ভিটো দিয়েছে মস্কো। চীন, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ভোটদানে বিরত থাকে। নিরাপত্তা পরিষদের বাকি ১১ সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো রাশিয়াকে একঘরে করার জন্য এ প্রস্তাব এনেছিল। প্রস্তাবটি এখন ১৯৩ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যাবে।

 

শুক্রবার বিকেলে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। পুতিন ইউক্রেন সমস্যার ইতিহাস এবং ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার যৌক্তিক নিরাপত্তা উদ্বেগ উপেক্ষা করে নিজের প্রতিশ্রুতি লংঘন করে পূর্ব দিকে সামরিক প্রভাব সম্প্রসারণ করে আসছে। তা রাশিয়ার মৌলিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ। তবে রাশিয়া ইউক্রেনের সাথে আলোচনা করতে ইচ্ছুক। চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, সম্প্রতি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি অবনতি ঘটছে। তাতে আন্তর্জাতিক সমাজ খুব উদ্বিগ্ন। চীন ইউক্রেন বিষয়ের যৌক্তিকতা অনুযায়ী নিজের অবস্থান নির্ধারণ করে। স্নায়ুযুদ্ধের চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের যৌক্তিক চিন্তা বিবেচনা করা উচিত।

 

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার জন্য বেলারুশের মিনস্কে তাদের একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে রাজি আছে৷ এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন। পেসকভ বলেন, ‘‘জেলেনস্কির প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপতির প্রশাসনিক পর্যায়ের প্রতিনিধিদের একটি দল পাঠাতে প্রস্তুত ভ্লাদিমির পুতিন।’’

আলোচনার জন্য পুতিন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে সম্ভাব্য নিরাপদ ভেন্যু নিয়ে কথা বলেছেন বলেও জানা গেছে৷ 

শুক্রবার দোনেস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সারগেই লাভরভ বলেন যে, ইউক্রেনের বাহিনী ‘তাদের প্রতিরোধ বন্ধ করে অস্ত্র সমর্পণ করলে  রাশিয়া ইউক্রেনের সাথে যে কোন সময় আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’

 

এদিকে, রয়টার্সের খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় শনিবার এক ফেসবুক পোস্টে জেলেনস্কির মুখপাত্র সের্গি নিকিফোরভ বলেন, অস্ত্রবিরতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আলোচনায় ইউক্রেন আগেও প্রস্তুত ছিল, এখনো আছে।’ নিকিফোরভ আরও বলেন, আলোচনার তারিখ ও ভেন্যু নির্ধারণ নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে আলাপ চলছে।

 

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটি। ইউক্রেনের বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স এ খবর জানায়। কিয়েভ সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয় ‘এ মুহূর্তে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় লড়াই চলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও এ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে এবং জানালা ও ব্যালকনির কাছে না আসতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।’

 

এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিপুল কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। জো বাইডেন পরিষ্কার করে বলেছেন যে, রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে আমেরিকানদের যুদ্ধে যাওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই। সেরকম কোন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে ইউক্রেন থেকে মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধার করতেও কোন মার্কিন সেনা যে পাঠানো হবে না, সেটাও তিনি স্পষ্ট বলে দিয়েছেন। একই সঙ্গে ইউক্রেনে যে অল্প কিছু মার্কিন সামরিক উপদেষ্টা এবং পর্যবেক্ষক ছিল তাদেরকেও তিনি ফিরিয়ে এনেছেন।

 

অবস্থাদৃষ্টে এটা স্পষ্ট যে মস্কো ও কিয়েভকেই মূলত এই অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। অনতিবিলম্বে আলোচনার টেবিলে ফিরে যাওয়া এবং মিনস্ক চুক্তির দিকে এগোলেই অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংকটের সমাধান সম্ভব হবে।