চীনে গ্রামীণ পুনর্জাগরণের এক নম্বর নথি প্রকাশিত
2022-02-24 15:13:11

ফেব্রুয়ারি ২৪: চলতি বছরের গ্রামাঞ্চলের পুনর্জাগরণের মূল কাজ নিয়ে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির রাষ্ট্রীয় পরিষদের মতামত তথা ২০২২ সালের সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় এক নম্বর নথি সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

 

এটি হলো  একবিংশ শতাব্দীতে গ্রাম, কৃষক ও কৃষি-বিষয়ক কাজের নির্দেশনা সম্বলিত ১৯তম কেন্দ্রীয় এক নম্বর নথি। তাতে বলা হয়, জাতীয় খাদ্যশষ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দারিদ্র্যের দিকে বৃহৎ আকারে প্রত্যাবর্তন রোধ করার দুটি চূড়ান্ত সীমায়  দৃঢ়ভাবে টিকে থাকা এবং সয়াবিন ও তৈলবীজের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর প্রকল্প জোরালোভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত্, যাতে যত বেশি সম্ভব চীনা তেল দিয়ে ‘তেলের বোতল’ পূরণ করা যায়।

 

চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্যকার্যালয় গতকাল (বুধবার) অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কেন্দ্রীয় এই নথি’র সংশ্লিষ্ট নীতিমালা ব্যাখ্যা করেছে। গ্রামের কাজ-বিষয়ক কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃস্থানীয় গ্রুপের কার্যালয়ের পরিচালক এবং কৃষি ও গ্রাম মন্ত্রী থাং রেন চিয়েন বলেন,

 ‘দু’টি চূড়ান্ত সীমা মানে জাতীয় খাদ্যশস্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দারিদ্র্যের দিকে বৃহৎ আকারে প্রত্যাবর্তন রোধ করা। খাদ্যশস্যের উত্পাদন ও গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পণ্যের সরবরাহের ওপর গুরুত্বারোপ করা এবং ১.৮ বিলিয়ন মু’র (১২ কোটি হেক্টর) আবাসিক জমি নিশ্চিত করা, শস্যের বপন করা এলাকা স্থিতিশীল করে তোলা, উত্পাদনের পরিমাণ ১.৩ ট্রিলিয়ন চিনেরও(৬৫ কোটি টনেরও) বেশি নিশ্চিত করা, মনিটরিং এবং সহায়তা ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ করে তোলা, দারিদ্র্যমুক্ত এলাকায় উন্নয়নের ওপর নির্ভর করে দারিদ্র্যবিমোচনের ফলাফল সুসংহত করা এবং বড় আকারে দারিদ্র্যে প্রত্যাগমন রোধ করা ।

 

খাদ্যশস্য হলো সবচেয়ে মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক পণ্য। থাং রেন চিয়েন বলেন, আমাদের দেশের শস্যের উত্পাদনের পরিমাণ টানা ৭ বছর ধরে ১.৩ ট্রিলিয়ন চিনেরও (৬৫ কোটি টনেরও) বেশি। পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ এবং পর্যাপ্ত মজুদ আছে। আন্তর্জাতিক খাদ্য মূল্যের ব্যাপক বৃদ্ধি এবং মহামারী বিপর্যয়ের প্রভাবের প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশের শস্যের দাম প্রায় স্থিতিশীল আছে।

 

বাজারও স্থিতিশীল রয়েছে। এ থেকে পুরোপুরি প্রমাণিত হয় যে, আমাদের দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা খাদ্যশস্যের সরবরাহের ওপর নির্ভর করতে সম্পূর্ণ সক্ষম এবং আত্মবিশ্বাসী। সঙ্গে সঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, খাবারের বিষয়ে আমরা চিন্তামুক্ত হয়েছি, তা কিন্তু নয়।

 

থাং স্বীকার করেন, বর্তমানে চীনে সয়াবিন তেলের স্বয়ংসম্পূর্ণতার হার তুলনামূলকভাবে কম। গত বছর চীন ৯ কোটি টনের বেশি এবং তার আগের বছর প্রায় ১০ কোটি টন সয়াবিন আমদানি করেছিল। চলতি বছরে কেন্দ্রীয় এই নথিতে সয়াবিন ও তৈলবীজের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর প্রকল্প জোরালো করার দাবি উত্থাপন করা হয়। ভবিষ্যতে  ‘তেলের বোতলে’ যত বেশি সম্ভব চীনের উত্পাদিত তেল সম্পূর্ণরূপে দিতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার ও দুটি সম্পদ ব্যবহার করা যাবে।

থাং রেন চিয়েন বলেন,

 ‘বর্তমানে দেশীয় সয়াবিন খাদ্য খরচের চাহিদা মেটাতে পারে, অর্থাৎ চীনাদের তৌফু এবং সয়া পণ্য খাওয়ার চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। আমদানিকৃত সয়াবিন প্রধানত ভোজ্য উদ্ভিজ্জ তেল এবং পশুপালন খাদ্য প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে পরের তিনটি ক্ষেত্রে কাজ করা যাবে। প্রথমত: চীনের উত্তরপূর্বে সয়াবিন উত্পাদনের এলাকা পুনরুদ্ধার করা, দ্বিতীয়ত: সয়াবিন এবং ভুট্টার স্ট্রিপগুলোর যৌগিক রোপণকে সক্রিয়ভাবে উন্নত করা, এবং তৃতীয়ত: সক্রিয়ভাবে তৈলবীজের উত্পাদন বিকাশ করা, একাধিক তেল এবং একাধিক ব্যবস্থার একযোগে বিকাশের মাধ্যমে ৫-১০ বছরের প্রচেষ্টার পরে সয়াবিন এবং তৈলবীজের স্বয়ংসম্পূর্ণতার হার ব্যাপকভাবে উন্নত করা যাবে।’

 

ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনের গ্রাম গবেষণা-বিষয়ক ইনস্টিটিউটের ডেপুটি প্রধান চাং হোং ইউ সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, এই নথিতে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তাকে দৃঢ়ভাবে সুরক্ষিত করার উপর জোর দেওয়ার কারণ হল: খাদ্য নিরাপত্তা সামগ্রিক পরিস্থিতির সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন,

 ‘চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে আমরা সমস্ত খাদ্য সরবরাহের দিকে চাপের মধ্যে আছি এবং এই চাহিদাটি আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিবর্তন থেকে আসে। গত বছর কৃষি পণ্যে আমাদের ঘাটতি প্রথমবারের মতো ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে এবং সয়াবিনসহ আমাদের খাদ্য আমদানি শীর্ষে পৌঁছেছে। এই প্রেক্ষাপটে চীন এমন প্রস্তাব দিয়েছে যে, খাদ্য সামগ্রী নিরাপত্তা পরিস্থিতির সঙ্গে জড়িত। তাই চীনের উত্পাদিত শস্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা উচিত্’।

লিলি/এনাম/শুয়ে