চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বহুবার প্রবীণদের কাজকে শক্তিশালী করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, “বিপুল সংখ্যক প্রবীণ জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন চাহিদা মেটানো এবং বয়স্ক জনসংখ্যার দ্বারা সৃষ্ট সামাজিক সমস্যাগুলো যথাযথভাবে সমাধান করা দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং জনগণের মঙ্গলের সাথে সম্পর্কিত। এটা মোকাবিলা করতে আমাদের আরও প্রচেষ্টা প্রয়োজন”।
সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ চতুর্দশ পাঁচশালা পরিকল্পনায় দেশের বয়স্কদের শিল্প উন্নয়ন ও সেবা ব্যবস্থা বিধান প্রকাশ করেছে। বিধানে বলা হয়েছে, চতুদর্শ পাঁচসালা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় বয়স্কদের শিল্প উন্নয়ন, মৌলিক ও সবার জন্য কল্যাণকর এবং বৈচিত্র্যময় সেবা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যাতে বয়স্কদের সুখী ও নিরাপদ জীবন সুনিশ্চিত হতে পারে।
চীনের উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের সামাজিক উন্নয়ন বিভাগের উপমহাপরিচালক হ্য ফু ছিং বলেছেন, এ বিধান প্রধানত বয়স্কদের জরুরি, কঠিন ও প্রত্যাশাপূর্ণ বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করবে। সকল বয়স্কদের মৌলিক সেবা প্রদান করা হবে। যারা একা একা থাকেন এবং সক্ষম নয়, তাদের সেবা নিশ্চিত করা হবে। বয়স্কদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করবে। যাতে বয়স্কদের বৈচিত্র্যময় চাহিদা মেটানো যায়। খাওয়া-দাওয়া, যাতায়াত, যত্ন ও সুস্থতা এবং সংস্কৃতিসহ নানা ক্ষেত্রে তাদের গুণগত মানসম্পন্ন সেবা প্রদান করা হবে।
২০২০ সালের সপ্তম গণজরিপ অনুযায়ী, চীনে বয়স্কদের সংখ্যা ২৬ কোটি ৪০ হাজার জন ছাড়িয়েছে। চুতর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার শেষ পর্যন্ত এ সংখ্যা ৩০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। চীনের নতুন বিধানে বলা হয়, চীন এ সমস্যা সমাধানে সক্ষম। বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংখ্যা একাডেমীর মহাপরিচালক ছেন কোং বলেন, চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার সময় চীনে জনসংখ্যার কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটবে। বয়স্ক হওয়ার গতি বেড়ে যাওয়া সমস্যা সমাধানে এবারের বিধানে তিনি আস্থা দেখছেন বলেও জানান।
বয়স্কদের সামাজিক নিরাপত্তা, চিকিত্সাসহ নানা ক্ষেত্রের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিধানে বলা হয়েছে, বয়স্কদের বীমার আওতা বাড়ানো হবে। মূল নীতি নিখিল চীনে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত বয়স্কদের চিকিত্সায় ব্যবহৃত ওষুধ ব্যাপক পরিমাণে বীমার আওতাভুক্ত করা হবে। যাতে বয়স্কদের চিকিত্সার খরচ কমে যায়।
বর্তমানে চীনের ৯০ শতাংশ বয়স্ক নিজের বাড়ীতে অবসর জীবন কাটান। বাকি ৭ শতাংশ বয়স্ক কমিউনিটির ব্যবস্থায় এবং ৩ শতাংশ ব্যবসায়িক সংস্থার ব্যবস্থায় অবসর জীবন কাটান।
চীনের শাংহাইয়ের হুয়াং পু অঞ্চলের আন্টি স্যু চলাফেরা করতে পারেন না। তার স্বামী হ্য’র বয়স ৮০ বছরের বেশি। তারা নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫,৮০০ ইউয়ান খরচ করে নানা রকম সেবা গ্রহণ করেন। নার্স ইয়াং ছুন হুয়া বলেছেন, “আমি প্রতি সপ্তাহে একবার আন্টি স্যু’র বাড়ীতে আসি। প্রধানত তাদের রক্তের চাপ, রক্তের শর্করা এবং হার্ট রেট মাপি এবং তাদের ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিই”।
নার্স সিয়াও ইয়াং প্রতি সপ্তাহে একবার আসা ছাড়াও অন্য তিনজন সেবিকা সপ্তাহে ছ’দিন তাদের বাড়ীতে সেবা দিতে যান। সেবিকা সিয়াও চাং পুনর্বাসন ম্যাসেজ ও রান্না করে দেন। প্রতিদিন সকাল দশটায় তিনি আন্টি সু’র বাড়ীতে এসে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এবং মাসাজ করেন। লাঞ্চ করার পর তিনি চলে যান।
হ্য বলেন, “তারা সবই মানদন্ড অনুযায়ী করছেন। খুব ভালো করছেন এবং আমরা অনেক সন্তুষ্ট”।
রুবি/এনাম