ফেব্রুয়ারি ২৩: সম্প্রতি চীনের বিভিন্ন জায়গায় বৈদেশিক বাণিজ্যের সফলতা-সংক্রান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, যার সবই ‘আঞ্চলিক সার্বিক অর্থনৈতিক অংশীদারি সম্পর্ক চুক্তি’ (আরসিইপি) কার্যকর হওয়ার পর অর্জিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, আরসিইপি’র বাস্তবায়ন শক্তিশালীভাবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারকে এগিয়ে নিয়েছে, এটি চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের স্থিতিশীল উন্নয়ন মজবুত করায় নতুন চালিকা শক্তি যুগিয়েছে। চীনের উন্নয়নের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে বিশ্বের জন্য একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করেছে এই চুক্তি। আজকের টপিক অনুষ্ঠানে আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করবো।
চীনের আনহুই প্রদেশের থুং লিং জেলার ‘চিং তা লি ইয়া থ্য’ লিমিডেট কোম্পানি হচ্ছে এক পেইন্ট নির্মাণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান, এর উত্পাদিত পণ্য প্রধানত জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে ‘আরসিইপি’র নতুন নীতি কাজে লাগিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় শুল্ক বিভাগের মাধ্যমে বিশেষ সনদের আবেদন করে। সনদপত্র পাওয়ার পর তারা দেশগুলোতে সংশ্লিষ্ট শুল্ক মৌকুফ সুবিধা লাভ করবে। এভাবেই জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের রপ্তানিকৃত পণ্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শক্তি উন্নত হয়েছে। এই সম্পর্কে কোম্পানিটির মহাব্যবস্থাপক ওয়াং লিন বলেন,
‘থুং লিং’ শুল্ক বিভাগের সাহায্যে ইতোমধ্যেই ৭ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে আমাদের কোম্পানি। এই প্রক্রিয়ায় ২ লাখ ৪৫ হাজার ইউয়ানের শুল্ক লাভ হয়েছে। এটি আমাদের আরও গভীর আন্তর্জাতিক বিনিময় ও সহযোগিতায় শক্তিশালী সমর্থন দিয়েছে’।
বসন্ত উত্সব থেকে ১০০টির বেশি চীন-ইউরোপ রেলওয়ে এক্সপ্রেস ইয়াংজি নদীর ব-দ্বীপ থেকে রওয়ানা হয়ে ছোট্ট আকারের পণ্য, যান্ত্রিক সাজ-সরঞ্জাম এবং স্মার্ট যন্ত্রপাতিসহ ‘মেড ইন চায়না’ পণ্য মধ্য এশিয়া এবং ইউরোপে পাঠিয়েছে। পাশাপাশি, ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার তৈরী গাড়ির স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রাংশ এবং প্লেটসহ ।সেক পণ্য চীনে আমদানি হয়েছে। ছিংতাও বন্দর থেকে ১০০টিরও বেশি কন্টেইনার লাইনার আরসিইপি’র সদস্য দেশগুলোর বিভিন্ন বড় বন্দরে পাঠানো হয়েছে।
এই সম্পর্কে শান তুং বন্দর ছিংতাও কন্টেইনার পিয়ারের উপ-মহাব্যবস্থাপক চাং জুন বলেন,
‘প্রতিদিন আমাদের কন্টেইনার দেওয়া-নেওয়ার সংখ্যা ৩০ হাজারটিরও বেশি। এর মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ হচ্ছে আরসিইপি’র সদস্য দেশগুলোর পণ্য’।
পরিসংখ্যানে বলা হয়, আরসিইপি’র কল্যাণে শাংহাই শুল্ক বিভাগে প্রথম মাসে আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের মূল্য হয়েছে ২ বিলিয়ন ইউয়ান, হ্য নান প্রদেশে ১৬ বিলিয়ন ইউয়ানের পণ্যের শুল্ক মৌকুফ করা হয়। আরও অনেক জায়গায় আরসিইপি’র সুবিধা সবাই ভোগ করছে। চীনের আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ওশেনিয়া বিভাগের উপমহাপরিচালক লুও ইয়ুং খুন বলেন,
‘আরসিইপি’র আওতায় এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান বড় দেশগুলো রয়েছে। আরসিইপি’র কাঠামোতে এই দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা চালানো আরও সুবিধাজনক হয়েছে। এটিও চীনের আন্তর্জাতিক বড় চক্র বজায় রাখার এক গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল। পাশাপাশি, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশেগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বের কাছে নতুন উন্নয়নের সুযোগ খুঁজে বের করাকে এগিয়ে নিয়েছে চীন। এই ক্ষেত্র থেকে বোঝা যায় যে, আইসিইপি চীনা অর্থনীতির বিশ্বায়নকে বেগবান করবে’।
কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে দুর্বল হয়ে পড়েছে। মালামাল পরিবহন, কাঁচামাল খরচ এবং জ্বালানি দামসহ বিভিন্ন কারণে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বোঝা আরও ভারী হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ‘অভূতপূর্ব’ বৈদেশিক বাণিজ্যিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ায় আরসিইপি এবং চীনের ধারাবাহিক অবাধ বাণিজ্য চুক্তি গোটা বছরের বৈদেশিক বাণিজ্য এবং বৈদেশিক পুঁজির স্থিতিশীল করায় চালিকাশক্তি যুগিয়েছে। (ওয়াং হাইমান/এনাম/ছাই)