আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষিত হয় বেইজিং শীত্কালীন অলিম্পিক গেমসে
2022-02-23 10:34:02

মহাসমারোহে গত ৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বেইজিং শীত্কালীন অলিম্পিক গেমস। তাতে ৯১টি দেশ ও অঞ্চল থেকে আসা ক্রীড়াবিদগণ বিশ্বকে চমত্কার তুষার ও বরফ প্রতিযোগীতা উপহার দিয়েছেন। তবে মহামারি এবারের অলিম্পিক গেমসে অভূতপূর্ব প্রভাব ফেলেছে। যেমন: মহামারির কারণে টিকেটের উন্মুক্ত বিক্রি বন্ধ ছিল। ফলে টিকেটের আয় কমে যায়।

 

অলিম্পিক গেমস আয়োজনের বিশেষ তাত্পর্য রয়েছে। যে কোন একটি দেশ ও শহরের জন্য অলিম্পিক গেমসের আয়োজনকে উপার্জিত অর্থের সঙ্গে মেলানো সঙ্গত হয় না। কিন্তু সবাই জানতে চায়, বেইজিং শীত্কালীন অলিম্পিক গেমস আয়োজনে কত লাভ বা ক্ষতি হয়েছে? আসলে শীত্কালীন অলিম্পিক গেমস আয়োজনে টানা ১১ বছর ধরে সবাই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীণ হচ্ছে। ফলে শীত্কালীন অলিম্পিক গেমসকে অভিশাপ বলেও ডাকা হয়। কারণ শীত্কালীন অলিম্পিক গেমস আয়োজনে প্রচুর তুষার ও বরফ দরকার হয়।  তবে যে অঞ্চলে প্রচুর বরফ ও তুষার আছে, সেসব এলাকা উন্নত নয়। তাই সেসব স্থানে শীত্কালীন অলিম্পিক গেমস আয়োজন করতে অবকাঠামো নির্মাণে বিশাল অর্থ প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি, অলিম্পিক গেমস শেষে অনেক দেশই স্থানীয় বৈশিষ্ট্য ও গেমসের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পারে না। তাই অলিম্পিক গেমস আয়োজনে আর্থিক ক্ষতি স্বাভাবিক একটি ব্যাপার।

 

এবারের বেইজিং শীত্কালীন অলিম্পিক গেমসের কেন্দ্রীয় ধারণা ছিল অলিম্পিকের মিতব্যয়ী আয়োজন। তাই অন্য দেশের তুলনায় এবার বেইজিং বেশি বিনিয়োগ করেনি। সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি এবং স্টেডিয়াম নির্মাণের বাজেট ছিল যথাক্রমে ১৪৬ ও ১৫২ কোটি মার্কিন ডলার। মোট ৩০০ কোটি ডলার। তা ২০১৮ সালের পিয়ংচ্যাং এবং ২০১৪ সালের সোচি শীত্কালীন অলিম্পিক গেমসের যথাক্রমে ৫ ভাগের এক ভাগ এবং ১৫ ভাগের এক ভাগ।

 

অলিম্পিকের মিতব্যয়ী আয়োজনের রহস্য কী? প্রথমত, নতুনের বদলে পুরাতন স্টেডিয়ামকে ব্যবহার করা হয়। এবারের ১২টি স্টেডিয়ামের মধ্যে বার্ডস নেস্ট, ওয়াটার কিউব, উকেসং-সহ ৫টি হল ২০০৮ সালের বেইজিং গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে ব্যবহৃত পুরাতন স্টেডিয়াম। কিছুটা সংস্কার করে এ স্টেডিয়ামগুলো শীত্কালীন অলিম্পিক গেমসে ব্যবহার করা হয়। তা স্টেডিয়াম নির্মাণের বাজেট অর্ধেক কমিয়ে দেয়।

 

দ্বিতীয়ত, ক্রয়ের বদলে ভাড়া করা। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিক গেমসের সময়ে ব্যবহৃত অধিকাংশ পণ্য এবার বিভিন্ন হার্ডওয়্যার কোম্পানির কাছ থেকে ভাড়া করে বেইজিং। ফলে খরচ কম হয় এবং গেমসের পরও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেচে যায়। এভাবে ৩০ শতাংশ সরাঞ্জামের খরচ সাশ্রয় হয়।

 

 

তৃতীয়ত, পণ্যের বিনিময়ে টাকা। বেইজিং, চাং চিয়া খৌ ও ইয়ান ছিং তিনটি ভ্যেনুর অলিম্পিক গ্রাম পুর্নব্যবহার করা হবে। বেইজিং ও  চাং চিয়া খৌর অলিম্পিক গ্রাম বাণিজ্যিক বাসস্থান হিসেবে বিক্রি করা হবে। ইয়াং ছিং অলিম্পিক গ্রাম হোটেলে পরিণত করা হবে।  ন্যাশনাল আলপাইন স্কি সেন্টার, ও ন্যাশনাল জাম্পিং সেন্টার পরে দর্শনীয় স্থান হিসেবে পর্যটকের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।

 

উল্লেখ্য, বেইজিং শীত্কালীন অলিম্পিক গেমস নিম্ন-কার্বন ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বারোপ করেছে। গেমস চলাকালে পরিবহন সেবায় পরিষ্কার জ্বালানির ব্যবহার ১০০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়। তা শীত্কালীন অলিম্পিক গেমসের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। বেইজিং শীত্কালীন অলিম্পকি গেমসের সব স্টেডিয়ামে যে বিদ্যুত্ ব্যবহার করা হয়েছে, তার সবই চাং চিয়া খৌর সৌর এবং বায়ু বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে আসে।

 

বেইজিং শীত্কালীন অলিম্পিক ও প্রতিবন্ধী অলিম্পিক গেমসে গাড়ির কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ১১ হাজার টন কম হবে। বেইজিং শীত্কালীন অলিম্পিক গেমসের বেশির ভাগ বাজেট পরিষ্কার জ্বালানিতে ব্যবহার করা হয়। দ্রুত কার্বন নিরপেক্ষতা বাস্তবায়নে শীত্কালীন অলিম্পিক গেমসে বড় পরিমাণের পরিষ্কার জ্বালানি ব্যবহার করা হয়। যেমন: সৌর এবং জলবিদ্যুত। এবারের শীতকালীন অলিম্পিকের প্রধান মশালের শক্তিও জলবিদ্যুত থেকে নেয়া।

 

বেইজিং শীত্কালীন অলিম্পিক গেমস আয়োজক কমিটির মুখপাত্র সম্প্রতি জানিয়েছেন, বেইজিং শীত্কালীন অলিম্পিক গেমসের আয় ও ব্যয়ে ভারসাম্য রয়েছে। বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ বেইজিং শীত্কালীন অলিম্পকি গেমসের আয় সম্পূর্ণরূপে খরচ কাভার করতে পেরেছে। ব্রোকারেজ গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ বেইজিং শীত্কালীন অলিম্পকি গেমসের সম্প্রচার আয় ১১০ কোটি ডলার হবে। কিন্তু পিয়ংচ্যাং শীত্কালীন অলিম্পকি গেমসের সম্প্রচার আয় ছিল ৯০ কোটি ডলার। ব্র্যান্ড লাইসেন্সিং আয় ২৫০ কোটি ডলার, বিজ্ঞাপন স্পনসরশিপ এবং ইভেন্ট সম্প্রচার মিলে সরাসরি আয় হবে ২৮০ কোটি ডলার । এর মধ্যে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি নেবে তিন ভাগের এক ভাগ এবং বাকি ১৮৫ কোটি ডলার বেইজিংয়ের।

 

বেইজিং শীত্কালীন অলিম্পিক গেমসের মাসকট বিং তুন তুন বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মানুষ দিন রাত লাইনে দাঁড়িয়ে বিং তুন তুন কিনেছে। বিং তুন তুনের জনপ্রিয়তা শেয়ার বাজারের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকের জন্য বিশেষ লাইসেন্স আছে এমন তিনটি কোম্পানির শেয়ার টানা তিনদিন ধরে বেড়েছে। বেইজিং শীত্কালীন অলিম্পিক গেমসের পর চীনের অর্থনীতিরও উন্নয়ন হবে বলে বিশ্বাস করা যায়। (শিশির/এনাম/রুবি)