ফেব্রুয়ারি ২২: ‘এটি অতুলনীয় শীতকালীন অলিম্পিক গেমস’! ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির চেয়ারম্যান থমাস বাখ বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠানের ভাষণে উচ্ছ্বসিত এই মন্তব্য করেছেন। যা ১৪ বছর আগে বেইজিং গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস নিয়ে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির মূল্যায়নের মতো। ২০০৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত, গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক থেকে শীতকালীন অলিম্পিক পর্যন্ত, চীন বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে নিজেকে অলিম্পিক আদর্শের দৃঢ় অনুসারী ও অনুশীলনকারী হিসেবে প্রমাণ করেছে।
‘দুটি অলিম্পিকের শহর’ বেইজিং কেন আরেকবার অতুলনীয় হয়েছে? এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরছি।
এটি বিশ্বকে দেওয়া চীনের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন। চীন সরল, নিরাপদ ও দুর্দান্ত ক্রীড়ার মহাসম্মেলন উপহার দিয়েছে এবং ‘আরও দ্রুত, উচ্চ, শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ’ অলিম্পিকের চেতনা প্রমাণ করেছে।
১৭ দিনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রকোপের পর সময়মতো অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাপী এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ৯১টি প্রতিনিধিদলের ২৮০০ জনেরও বেশি খেলোয়াড় নিজেদের সীমা ছাড়িয়ে অলিম্পিকের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। আয়োজক দেশ হিসেবে চীন ৯টি স্বর্ণপদক, ৪টি রৌপ্যপদক ও ২টি ব্রোঞ্জপদক জয় করেছে এবং নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
১৭ দিনে অলিম্পিক নীতিবাক্য ‘আরও ঐক্য’ যুক্ত করার পর অনুষ্ঠিত প্রথম শীতকালীন অলিম্পিক গেমসে মনোমুগ্ধকর নানা ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। ‘ওয়াশিংটন পোস্টের’ কলামিস্ট ব্রুয়ার ২০ ফেব্রুয়ারি কোয়ারেন্টিন হোটেলে যে উষ্ণতা পান- তা শেয়ার করেছেন। প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, স্বেচ্ছাসেবকের দেওয়া চকলেট তাকে অনেক মুগ্ধ করেছে। ক্লোজড লুপে সবার আন্তরিকতা ছিল সত্যিকারের এবং তা উষ্ণতা ও মুগ্ধতায় ভরপুর। এটি শুধু বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিককে আরও উষ্ণই করে তোলেনি; বরং অলিম্পিকের চেতনাকে আরও এগিয়ে নিয়েছে।
‘তুষার ও বরফের ক্রীড়ায় অংশ নিয়ে আরও বেশি লোককে উত্সাহ দেওয়া’ হলো অলিম্পিক ক্রীড়ার প্রধান থিম। স্টেডিয়ামের বাইরে ৩০ কোটি মানুষের তুষার ও বরফের ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ করার লক্ষ্য বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে চীন শীতকালীন ক্রীড়ার দেশে পরিণত হয়েছে এবং সারা বিশ্বে শীতকালীন ক্রীড়ার এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫ সালে চীনে শীতকালীন ক্রীড়ার অর্থমূল্য ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে; যা বিশ্বজুড়ে শীতকালীন ক্রীড়ায় একটি বিশাল উত্সাহ নিয়ে আসবে।
শুধু তাই নয়, বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক পূর্ব ও পশ্চিম সভ্যতার একীকরণকেও উন্নত করেছে। এতে বোঝাপড়া বেড়েছে এবং পার্থক্য কমানোর পথ তৈরি হয়েছে।
মহামারী প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমস খুব ভালো সাফল্য অর্জন করেছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসে নিউক্লিক অ্যাসিড পরীক্ষার ইতিবাচক হার ছিল মাত্র ০.০১%। যা চীন সরকারের সর্বদা জনগণের জীবন ও স্বাস্থ্যকে প্রথম স্থানে রাখার চেতনা ও কার্যকারিতার বহিঃপ্রকাশ।
তা ছাড়া, পরিবেশবান্ধব চিন্তাধারায় পরিপূর্ণ ‘বিগ এয়ার শৌকাং এবং ন্যাশনাল স্পিড স্কেটিং হল’সহ বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমস আয়োজনে বিশ্বের প্রাকৃতিক সভ্যতার নির্মাণ ও টেকসই উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে চীনের প্রচেষ্টা তুলে ধরে।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বর্তমানে শতাব্দীর পরিবর্তন, মহামারী সংক্রমণ এবং মানবজাতির বহু চ্যালেঞ্জের সামনে বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের সফল আয়োজন- বিশ্বকে ঐক্য ও শান্তির শক্তি যুগিয়েছে।
বাখ বলেন, অলিম্পিক গেমসের ঐক্যের শক্তি আমাদের বিচ্ছিন্নতার শক্তির চেয়েও বেশি শক্তিশালী। যা শান্তির সুযোগ তৈরি করেছে। ইউক্রেনের অলিম্পিক কমিটির সভাপতি বুবকা বলেন, ‘বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক একটি দৃঢ় সংকেত পাঠিয়েছে। তা হলো, মানবজাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহামারী পরাস্ত করতে পারে।’
১৭ দিনের বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকের সময় খুব অল্প, কিন্তু ‘ছোট স্নোফ্লেক্স’ দিয়ে ‘বড় স্নোফ্লেক্সে’ রূপান্তর করার সুন্দর দৃশ্য মানুষের স্মৃতিতে চিরকাল অটুট থাকবে। এসব সুন্দর ছবি বিশ্বের শান্তি, ঐক্য ও টেকসই উন্নয়ন এগিয়ে নিতে চীনের প্রচেষ্টা ও দায়িত্বের সাক্ষ্য বহন করে। বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকে বাজানো ‘বসন্তের ধ্বনি’ চীনের ও বিশ্বেরও। এটি অবশ্যই ইতিহাসে লেখা থাকবে!
(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)