বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমস গতকাল (রোববার) শেষ হয়েছে। বিভিন্ন বিস্ময়কর ইভেন্ট বিশ্বের দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণের মাঠ থেকে গেমসের নানা ইভেন্টে অংশগ্রহণ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের ক্রীড়াবিদরা চীনে সার্বিক প্রাণবন্ত শীতকালীন অলিম্পিক গেমস উপভোগ করেছেন। তারা নিজেদের মতো করে চীনের প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতি ও চমকপ্রদ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্ববাসীদের বিস্ময়কর ও রোমান্টিক বরফ ও তুষার সম্মেলন দেখছিল। চীনা স্বেচ্ছাসেবকদের ‘চীনে স্বাগতম’ ধ্বনি দূর থেকে আসা বিদেশি বন্ধুদের উষ্ণতা দিয়েছে।
মার্কিন ক্রীড়াবিদ টেসা মোড বলেছেন, যখন এক স্বেচ্ছাসেবক আমাকে বলেন, “চীনে আসার জন্য স্বাগতম” । সে মুহূর্ত স্মরণ করলে আমার চোখের পানি চলে আসে। তারা সত্যি সত্যি চমত্কার।
প্রতিযোগিতার ভালো পরিবেশ খেলোয়াড়দের মনে আরও আশা জাগিয়েছে। চীনে তারা দেখেছেন- তুষার ঢাকা মহাপ্রাচীরের আঁকাবাঁকা ট্র্যাক। বেশ কয়েকটি অলিম্পিক রেকর্ডের জন্ম হয়েছে আইস রিবন এবং পরিবর্তনশীল আইস কিউবে।
জার্মান সাংবাদিক উতে মাগা বলেন, ২০০৮ সালে আমি জ্বলজ্বলে ওয়াটার কিউব দেখেছিলাম। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন তা সার্লিং প্রতিযোগিতার মাঠে পরিণত হয়েছে। আমি খুবই অবাক হয়েছি।
শৌকাং স্কি বিগ জাম্প তার বিশেষ আকার দিয়ে বিশ্ববাসীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। পরিত্যক্ত কারখানা সংস্কার করে এ প্রতিযোগী মাঠ তৈরি করা হয়েছে। যাতে টেকসই উন্নয়ন ও সাশ্রয়ী অলিম্পিক গেমসের চেতনা প্রতিফলন করে।
প্রতিযোগী মাঠ ও চীনা সংস্কৃতির সংমিশ্রণে ক্রীড়াবিদ অনন্য বিস্ময় উপভোগ করেছেন। মার্কিন ক্রীড়াবিদ আন্না হফম্যান ওয়েবসাইটে স্কি কেন্দ্র ‘স্যু রু ই’র রাতের দৃশ্যের ছবি শেয়ার করেছেন। তিনি ও তার অনুরাগীরা মহাপ্রাচীরের সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন।
তিনি বলেন, সবাই ভালো আছেন? আমি চাং চিয়া খৌতে আছি। আপনাদের চমত্কার একটি দৃশ্য দেখাবো। এটি একটি জাম্প প্ল্যাটর্ফম। আপনি পাহাড়ের লাইটিং দেখতে পাচ্ছেন...। সেটি আসলে মহাপ্রাচীর।
সবার মনে স্মৃতি তৈরি করেছে শুধু মহাপ্রাচীর নয়। সঙ্গে আছে আরও জিনিস। অলিম্পিক গেমসের একই সময় পালিত হয়েছে চীনের চান্দ্রপঞ্জিকার নববর্ষ। অনেক ক্রীড়াবিদে শীতকালীন অলিম্পিক গ্রামে শব্দের ছন্দ ও “ফু” লেখা কাগজ টাঙ্গানো এবং লণ্ঠন তৈরির মজার অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেছেন।
নওয়ের ক্রীড়াবিদ ফিলিপ অ্যান্ডারসন বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের কমিটির দেওয়া শব্দের ছন্দ ও “ফু” লেখার কাগজ এবং লণ্ঠন উপহার পেয়েছেন। তিনি নির্দেশনা অনুযায়ী নিজেই তা তৈরি করা শুরু করেন।
চীনের সংস্কৃতি ও খাবার এমন কি মাসকট বিন তুন তুন-এর প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ করেছেন ক্রীড়াবিদরা।
মার্কিন খেলোয়াড় টেসা মোড বলেন, এখানে খাবার বিনাপয়সায় খাওয়া যায়। খুবই মজার। আমি খেতে পছন্দ করে। আমি ‘কোং পাও চি তিং’র পেঁয়াজ, বাদাম ও মরিচ পছন্দ করি। খুবই সুস্বাদু।
দেশটির আরেকজন খেলোয়াড় জুলিয়া মারিনু বলেন, শীতকালীন অলিম্পিক ভিলেজে আসার পর থেকে আমি প্রায় ২০০টিও বেশি ডাম্পলিং খেয়েছি। অনেক বেশি। পাহাড়ে প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে এসেই আমি ডাম্পলিং খাই।
মাল্টার খেলোয়াড় জেনিস স্পিটারি বলেন, আমার সবচেয়ে প্রিয় খাবার হলো চীনা ডিস। আমি প্রতিদিন ছটি সয়াবিন পিঠা খাই। সদ্য সমাপ্ত শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাসকট বিং তুন তুন। চীনের ঐতিহ্যবাহী স্ন্যাকস ‘বি থাং হু লু’র মধ্য সাজানো এ পান্ডা বিশ্বের কাছে চীনের ভালোবাসা প্রেরণা ছড়িয়ে দিয়েছে। জাপানের টেলিভিশনের সাংবাদিক পাংগাংইথাং একটি অনুষ্ঠানে ঘাড়ে পড়া ‘বিং তুন তুন’র ব্যাজের মধ্য দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। চীনের সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি অনেক নেটিজেনের স্বীকৃতি পেয়েছেন। মোনাকোর রাজকুমারও বিন তুন তুন বেশ পছন্দ করেছেন।
তিনি বলেন, আমি আরেকটি বিং তুন তুন নিতে পারি? আমার যমজ সন্তান আছে। যদি শুধু একটি নিয়ে যাই, তাহলে বিপদ হবে...
শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের ক্রীড়াবিদরা এখানে খেলাধুলা করেন ও তাদের স্বপ্ন পূরণ করেন। বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসে শান্তি, মৈত্রী ও অগ্রগতির নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। সবাই এখান থেকে নতুন যাত্রা শুরু করবেন।
(রুবি/তৌহিদ)