ফেব্রুয়ারি ১৭: সম্প্রতি চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েন থাও ইকুয়েডর উত্পাদন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মত্স্যমন্ত্রীর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছেন। এর মাধ্যমে চীন ও ইকুয়েডরের অবাধ বাণিজ্য চুক্তি-সংক্রান্ত বৈঠক আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন ও ল্যাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে আরও বেশি অবাধ বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে দ্বিপক্ষীয় আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠবে। একই সঙ্গে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের কারণে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সহযোগিতা দ্রুততর হবে।
চীনের ই-কমার্স সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মে ইকুয়েডর শব্দটি সার্চ দিলে দেশটির সাদা চিংড়ি, গোলাপ, কফি ও কোকো পাউডারসহ নানা পণ্য দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সম্প্রতি চীন ও ইকুয়েডর আনুষ্ঠানিকভাবে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি-সংক্রান্ত বৈঠক শুরু করেছে। ইকুয়েডর চীনের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরকারী চতুর্থ ল্যাতিন আমেরিকার দেশ। যার ফলে ইকুয়েডরের পণ্য আরও কম খরচে চীনের বাজারে প্রবেশ করতে পারবে।
‘দাম আরও কম এবং বৈচিত্র্য আরও বেশি। তাড়াতাড়ি বাজারে আসবে বলে আশা করি”
“তাদের উপকূলীয় অঞ্চলে বিশ্বের বিখ্যাত মত্স খামার রয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে স্থানীয় বিখ্যাত চিংড়ি খেতে পারবো। সেটা খুব আকর্ষণীয়।
চীন-ইকুয়েডর কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪২ বছরে দ্বিপক্ষীয় আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্কের সুষ্ঠু উন্নতি হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও ইকুয়েডরের আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা ফলপ্রসূ হয়েছে। বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে চীন-ইকুয়েডর বাণিজ্যের পরিমাণ ৪৪.৬ শতাংশ বেড়ে ১০৯৪ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। চীন টানা দু’বছর ধরে ইকুয়েডরের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ।
গত সেপ্টেম্বরে চীন ও ইকুয়েডরের অবাধ-বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে সম্ভাবনাময় গবেষণা শেষ হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে গবেষণার কাজ শেষ হওয়ায় দু’দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার জরুরি ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কাও ফেং জানান,
‘ইকুয়েডর ল্যাতিন আমেরিকায় চীনের বিনিয়োগ ও প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। দু’দেশের সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে বিদ্যুত্ উত্পাদন, জ্বালানি ও পরিবহন-সহ নানা বিষয়। চীন ইকুয়েডরের সঙ্গে দু’দেশের শীর্ষনেতার পৌঁছানো মতৈক্য অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বৈঠক বেগবান করবে।
গত ২০০৫ সালে চিলির সঙ্গে অবাধ বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে চীন। তারপর ২০১৭ সালে ওই চুক্তি নবায়ন করা হয়। এটি চীন ও ল্যাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে স্বাক্ষরিত প্রথম অবাধ বাণিজ্যিক চুক্তি। ২০০৯ সালে চীন পেরুর সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চীন পেরুর তামা খনি, মাছ গুড়াসহ নানা পণ্যের বৃহত্তম ক্রেতায় পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া চীন কোস্টারিকার সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তিটি ২০১১ সালের আগস্ট মাসে কার্যকর হয়। গত দশ বছরে চীনের বস্ত্র, বস্ত্র প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য, হালকা শিল্প, সরঞ্জাম ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং কোস্টারিকার কফি, গরুর মাংস ও কমলার জুস-সহ নানা পণ্য থেকে কল্যাণ অর্জন করেছে দু’দেশের ভোক্তারা। দু’দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
চীনের শুল্ক সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, মহামারি ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের দুর্বলতার প্রেক্ষাপটে ২০২১ সালে চীন-ল্যাতিন আমেরিকা বাণিজ্যের পরিমাণ ৪৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে ছাড়িয়েছে, যা ইতিহাসের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ২০২২ সালের পর চীন ল্যাতিন আমেরিকার অনেকগুলো দেশের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করেছে। নিকারাগুয়া ও আর্জেন্টিনা ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সংশ্লিষ্ট সহযোগিতার আওতাভুক্ত হয়েছে চীনের সমাজ ও প্রযুক্তি একাডেমির ল্যাতিন আমেরিকার গবেষক স্যু শি ছেং বলেন, এসব দেশের যোগদান চীন-ল্যাতিন আমেরিকা নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণে সহায়ক হবে।
(রুবি/তৌহিদ/আকাশ)