তাদের সরকারকে কেন বিশ্বাস করে চীনারা?
2022-02-16 09:49:14

সম্প্রতি একটি সরকারের ট্রাস্ট র‍্যাঙ্কিং বিদেশী তথ্যমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম পাবলিক রিলেশনস কনসালটিং ফার্ম এডম্যান প্রকাশ করেছে ২০২২ এডম্যান ট্রাস্ট ব্যারোমিটার নামের প্রতিবেদন। তাতে বলা হয়, ২০২১ সালে চীন সরকারের ওপর চীনা জনগণের আস্থার হার ছিল ৯১ শতাংশ, তা ২০২০ সালের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি এবং আগের মতোই দেশটি বিশ্বের প্রথম স্থানে দাঁড়িয়ে আছে। এই ৯১ শতাংশ গেল ১০ বছরে সর্বোচ্চ। জাতীয় ব্যাপক আস্থা সূচকের দিক থেকে চীন ৮৩ শতাংশ অর্জন করেছে, তাও বিশ্বে সর্বোচ্চ। কেন চীন সরকার মানুষের ব্যাপক বিশ্বাস ও সমর্থন পায়? এবং সারা বিশ্ব চীনের দেশপ্রশাসন অভিজ্ঞতা থেকে কী কী শিখতে পারে? এ নিয়ে অনেক বিদেশী তথ্যমাধ্যম নিজেদের মন্তব্য প্রকাশ করেছে।

২০০০ সাল থেকে এডম্যান প্রতি বছর বার্ষিক ট্রাস্ট ব্যারোমিটার প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। ২০২০ সালের ১-২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় ধরে পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে ২০২১ সালের প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। অনলাইন প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে বিশ্বের ২৮টি দেশের ৩৬ হাজারের বেশি লোক জরিপে অংশগ্রহণ করেন। তারা নিজ নিজ দেশের সরকার, কোম্পানি, তথমাধ্যম ও বেসরকারি সংস্থা নিয়ে তাদের আস্থার মূল্যায়ন করেন। এডম্যানের নিয়ম অনুযায়ী, ১-৪৯ পয়েন্ট হলো অবিশ্বাস, ৫০-৫৯ হলো নিরপেক্ষতা, আর ৬০-১০০ পয়েন্ট হলো বিশ্বাস। তার মধ্যে ৯১ পয়েন্ট পায় চীন সরকার, এটি গেল ১০ বছরে সর্বোচ্চ পয়েন্ট।

প্রতিটি দেশের উত্তরদাতারা ১৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী। তাদের সাধারণ এবং অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ এই দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। এখানে অন্তর্দৃষ্টি মানে ২৫-৬৪ বছর বয়সী। তাদের উচ্চতর ডিগ্রী আছে, পরিবারের আয় নিজ দেশের শীর্ষ ২৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে এবং তারা নিয়মিত সংবাদ পড়েন বা দেখেন। সেসঙ্গে তারা পাবলিক নীতির ওপর বিশেষ দৃষ্টি রাখেন।

 হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল টানা ১০ বছর ধরে চীনের জনমত জরিপ করেছে। তাদের ফলাফল অনুযায়ী, সরকারের প্রতি চীনা জনগণের সন্তুষ্টির হার সবসময় ৯০ শতাংশের উপরে থেকেছে, যা এডম্যান ট্রাস্ট ব্যারোমিটারের ফলাফলের অনুরূপ। ২০২০ সালের জুলাই মাসে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল আরেকটি জনমত জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, ৯৩ শতাংশ চীনা মানুষ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) নেতৃত্বে পরিচালিত চীন সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সিপিসি আগের মতোই শক্তিশালী এবং তাদের নীতিমালার প্রতি জনগণের ব্যাপক সমর্থন সিপিসর দৃঢ়তাকে আরও জোরদার করেছে।

তা ছাড়া, ২০২১ সালের মে মাসে ওয়াশিংটন পোস্ট প্রকাশিত এক জনমত জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, নিজ দেশের সরকারের উপর ৯৮ শতাংশ চীনার আস্থার কথা জানা যায়।  চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র চাও লি চিয়ান বলেন, “সরকারের ওপর চীনাদের বিশ্বাস সিপিসি ও চীন সরকারের দায়িত্ববোধের প্রতিফলন। আমরা মানুষকে প্রথম স্থানে রাখি এবং সব কিছুই মানুষের জন্য করি এবং মানুষের উপর নির্ভর করি”।  

রয়টার্স সূত্রে জানা যায়, চীনের জনগণের আস্থার বৃদ্ধি শুধু অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, চীন সরকারের সুনীতিও এর সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে মহামারির মুখে চীন সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীন মহামারি নিয়ন্ত্রণে ভাল করেছে। 

এডম্যানের সিইও বলেন, চীন হচ্ছে ২০২০ সালে একমাত্র দেশ, যেটি অর্থনীতির উন্নয়ন বাস্তবায়ন করেছে এবং ২০২১ সালের অধিকাংশ সময়ে এ প্রবণতা বজায় রেখেছে। যদিও মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে চীন কঠোর নীতি চালু করেছে, তবে তারা সফলভাবে মহামারি নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং জনগণের আস্থা তৈরি করেছে। তার মতে, দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা, কার্যকর টিকা গবেষণা ও ব্যাপক টিকাদান কার্যক্রম এবং নির্ভুল মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ জনগণের আস্থা জোরদারে সহায়ক হয়েছে। তা ছাড়া, চীন বিশ্বের অন্য দেশকেও সাহায্য করে আসছে। বিশ্বের ৭০০ কোটি করোনা টিকার মধ্যে অর্ধেক চীনের এবং  তা দেখে সরকারের উপর চীনা মানুষের আস্থা বেড়েছে।

মহামারি প্রতিরোধ ছাড়া, অন্য ক্ষেত্রেও চীন সরকার লক্ষ্যণীয় সফলতা অর্জন করেছে। যেমন: দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ। বেইজিংয়ের বায়ুর গুণগতমান ভাল করা একটি উদাহরণ। চীনের দুর্নীতি দমন ব্যক্তি ও কোম্পানির, বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি কোম্পানির, উন্নয়নে ভাল ও ন্যায্য পরিবেশ তৈরি করেছে। 

অর্থনীতি ও জীবিকার উন্নয়ন হল চীন সরকারের জনগণের সমর্থন অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ। অস্ট্রিয়ান ‘স্ট্যান্ডার্ড’ পত্রিকার এক প্রবন্ধে বলা হয়, আজ শাংহাই, বেইজিং ও শেনচেনে হাঁটলে আবিষ্কার করা যায়, সেখানে নতুন গাড়ির সংখ্যা ভিয়েনার তুলনায় বেশি। সেখানে খুঁজে পাবে না কোনো বস্তি বা টিনের কুঁড়েঘর। রেস্তোরায় বসে আছে আশাবাদী নতুন প্রজন্মের যুব সমাজ। তাদের সবার হাতে স্মার্টফোন। করোনা মহামারি না হলে, তারা সম্ভবত ইউরোপে ছুটি কাটাতো।  

জিম্বাবুয়ের একটি পত্রিকা বলেছে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সবচেয়ে বেশি অনুরাগী আছে এবং মানুষের ব্যাপক সমর্থন অর্জন করেছে। কারণ সিপিসি আইন প্রশাসনে অবিচল থাকে। চীন বিশাল ও জনবহুল একটি দেশ, যদি সবাই ন্যায্যতা, ন্যায়বিচার এবং সমতা বোধ করতে না পারে, তাহলে দেশের প্রশাসন সফল হবে না। 

ব্রাজিলের ‘গ্লোবাল’ পত্রিকা বলেছে, আজকাল চীন একটি স্বাধীন, সমৃদ্ধ ও শাক্তিশালী দেশ।  সিপিসির নেতৃত্ব এতে বড় আবদান রাখছে। দীর্ঘসময় ধরে সিপিসি স্ব-সংস্কার করে আসছে এবং বিদেশ থেকে প্রযুক্তি শিখে এবং চাহিদা অনুযায়ী সমন্বয় করে শক্তিশালী একটি সরকার গড়ে তুলেছে। মোট ৭০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করেছে এবং দেশের অবস্থা অনুযায়ী, বাজার অর্থনীতি গড়ে তুলেছে। সিপিসি চীনের আধুনিকায়ন বাস্তবায়ন করেছে এবং চীনকে বিশ্বব্যাপী একটি প্রভাবশালী অর্থনৈতিক বড় দেশে পরিণত করেছে।  

নতুন যুগে সিপিসির দেশপ্রশাসন অভিজ্ঞতা ও অনুশীলন আন্তর্জাতিক সমাজের ব্যাপক স্বীকৃতি পেয়েছে। আরও বেশি বিদেশী তথ্যমাধ্যম ও ব্যক্তি  মনে করে, চীনের কাছ থেকে তাদের নিজেদের দেশের উন্নয়ন ও বিশ্বের অগ্রগতির জন্য অনেক কিছুই শিখা যেতে পারে। (শিশির/এনাম/রুবি)