চীনের গ্রামীন পুনরুত্থানের প্রতীক মা আন শান
2022-02-14 14:18:40

ফেব্রুয়ারি ১৪: চীনের ইনার মঙ্গোলিয়ার ইয়ান শান পবর্তাঞ্চলের সুদূর এক উপত্যকায় মা আন শান নামের একটি গ্রাম রয়েছে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সেই গ্রাম পরিদর্শন করেন। সে সময় প্রেসিডেন্ট সি বলেন, শিল্পায়ন উন্নয়নের ভিত্তি। শিল্প সমৃদ্ধ হলে গ্রামবাসীদের আয়ের স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি হবে। বর্তমানে সেখানকার শিল্পের উন্নয়ন কেমন হয়েছে? গ্রামবাসীদের জীবনে কী ঘটেছে? আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমরা এই দুই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবো।

 

 তুষারে ঢাকা মা আন শান দেখতে চমত্কার। চীনের বসন্ত উত্সবের আমেজ এখনো বিরাজ করছে সেখানে। ২০১৭ সালে এ গ্রাম দারিদ্র্যমুক্ত হয়। তবে গ্রামের পুনরুত্থান কীভাবে করা যায়? এ নিয়ে চিন্তা করছে গ্রামের প্রশাসন। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ইনার মঙ্গোলিয়া পরিদর্শনকালে মা আন শান গ্রামের চাং কুও লি’র পরিবারে উত্পাদন ও জীবনের খোঁজখবর নিয়েছেন।

 

চাং কুও লি বলেন, “প্রেসিডেন্ট সি আমার বাড়ীতে এসে রান্না ঘরের ফ্রিজ, ও পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা দেখেছেন। তিনি আমাদের খোঁজখবর নিয়েছেন। গ্রামবাসীদের জীবনের দিকে তাঁর দৃষ্টি রয়েছে”।

 

গ্রাম পরির্দশনের সময় সি চিন পিং সবাইকে বলেন, জমি ও গ্রামের বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী চাষাবাদ করা, পশুপাখি লালন করা এবং বনায়ন করা প্রয়োজন। কৃষকদের আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে নানা শিল্পের উন্নয়ন করতে হবে।

 

মান আন শান গ্রামটি প্রধানত আঙ্গুর চাষ ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন করেছে। তবে সে সময় দুটি শিল্প তেমন উন্নত ছিল না। আঙ্গুর চাষের জমির আয়তন কম ছিল এবং কেবল এক ধরণের আঙ্গুর চাষ হতো সেখানে। পর্যটনের ক্ষেত্রে নানা ব্যবস্থাও পুরোনো ছিল, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করতো না। এ প্রেক্ষাপটে গ্রামবাসীরা সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে  বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ করেন। আঙ্গুর শিল্পের উন্নয়ন করতে তারা আঙ্গুরের ধরণের উন্নয়ন করেছেন এবং সহযোগিতা সংস্থা গঠন করে শীর্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রক্রিয়াজাত সহযোগিতা জোরদার করেছেন। ফলে আঙ্গুর থেকে রেড ওয়াইন প্রক্রিয়াজাত শিল্পের চেইন গঠন সম্ভব হয়েছে। পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রে তারা পর্যটনের অবকাঠামোর উন্নয়ন করেছেন। প্রাকৃতিক পর্যটন ও সাংস্কৃতিক পর্যটনসহ নানা রকম পর্যটন পণ্য প্রচার করা হয়। ফলে গত বছর গ্রামবাসীদের মাথাপিছু আয় ১৫,৬৪০ ইউয়ান ছাড়িয়েছে, যা তিন বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।

মান আন শান গ্রামের অধিবাসী উ কুও চুন বলেন, “গত দু’বছরে পর্যটকদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আমার অঙ্গনে ৩টি ডাইনিংরুম থেকে বেড়ে বর্তমানে ৬টিতে দাঁড়িয়েছে। তার পরেও পর্যটক বেশি আসলে আপ্যায়ণ করতে পারি না”।

 

তিনি মজা করে বলেন, “এটাকে সুখের কষ্ট বলা চলে। গত বছর আমি ৮০ হাজার ইউয়ান আয় করেছি। গাড়িও কিনেছি এবং বাড়ি নতুন করে সংস্কার করেছি”।

 

শিল্প উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামে পানির দূষণ মোকাবিলা শুরু হয়েছে। টয়লেট সংস্কারের পাশাপাশি ১০০টিরও বেশি বর্জ্য বিতরণ বক্স স্থাপন করা হয়েছে। গ্রামবাসীদের বর্জ্য বিতরণের সুঅভ্যাস গড়ে তুলতে উত্সাহ দেয় গ্রাম প্রশাসন। বর্তমানে মা আন শান গ্রামটি খুব পরিষ্কার-পরিছন্ন দেখায়।

 

গ্রামের আরেক অধিবাসী জেং লিন বলেন, “আগে বাড়িঘরের সামনে পিছনে অনেক প্ল্যাস্টিক ব্যাগ ও বোতল পড়ে থাকতো। বর্তমানে সব জায়গায় ফুল ও ঘাষ চাষ হয়েছে। পরিবেশ অনেক সুন্দর হয়ে উঠেছে। আমরা খুব গর্বিত”।

 

আরো সুন্দর, ধনী এবং সমৃদ্ধ হয়েছে মা আন শান গ্রাম। গ্রামবাসীদের কাজ করার শক্তি আরও বেড়েছে। চলতি বছরে মা আন শান গ্রামে আগেকার দুটি আঙ্গুর থেকে মদ তৈরির কারখানার পাশে একটি জুস তৈরির কারখানা স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে পর্যটনের প্রতীকময় অঞ্চল হিসেবে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের সঙ্গে রেস্তোরা, থাকার এবং অবসরের পর্যটন এবং বিপ্লবী শিক্ষাসহ পর্যটন কমপ্লেক্স গঠন করা হবে।  নতুন সূচনাবিন্দুতে মা আন শান গ্রামবাসীরা গ্রাম পুনরুত্থানের নতুন পরিকল্পনা তৈরি করছেন। (রুবি/এনাম/শিশির)