বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গত বছর চীনা অর্থনীতি নতুন সাফল্য অর্জিত হয়। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে চলতি বছরের আর্থিক কর্মসূচিতেও। চীনের অর্থনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত রয়েছে বিশ্বের অসংখ্য দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক কার্যক্রম। এ বছর চীনের সামষ্টিক অর্থনীতির চিত্র কেমন হতে পারে? বিস্তারিত থাকছে এখানে।
চীনের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনে বেকারত্বের হার ধীরে ধীরে কমছে, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রয়েছে, বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং ক্রমাগত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা উন্নত হচ্ছে। এসব কারণে চীনা অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির সুপ্তশক্তি অব্যাহতভাবে জোরালো হচ্ছে। ২০২২ সালে চীনের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
সাম্প্রতিক বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। গত রোববার ছিল চীনের বসন্ত উত্সবের ছুটির শেষ দিন। ছুটির পাঁচ দিনে চীনের ইউনিপে প্ল্যাটফর্মে লেনদেনের পরিমাণ ৪.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে রেস্তোরা, বিনোদন ও কেনাকাটায় সবেচেয়ে বেশি লেনদেন হয়।
তা ছাড়া দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য রক্ষাও চীনের জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে জড়িত।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চীনের ৩১টি প্রদেশ ও সিনচিয়াংয়ে মোট ৩০০ কোটি ১৬ লাখ ২৪ হাজার ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। মহামারী শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মহামারি প্রতিরোধে বিজ্ঞানসম্মত ও কিছুটা কঠোর নীতি অবলম্বন করার সুবিধা চীন পেয়েছে। যখন সারা বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিল- তখনও চীনের অর্থনীতি গতিশীলতা দেখিয়েছে। যখন বিভিন্ন দেশের মধ্যে পরস্পর-নির্ভর অর্থনীতি প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছিল- তখন চীনের দেশীয় অর্থনৈতিক চক্র মোটামুটি সচল ছিল এবং আর্থিক বাজার প্রাণচঞ্চল ছিল। এতে দারুণ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে রাষ্ট্রীয় নীতি, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ অবকাঠামো, তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার। বিশেষ করে- আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সূতিকাগার বা গ্রামীণ অর্থনীতি বা উত্পাদন কাজের সঙ্গে শহুরে অর্থনীতির প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপন করেছে ইন্টারনেট প্রযুক্তি ও লেনদেন-অবকাঠামো। শহর ও গ্রামের এই পারস্পরিক নির্ভরশীল ব্যবস্থা দেশের অর্থনীতিকে সক্রিয় রেখেছে চমৎকারভাবে।
আর তারই নিদর্শন দেখা যায় চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপাত্তে। মন্ত্রণালয় জানায় এবারের চীনা নববর্ষের ছুটিতে গম, ভোজ্য তেল, মাংস, ডিম, এবং শাকসবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ যথেষ্ট এবং এসবের দামও স্থিতিশীল ছিল। এসবের মধ্যে সবুজ অর্গানিক খাদ্যের বিক্রির পরিমাণ অনেক বেড়েছে। স্মার্ট যন্ত্রপাতি, নতুন মডেলের ইলেক্ট্রনিক পণ্য এবং ফুলের বিক্রিও অনেক বেড়েছে। কিছু কিছু ই-বাণিজ্য প্ল্যাটফর্মে প্রজেক্টর ও ঘর পরিষ্কারের রোবটের বিক্রির পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের উপাত্তে আরো দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলের টাটকা ফলের বিক্রির পরিমাণ ছিল প্রায় দুই গুণেরও বেশি।
পাশাপাশি গত সোমবার চীনের বৈদেশিক মুদ্রা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের জানুয়ারির শেষ নাগাদ পর্যন্ত চীনের বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের পরিমাণ ৩.২২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮.৫ বিলিয়ন ডলার কম। হ্রাসের হার ছিল ০.৮৮ শতাংশ। প্রশাসনের উপমহাপরিচালক ও মুখপাত্র ওয়াং ছুন ইং বলেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুদ্রা বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল আছে। দেশি-বিদেশি চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্য বজায় রয়েছে।
সুস্পষ্টভাবে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যও ক্রমান্বয়ে চাঙ্গা হচ্ছে- যা চীনের অর্থনীতি নির্ভর বিভিন্ন দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক উন্নয়নে দারুণ সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চ মানের প্রযুক্তি শিল্পে বিনিয়োগ সুষ্ঠুভাবে উন্নীত হচ্ছে। ৫জি বেস স্টেশন নির্মাণ, ইউএইচডি প্রযুক্তির ব্যবহার, শহরের মধ্যে রেলপথ ও সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা, সবুজ জ্বালানি সম্পদের ব্যবহার, বিগডেটা ব্যবস্থাপনা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও শিল্পায়ন-সহ নানা অবকাঠামো নির্মাণকাজ জোরদার হচ্ছে। এসবই দেশীয় অর্থনীতির উন্নয়নের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে জড়িত।
মোহাম্মদ তৌহিদ, বার্তা সম্পাদক; সিএমজি বাংলা বিভাগ।