‘তোমার ব্যাকপ্যাক’
2022-02-11 18:54:18

সঙ্গীত কোনো দেশের সীমানা মানে না। আপনি কি এখন গাড়ি চালাচ্ছেন, নাকি বাসার কোনো কাজ করছেন? আপনি এখন একা, নাকি সাথে সঙ্গী আছে? আপনার মন আজকে বেইজিংয়ের শরত্কালের নীল আকাশের মতো স্বচ্ছ, নাকি ঢাকার কালবৈশাখী সময়ের মতো মেঘলা? যে যেখানে যেভাবেই থাকুন না কেন, আসুন সঙ্গীত উপভোগ করি। সঙ্গীতের জগতে ডুব দেওয়ার আনন্দই আলাদা। কী বলেন?

বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে গায়ক লি রো হাও এবং তার গান আপনাদের শোনাবো। লি রোং হাও ১৯৮৫ সালে চীনের আনহুই প্রদেশে জন্মগ্রহন করেন। তিনি গায়ক, সঙ্গীত-প্রযোজক, গিটার শিল্পী এবং অভিনেতা। ৯ বছর বয়স থেকে তিনি ক্যাসেট শুনে শুনে নিজেই গিটার শিখেছেন। সঙ্গীতের প্রতি তীব্র দুর্বলতার কারণে তিনি ১৫ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেন। পরে তিনি ডাবল বেইস শিখতে শুরু করেন। অন্যদের গিটার বাজানোও শিখাতে শুরু করেন। ২০১৩ সালে তার প্রথম অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এখন যে গানটি আপনারা শুনছেন, সেটা হল গায়ক লি রোং হাওয়ের গাওয়া গান ‘নি ত্য পেই পাও’, অর্থাত তোমার ব্যাকপ্যাক। গানে বলা হয়েছে: ১৯৯৫ সালে বিমানবন্দরে তুমি তোমার ব্যাকপ্যাক আমাকে দিয়েছিলে। আমি আর ফেরত দিইনি। সেই ব্যাকপ্যাকের মধ্যে অনেক স্মৃতির কথা রয়েছে। সেই ব্যাকপ্যাক এখনো নষ্ট হয়নি, সে আমার শরীরের একটি অংশ হয়েছে। বহু টাকা দিয়েও তা কেউ নিতে পারে না। সে যেন আংটির মত। সাড়ে ছয় বছরে প্রতিদিন সে আমার সঙ্গে অফিসে যায়। দুঃখের ব্যাপার হলো, এখন তোমার সঙ্গে আর তার কোন সম্পর্ক নেই।

এখন আরেকটি গান শুনুন। গানের নাম ‘ছু মাই’ বা প্রতারণা। এত বছর প্রেম দেওয়ার পর ভেবেছি প্রেম পাবো। তোমার বিছানায় অন্যের চুল প্রমাণ করে যে, দীর্ঘদিনের প্রেম মুহূর্তের আবেগের সামনে পরাজিত হয়ে যায়। তোমার আবেগ আমার প্রেমকে প্রতারণা করেছে। প্রেম কি অ্যালার্ম ঘড়ির মত, চাপ দিলেই থেমে যাবে!?

এখন শুনুন গান ‘শিয়াও হুয়াং’ অর্থাত ছোট কুকুর হুয়াং। গানে বলা হয়েছে: নীল আকাশের নিচে সকালে অলস আলোয় ছোট কুকুর হুয়াং ঘুমিয়ে আছে। ছোট কুকুর যে রাস্তার কোণে হারিয়েছে, সে বার বার সেই কোণের দিকে ডাকায়। ছোট কুকুর হাঁটতে হাঁটতে খুঁজতে থাকে, আগের উষ্ণ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আশায়। কতদিন পর একটি গরম হাত তার মাথায় আদর করবে?

এখন শুনুন আরেকটি গান ‘শিয়াও ওয়াং শু’। গানে বলা হয়েছে: মোমবাতি ছাড়া কোনোকিছু উদযাপন করা হয় না; উত্তর না-পেলে প্রশ্ন করি না; উপাসনার লোক না-থাকলে নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। মনে হয় অভিযোগ করতে ভুলে গেছি। এরপর থেকে একই ভুল করবো না। এমন অনুভূতি একটি প্রেমের চিঠিতে লিখে নিজেকে দিতে পারি। নিজে নিজেই মুগ্ধ হই, কান্না শুরু করি। এটাও এক ধরনের সুখ। এ উপহার নিজের জন্য শুভেচ্ছা।

এখন শুনুন লি রো হাও-এর আরেকটি গান ‘লাও চিয়ে’ অর্থাত্ পুরনো রাস্তা। গানে বলা হয়েছে: একটি রংচটা ছবি দেখে পুরনো স্মৃতি আবার মনে জাগে। রাস্তার শেষ দিকে দাদা গরম নুডলস বিক্রি করেন। সেই গন্ধ পুরো উঠানে পাওয়া যায়। একটি বিড়াল দোলনায় ঘুমিয়ে আছে। আমার সহপাঠীর পাঠানো পোস্টকার্ড এখনো টেবিলের উপর আছে। বসন্তকাল প্রায় শেষ।

এখন শুনুন লি রোং হাও’র আরেকটি গান ‘শিং চৌ ত্য লি লিয়াং’ বা হাঁটার শক্তি।  গানে বলা হয়েছে: আলোর দিকে তাকাই। এ পৃথিবীর প্রথম দিকে জয় ও পরাজয়ের মধ্যে পার্থক্য ছিল না। এ শক্তি কে খুঁজতে পারে? আমি নিজের জায়গায় হাঁটি। মিথ্যা কথা বলি, আবার মাফ চাই। নিজেই পৃথিবীকে দেখতে পারি। পরাজিত হলে কি সব হারিয়ে যায়? যদি শক্তি খুঁজে না পাও, আমার সঙ্গে গাইতে পারো। পাওয়ার টু গো।

প্রিয় শ্রোতা, গান শুনতে শুনতে অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে চলে এলাম। তবে বিদায় নেওয়ার আগে লি রোং হাও’র আরেকটি গান শোনাবো। গানের নাম ‘পিয়ান চৌ পিয়ান ছাং’। গানে বলা হয়েছে: আমি দক্ষিণ দিকে তাকাতে অভ্যস্ত হয়েছি। সে দিকে তোমার অপেক্ষার দৃষ্টি আছে কিনা! মনে হঠাত করে বেদনা শুরু হয়েছে। আসলে জানতে চাই তুমি এখন কার কোলে আছো। যে কথাগুলো আমরা বলেছিলাম, কেউই রক্ষা করতে পারিনি। আমার একটু লজ্জা লাগছে, বিদায় না-দিয়ে পালিয়ে গেলাম বলে। কিন্তু অতীতের কথা ভুলতে পারি না। খালি রাস্তায় মন বিভ্রান্ত। হাঁটতে হাঁটতে প্রেমের গান গাইতে থাকি। মনে আশা থাকলেও কিন্তু শুধু নিরাশার ফল দেখতে পাই। থাক সে কথা। কেউ জটিলতা চায় না। একা থাকা অনেক সহজ।

(স্বর্ণা/আলিম/মুক্তা)